Hot

ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

৬ এপ্রিল পৃথক দুটি অভিযানে ১ লাখ ইয়াবা ও ২ কেজি ১২৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি-২ এর একটি দল রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন মহেশখালিয়াপাড়া ঘাট এবং অন্য দলটি নাজিরপাড়া মির্জারজোড়া নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মাদক উদ্ধার করে। বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, অভিযানে কোনো চোরাকারবারি গ্রেফতার না হলেও তাদের শনাক্ত করার জন্য ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ সময়ই গ্রেফতার হচ্ছেন কেবল বহনকারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবার মামলার এজাহারে দুর্বলতা ও সাক্ষীর অভাবে মামলা থেকে খালাস পেয়ে যাচ্ছেন অল্প সময়ের মধ্যেই। বিপরীতে আড়ালে থেকে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন গডফাদাররা। তাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন অনেকে। আর এ কারণে গডফাদাররা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। মাদকের রাহুগ্রাস থেকে বের হতে পারছে না দেশ। জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির তালিকাভুক্ত অন্তত ১০ জন গডফাদার দীর্ঘদিন ধরে সারা দেশের মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেননি। তাদের বেশির ভাগ টেকনাফ ও কক্সবাজারের বাসিন্দা। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশব্যাপী তিন সহস্রাধিক মাদক ব্যবসায়ী মাঠপর্যায়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কিশোর অপরাধীরাও। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল ডেটাবেজ করতে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। এক ক্লিকেই মাদক ব্যবসায়ীদের সব ধরনের তথ্য উঠে আসবে।

সিআইডির তালিকায় থাকা মাদক গডফাদাররা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফের নুরুল হক ভুট্টো, সিদ্দিক আহমেদ, শফিক আলম ওরফে শফিক, ফজর আলী, নুরুল কবির, চট্টগ্রামের শফি, ঢাকার আদাবরের নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর পূর্ব থানার পারুল, খুলনার শাহজাহান হাওলাদার এবং পাবনার শাহীন আলম। এদের মধ্যে দুজন গ্রেফতারের পর জামিনে রয়েছেন, অন্যরা পলাতক। মাদকের এসব গডফাদার রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। সে কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ বলেন, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করতে ডিএনসি থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি ১৩ জন অফিসার পেয়েছি। শিগগিরই আরও ৩৫০ জন সিপাহি পাচ্ছি। তবে এখন অভিযানের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা সক্ষমতা। নেওয়া হচ্ছে অফিসার এবং অন্য সদস্যদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ। মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হচ্ছে। শিগগিরই ডেটাবেজ তৈরির টেন্ডার হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানে মাঠপর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও বড় কারবারি বা গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেকনাফ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১০১ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। এরপর মনে করা হয়েছিল কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে মাদক চোরাচালান কমবে। তবে বাস্তবে এখন তার উল্টোটা ঘটছে। পরে তাদের অনেকে জামিনে থাকায় এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

পরবর্তীতে জামিনে আসার পর পুনরায় আগের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএনসি। বিজিবির এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২৩ সালে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪টি ইয়াবা বড়ি, প্রায় ১৪৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪৯ বোতল বিদেশি মদ, ৯ হাজার ২৬৩ লিটার বাংলা মদ, ৫৭ হাজার ৮৯৯ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ২২৯ কেজি গাঁজা, প্রায় ৩৩১ কেজি হেরোইন, প্রায় ১৩ কেজি কোকেন, ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯টি নেশাজাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন, ১ লাখ ৫৩ হাজার ২১০টি অ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৬৫ হাজার ৬৬৪টি ইস্কাফ সিরাপ ইত্যাদি। র‌্যাব ২০২৩ সালে সারা দেশে ৪ হাজার ৪৫৩টি অভিযান পরিচালনা করে ৯,৯৩৯ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় নেয়। এসব অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৯৫,২৯,৪১৯ পিস ইয়াবা, ১২৭.২৫০ কেজি হেরোইন, ১,২৩,০৫৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৪,৭০০ বোতল বিদেশি মদ, ৭৮,২৪২.৩৮ লিটার চোলাই মদ, ২৫,৮৫৩.৩৫ কেজি গাঁজা, ৬,৭৫৬ বোতল বিয়ার, ১১.৪৪৫ কেজি আফিম, ৭০,৫২৭ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন, ২,১৮,৯৮৩ পিস ড্রাগ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য।

সিআইডির তালিকাভুক্ত ৬৩ জনের মধ্যে ১০ জন গডফাদার : সিআইডি সূত্র বলছে, দেশে শীর্ষ পর্যায়ের ১০ গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে থেকে ৬৩ জন মাদক কারবারি সক্রিয় রয়েছেন। তারা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্যসংক্রান্ত ১০টি মামলা করা হয়েছে। তারা মাদকের কারবার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। সিআইডি সূত্র বলছে, মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিন গডফাদারের প্রায় ৮ কোটি ১১ লাখ টাকা মূল্যের জমি ও বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের গচ্ছিত ১ কোটি ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯.১১ একর জমি ও দুটি বাড়ি জব্দ তালিকায় রয়েছে, যার মূল্য ৮.১১ কোটি টাকা।

অন্যদের সম্পত্তি ক্রোক করার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। এ সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ১৯.৫৩৬ একর জমি, ১১টি বাড়ি এবং একটি গাড়ি, যার মূল্য ২৭.৪৬ কোটি টাকা। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মিয়ানমার ও টেকনাফ থেকে গডফাদাররা মাদক এনে সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। মাদকের প্রভাবে যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে। বিশেষ করে মাদকের গডফাদাররা মাদকের অবৈধ টাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মানবাধিকার ও অপরাধ বিশ্লেষক নূর খান লিটন বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সত্যিকার অর্থে সরকারকে চাইতে হবে। নইলে তা কখনো সম্ভব হবে না। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দৃষ্টি পরিবর্তন না করলে কোনো লাভ নেই। চোর পুলিশ খেলা শুধু চলতেই থাকবে। কারণ মাদকের গডফাদাররা নানা কায়দায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d