International

ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞা নিয়ে বিভক্ত ইইউ

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নতুন নীতিমালার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও ধর্ষণের একক কোনো সংজ্ঞার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি ইইউ দেশগুলো। এতে নারীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে জার্মানি ও ফ্রান্স।

ধর্ষণের একক সংজ্ঞা নির্ধারণে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা কয়েক মাস ধরে আলোচনা করছিল। এই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাই সেটি ছাড়াই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অভিন্ন গাইডলাইন বা নীতিমালা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের কাছে আলোচনার এই ফলাফল তুলে ধরেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আইরিশ সদস্য ফ্রান্সেস ফিটজগেরাল্ড।

তিনি বলেন, ‘‘প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে যে, নারীর প্রতি সহিংসতাকে আমরা আমাদের সমাজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করব।” তবে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পার্লামেন্টের রক্ষণশীল দল ইউরোপীয় পিপলস পার্টির এই ভাইস-প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘‘ধর্ষণের সম্মতিভিত্তিক সংজ্ঞার বিষয়টি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ধর্ষণ বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।”

ইইউর বিভিন্ন দেশের ফৌজদারি আইনে ধর্ষণের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞারয়েছে। নতুন করে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতেও এর পরিবর্তন হচ্ছে না। আলোচনায় ধর্ষণের একক সংজ্ঞা নির্ধারণের ব্যাপারে অনাস্থা জানিয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা দ্য কাউন্সিল অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।

‘শুধু হ্যাঁ মানেই হ্যাঁ’

নারী অধিকার এনজিও ইউপিয়ান উইমেন’স লবির ২০২৩ সালের অক্টোবরের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১৪টি সদস্য রাষ্ট্রের আইন ধর্ষণের ক্ষেত্রে ‘শুধু হ্যাঁ মানেই হ্যাঁ’ এমন দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থন করে। অর্থাৎ, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই নারীর পরিষ্কার সম্মতি থাকতে হবে। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে, সুইডেন, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস।

অন্যদিকে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া ‘না মানে না’ এমন নীতি অনুসরণ করে, যেখানে ধর্ষণের শিকার বা অভিযোগকারীকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি যৌনকর্মে মৌখিক আপত্তি জানিয়েছিলেন।

ইউপিয়ান উইমেন’স লবির তথ্য অনুযায়ী, বাকি ১১টি দেশে সহিংসতা প্রতিরোধ বা বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে ধর্ষণের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে দেখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, ইটালিসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

২০২২ সালে ইউরোপীয় কমিশন এই বিষয়ে একটি অভিন্ন আইনেরপ্রস্তাব রাখে। এর মূলে ছিল নারীর প্রতি সহিংসতা ও গৃহ সহিংসতা রোধে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে ইইউর সব দেশের গ্রহণ করা ‘ইস্তাম্বুল কনভেনশনের’ লক্ষ্যগুলোকে বাস্তবায়ন করা।

সদস্য দেশগুলোর মতপার্থক্য

ইস্তাম্বুল কনভেনশনে বলা হয়েছে, ‘একজন ব্যক্তির সাথে তার অসম্মতিতি যৌন প্রকৃতির কোনো কর্মে লিপ্ত হওয়াকে’ অপরাধ বলে বিবেচনা করা হবে। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলা সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে কোন নারীকে কারো সাথে তার অসম্মতিতে যৌন সংসর্গে বাধ্য করানো শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই প্রস্তাবে ‘শুধু হ্যাঁ মানেই হ্যাঁ’ এমন নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইইউ কাউন্সিল তাদের ২০২৩ সালের মে মাসের প্রতিবেদন থেকে ধারাটি বাদ দেয়।

দুই সপ্তাহ আগে জার্মানির বিচারমন্ত্রী মার্কো বুশমান ব্রাসেলসে অনানুষ্ঠানিক এক আলোচনায় বলেছেন, ‘‘কাউন্সিলের আইনি পরামর্শদাতারা ও অন্য অনেক সদস্য রাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ইউরোপীয় মৌলিক আইনে এই ধারাটির জন্য আইনী ভিত্তি যথেষ্ট নয়।” বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী ফ্রান্স ও হাঙ্গেরিও এই অবস্থান নিয়েছিল।

অন্যদিকে ফিটজগেরাল্ড জানিয়েছেন, ইইউ সদস্যদের ২৭টির মধ্যে ১৩টি দেশ সম্মতিভিত্তিক সংজ্ঞার পক্ষপাতি ছিল। এ ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে বাকি সদস্যরা নারী ও নারী অধিকারকর্মীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

জার্মানির ১০০ জন বিশিষ্ট নারী দেশটির বিচারমন্ত্রীকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউরোপিয়ান উইমেন্স লবি বলেছে, নীতিমালা থেকে কাউন্সিলের ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি’ আটকে দেয়ার সিদ্ধান্তে তারা ‘গভীরভাবে মর্মাহত’ হয়েছে। সেই সাথে ইস্তাম্বুল কনভেনশন অনুযায়ী ‘সম্মতির ভিত্তিতে ধর্ষণের একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সংজ্ঞা নির্ধারণে পাঁচ নম্বর ধারাটি মুছে ফেলার জন্য ফ্রান্স ও জার্মানির চাপের প্রেক্ষিতে নেয়া সিদ্ধান্ত আপত্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছে তারা।

সংগঠনটির নীতি ও প্রচার কমর্কর্তা আইরিন রোসালেস এটিকে ‘সম্পূর্ণ ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করেছেন। এর মাধ্যমে ‘সবচেয়ে জঘন্যতম সহিংসতা থেকে নারী ও মেয়েদের রক্ষার সুযোগ শোচনীয়ভাবে হাতছাড়া’ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে নারীর প্রতি সহিংসতারোধের নতুন এই নীতিমালায় যৌনাঙ্গচ্ছেদ ও জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অনাকাঙ্খিতভাবে অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে দেয়া এবং অযাচিতভাবে আপত্তিকর ছবি পাঠানো এবং ‘সাইবারস্টকিংকে’ (ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন) বেআইনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

নীতিমালাটি গৃহীত হওয়ার জন্য তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিল ও পার্লামেন্টে স্বীকৃতি পেতে হবে। এরপর সদস্য রাষ্ট্রগুলো তিন বছরের মধ্যে সেটিকে নিজ দেশের আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d