নজিরবিহীন ধ্বংসের কারণে গাজা পুনর্গঠনে ৮০ বছর সময় লাগতে পারে : জাতিসংঘ
গাজায় ক্ষুধা সংকট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস গাজা উপত্যকার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেছেন, প্রায় সবাই ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে যা অমানবিক। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্টে বলেন, সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবিলম্বে সকল মানবিক সহায়তা দাবি করে এবং গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য খাদ্য ও ঔষধকে অগ্রাধিকার দেয় যাদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, কারণ সর্বোত্তম ঔষধ হলো শান্তি।
২০০৬ সাল থেকে ইসরাইল গাজার ওপর অবরোধ বহাল রেখে অঞ্চলটিকে বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার করে রেখেছে। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের পর ইসরাইল গাজায় একটি নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাব সত্ত্বেও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, আক্রমণের পর থেকে ৪২ হাজার ৪শ’ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ৯৯ হাজার ১শ’ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু। চলমান অবরোধের মধ্যে ইসরাইলি আক্রমণ গাজা উপত্যকার প্রায় সমগ্র জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যূত করেছে। ফলে খাদ্য বিশুদ্ধ পানি এবং ঔষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরাইল গাজায় তার কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলার মুখোমুখি হয়েছে।
নজিরবিহীন ধ্বংসের কারণে গাজা পুনর্গঠনে ৮০ বছর সময় লাগতে পারে : জাতিসংঘ
এদিকে জাতিসংঘের আবাসন বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণন রাজাগোপাল বলেছেন, ছিটমহলটিতে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকলে গাজার পুনর্গঠনে ৮০ বছর সময় লাগতে পারে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, পর্যাপ্ত বাসস্থানের অধিকার পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাধীন জাতিসংঘের তদন্তকারী রাজাগোপাল জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে গাজার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চল আরো বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যার হার ৮২ শতাংশ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে উত্তর গাজায়, যেখানে পরোটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, মে মাস নাগাদ গাজায় ৩৯ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ উপস্থিত ছিল। এ ধ্বংসস্তূপ অবিস্ফোরিত অস্ত্র, বিষাক্ত বর্জ্য, ধসে পড়া ভবনের অ্যাসবেস্টস এবং অন্যান্য সামগ্রীর সাথে মিশ্রিত হয়।
রাজাগোপাল সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, ভূগর্ভস্থ পানি এবং মাটির দূষণ একটি বিপর্যয়মূলক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব সমস্যা সময়মতো সমাধান করা যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ধ্বংসের অভূতপূর্ব তরঙ্গের সম্মুখীন হয়েছে। গাজা পুনর্নির্মাণের সময়সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি প্রথমে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, তহবিল নিরাপদ করতে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, আগ্রাসন না হওয়া পর্যন্ত পুনর্গঠন শুরু করা যাবে না।
রাজাগোপাল বিল্ডিং উপকরণ এবং সরঞ্জামের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তাদের দ্বৈত ব্যবহারের উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন যে, গাজায় ২০১৪ সালের যুদ্ধের পর প্রতি বছর এক হাজারেরও কম বাড়ি তৈরি হয়েছিল। সূত্র : ডেইলি সাবাহ ও ওয়াফা নিউজ এজেন্সী।