Trending

ধুঁকছে শিল্প, স্বস্তি চান উদ্যোক্তারা

একের পর এক সংকট-অভিঘাতে গতিহীন ব্যবসা-বাণিজ্য। নানামুখী চাপে অস্বস্তিতে উদ্যোক্তারা। না পারছেন ব্যবসা-উদ্যোগে আস্থা ফেরাতে, না পাচ্ছেন অনুকূল পরিবেশ। আমদানি, উৎপাদন, বিপণনে যখন কোনোভাবে ‘স্বস্তি’ মিলছে না, তখনই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রায় চূড়ান্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

টানাটানির বাজেটে অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করা আর কর্মসংস্থান বাড়ানোই অর্থ উপদেষ্টার মূল চ্যালেঞ্জ। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছেন, তাতে বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ রপ্তানি বাজারেও নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বাজেট কেমন হচ্ছে

অনেক দিন ধরেই বিনিয়োগে মন্দা চলছে। এর সঙ্গে নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মূলধন ঘাটতির কারণে বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর অগ্রাধিকার তালিকায় নেই।
অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত শিল্প খাতকে টেনে তুলতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জোর দাবি উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। পরে তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাস হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট।

জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি হতে যাচ্ছে সংকোচনমূলক বাজেট।

বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানটি থেকে আগামী বাজেটের মূল আকার সাত হাজার কোটি টাকা কমবে, যা অতীতে দেশে আর কখনো এমনটি দেখা যায়নি।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যা ৯-১০ শতাংশের ঘরে থাকছে। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকবে।

আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী অর্থবছরে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে, যা চলতি বাজেটে ছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘নানা কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। সরকার বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট করতে চায়, মুখরোচক কিছু করতে চায় না। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে কর্মসংস্থান বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’

কমবে প্রণোদনা ও করছাড়

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ব্যাংকঋণে সুদের হার, ডলারের উচ্চমূল্য, তীব্র গ্যাসসংকট এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের নানাভাবে হয়রানির ফলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সংকটে ভুগছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। কোনো কোনো কারখানা সক্ষমতার অর্ধেক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপিতে পরিণত হয়ে পড়ছেন ভালো ঋণগ্রহীতারাও।

এমন নাজুক পরিস্থিতিতে যেখানে স্থানীয় শিল্পে নীতি সহায়তা বাড়ানো দরকার, সেখানে উল্টো তা কমানো হতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা কমানোর কথা। তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক কর ব্যবসায়ীদেরও দিতে হবে। সারা জীবন প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা কমানো হবে।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের পাশাপাশি বর্তমান সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর চাপ আছে। নতুন বাজেটে বাড়তি রাজস্ব আহরণে কর্মকৌশল বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় এবং অব্যাহতি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা চান উদ্যোক্তারা

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাত বহুমুখী চাপে রয়েছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যবসার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শিল্প খাতে বিদ্যমান কর রেয়াত ও ভর্তুকি হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হলে অনেক স্থানীয় শিল্প, বিশেষত এসএমই ও নবীন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের মতো বৈশ্বিক ঝুঁকি আমাদের রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা আরো কঠিন করে তুলছে।

স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বাজেটে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তাঁর মতে, কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস করে উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং নতুন উদ্যোক্তা ও রপ্তানিমুখী শিল্পে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নীতির আওতায় দেশীয় পণ্যের জন্য প্রণোদনা নিশ্চিত করা এবং এসএমই খাতে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস-শিল্পে করছাড়ের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে এ খাত টেকসইভাবে এগিয়ে যেতে পারে।

ব্যবসার পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কম্পানিগুলো। এ ছাড়া সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি, আইনের অস্পষ্টতা ও জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও প্রধান ঝুঁকি বলে মনে করে তারা। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে আরো বলা হয়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক আস্থা সূচক ৪১.৮ থেকে কমে ৬.৬ শতাংশে নেমে আসে। তবে ২০২৫ সালে এ সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩.৫ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে মানুষের ক্ষয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় না নিয়ে সরকার হাঁটছে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এবার ফ্রিজ-এসি, মোটরসাইকেলের মতো স্থানীয় শিল্পে করের চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে স্বাভাবিকভাবেই এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ফলে বিক্রি কমার আশঙ্কা করছেন উৎপাদকরা। এতে দেশীয় এসব শিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, দেশে এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে কর বাড়ালে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বাড়বে, যার পুরো চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর। এতে ভোক্তারা ঝুঁকতে পারে আমদানি পণ্যের দিকে।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব শিল্পে দ্বিগুণ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসআরও সুবিধার কারণে ফ্রিজ ও এসি খাতের ওপর বর্তমানে ৭.৫০ শতাংশ ভ্যাট আছে। চলতি অর্থবছর এই এসআরওর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো, একই খাতকে দীর্ঘদিন সুবিধার আওতায় না রেখে অন্যান্য খাতকেও এগিয়ে নেওয়া ও অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে সরকার এ সুবিধা আর বাড়াতে চায় না।’

মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পেও বাড়ছে করের চাপ

দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের চাহিদা রয়েছে। পুরোপুরি আমদানিনির্ভর এই খাতটি এখন প্রায় শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ। উদ্যোক্তারা দেশে ১৪টি মোবাইল তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন। লক্ষ্য ছিল দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে রপ্তানি করা। কিন্তু মোবাইল ফোনের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে মেড ইন বাংলাদেশের উদ্যোগ।

এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে তিন বছর ধরে মোবাইল হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের ওপর ভ্যাটের চাপ বাড়াচ্ছে এনবিআর। সম্প্রতি রাজস্ব বোর্ড স্থানীয়ভাবে কমপক্ষে দুটি কম্পোনেন্ট উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ৫ শতাংশ এবং সম্পূর্ণ আমদানীকৃত উপকরণে তৈরি মোবাইলের ওপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই এটি ২.৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

কর্মসংস্থান বাড়াতে স্থানীয় শিল্প এগিয়ে নেওয়ার সুপারিশ

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিয়েই বর্তমানে দুশ্চিন্তা রয়েছে। তার মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অন্যতম। অর্থনীতির এই সংকটময় সময়ে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে, বাড়বে বেকারের সংখ্যা। কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সহায়তা সম্প্রসারণ করে এই খাতকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাস ও ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে দেশের শিল্প খাত এরই মধ্যে চাপে আছে। এই প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করে কর রেয়াত প্রত্যাহার করলে বিশেষ করে এসএমই ও রপ্তানিমুখী খাতগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বরং  রেয়াতগুলোকে খাতভিত্তিক ও কার্যকারিতা অনুযায়ী পুনর্গঠন করা উচিত, যাতে সম্ভাবনাময় শিল্পগুলো প্রযুক্তি, উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানিতে এগিয়ে যেতে পারে।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যন্তরীণ চাপের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী বাজেট সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে অংশীদারদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ধারাবাহিক নীতিগত সহায়তা প্রদান।’

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে সুদের হার কমানো উচিত। আসন্ন বাজেটটি বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বান্ধবভাবে তৈরি হবে বলে আশা করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online