Bangladesh

নড়বড়ে ঢাকা, দুশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন জোরদারের চেষ্টা করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তাদের এ আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর এখন পর্যন্ত দুই অংশের থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও কমিটি ঘোষণা আটকে গেছে।

তারা বলেন, বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের চলমান কর্মসূচিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে কমিটি দিতে না পারার বিষয়টি। রাগ-ক্ষোভের কারণে রাজনীতির এ উত্তপ্ত সময়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের বড় একটি অংশকে বারবার অনুরোধ করেও কর্মসূচিতে আনা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ শান্তি সমাবেশের উদাহরণ টেনে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা আরও বলেন, জমায়েত দেখে তারা খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, কোথায় তাদের নেতাকর্মীরা?

বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। দলটি ওইদিন থেকে ঢাকায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে। তারা মূলত ঢাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একইদিন সমাবেশসহ আগে-পরে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য দলের সভাপতিম-লীর দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনরাও ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া।

ফলে সামনের দিনগুলোতে কর্মসূচিতে লোকজমায়েত আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য কমিটির বিষয়টি সামনে আসছে। ঢাকা মহানগরের দুই অংশের নেতারাও মনে করছেন, নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে আনতে কমিটি গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, “রাজনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগ চলছে ঢিমেতালে। ‘বাজান’ সন্তুষ্ট হচ্ছেন না বলে কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না, এমন কথাই শুনছি।” কে এই ‘বাজান’, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাম বলতে পারব না। তবে সবাই জানে ‘বাজান’ সংকটের কথা।”

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক নেতা বলেন, উত্তরের ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের খসড়া কমিটি চূড়ান্ত করে রাখা আছে। সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচির কাছে খসড়া কমিটি রয়েছে। তবে দক্ষিণের কমিটি চূড়ান্ত করা হলে একসঙ্গে দুই অংশের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ঘোষণা হবে, এমন সিদ্ধান্তের কারণে সব কমিটিই আটকে আছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মিলিয়ে কমিটির সংখ্যা ১৭৯। এর মধ্যে উত্তরে ২৬ থানা, ৬৪ ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন। আর দক্ষিণে ২৪ থানা, ৫৭ ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিটের কোনোটিতেই নতুন কমিটি হয়নি। যদিও সম্মেলন হয়েছে।

পুরনো কমিটিগুলো সচল করার কথা বললেও দক্ষিণের ৩, ৮, ৩১, ৪৪, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি মারা গেছেন। দক্ষিণের শাজাহানপুর, কোতোয়ালি ও লালবাগ থানার সভাপতিও প্রয়াত। দক্ষিণের দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া দক্ষিণের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন।

ঢাকার মহানগরের দুই অংশের সাংগঠনিক দিকটি দেখভাল করেন দলের সভাপতিম-লীর দুই সদস্য। দক্ষিণের দায়িত্বে আছেন আবদুর রাজ্জাক ও উত্তরে ফারুক খান। এ বিষয়ে তাদের কাছে বিভিন্ন সময় এই প্রতিবেদক জানতে চাইলেও তারা কিছু বলতে রাজি হননি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর কাছে থানা-ওয়ার্ড কমিটির ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে দক্ষিণের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ‘বাজান’ কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী পাল্টা জানতে চান ‘বাজান’ কে?

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কমিটি কখন দেব এ ব্যাপারটা তো আওয়ামী লীগের নিজস্ব ব্যাপার। এই নিয়ে আপনাদের ব্যস্ততা কেন?’ অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে মোবাইল ফোন রেখে দেন তিনি।

দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাজান’ কে তা কেউ না চিনলেও ‘বাজান’ই কমিটি করতে না পারার মূল কারণ, এটা সবার জানা।

মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি অংশের নেতারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও তারা দাবি করেন, এখন বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো যাচ্ছে না। কারণ সবাই বলছেন, ‘দায়িত্ব নাই, দায়বদ্ধতাও নাই। এ সত্য অস্বীকার করার উপায়ও নেই।’

মহানগরের এ নেতারা আরও বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ অসংগঠিত রেখে আন্দোলন মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছোট একটি অংশ কর্মসূচিতে যোগ দিলেও বড় অংশ ঘরে বসে থাকছে। দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা কর্মসূচিতে জমায়েত ঘটাতে অবদান রাখছেন।

দুই অংশের নেতারা আরও বলেন, এখন না হয় কোনোভাবে পার করে যাওয়া যাচ্ছে। তাদের দাবি, থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নতুন করে না করার ফলে ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট সংকটে পড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। হয়তো কর্মী-সমর্থক বা যাকে-তাকে দেওয়া যাবে। কিন্তু পদ-পদবি ও দায়িত্বশীল নেতাকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে না পারলে ভোটকেন্দ্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন হবে না। এটি আওয়ামী লীগ আমলে না নিলেও, ভোটের সময়ে একটি সংকট সৃষ্টি করবে।

নতুন কমিটি না দেওয়ায় সংকটের বিষয়টি আওয়ামী লীগ ভাবতে পারছে না বলেও দাবি করেন মহানগর নেতারা। রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের তীর্থস্থান বলা চলে ঢাকা মহানগর। ঢাকা জয় করতে পারলেই আন্দোলনে জয়ী হওয়ার নজির। যেকোনো আন্দোলন ঢাকায় চাঙ্গা হলে সারা দেশেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সম্পাদক পদের এক নেতা বলেন, গত বছর থেকে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় ঢাকার দুই অংশে শান্তি সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। থানা ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় সেসব কর্মসূচি জমিয়ে তুলতে পারছেন না দুই অংশের নেতারা। যে কারণে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও জাহাঙ্গীর কবির নানককে দুই অংশের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতেও কাজ হবে মনে করছেন না নগর নেতারা। কারণ, কেউ দায়িত্বে না থাকায় জবাবদিহির সুযোগ নেই।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি অংশে থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় কিছুটা সংকট তো ছিলই। তবে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে সাবেকদের দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আর কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রলয় সমদ্দার বাপ্পী বলেন, ‘আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি খসড়া কমিটি করে রেখেছেন। যতদিন নতুন কমিটি ঘোষণা না হবে, ততদিন পুরাতন কমিটি চলমান থাকবে।’ বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় নতুন কমিটি না হওয়াকে সমস্যা মনে করছেন না তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি বলেন, ‘আমাদের ৮০২টি ইউনিট কমিটি আছে। প্রতিটি ইউনিটে আমাদের ন্যূনতম ৩৭ জন সদস্য আছে।’ এসব ইউনিট কমিটি আন্দোলন ও নির্বাচন মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট বলে দাবি করেন তিনি

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor