নতুন আবিষ্কার: সৌরজগতের বাইরের গ্রহের বায়ুমণ্ডলের তিন স্তর চিহ্নিত

প্রথমবারের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ত্রিমাত্রিক কাঠামো চিহ্নিত করেছেন। চিলির ইউরোপীয় সাদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের চারটি ইউনিটের মাধ্যমে WASP-121b (বা টাইলস) নামের গ্রহটির বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা তিনটি স্তর খুঁজে পান, যা একটি ‘ওয়েডিং কেক’-এর স্তরগুলোর মতো সাজানো।
গ্রহটি একটি বিশাল ও অত্যন্ত উত্তপ্ত নক্ষত্রের কাছাকাছি অবস্থান করে। এ কারণে এর বায়ুমণ্ডলও চরম উষ্ণ। সাধারণত, এক্সোপ্ল্যানেট বা সৌরজগতের বাইরের কিছু গ্রহের বায়ুমণ্ডলে থাকা রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারলেও এত দিন পর্যন্ত কেউ এর উল্লম্ব কাঠামো বা রাসায়নিক উপাদানগুলোর বিন্যাস সম্পর্কে জানতে পারেননি।
বায়ুমণ্ডলের তিনটি স্তর ও তাদের বৈশিষ্ট্য :
গবেষকরা গ্রহটির বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে তিনটি স্তর শনাক্ত করেছেন। প্রথম স্তর: সবচেয়ে নিচের স্তরে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকা লোহা শনাক্ত হয়েছে। চরম তাপমাত্রার কারণে এখানে লোহা কঠিন না থেকে গ্যাস হিসেবে বিদ্যমান। এই স্তরে তীব্র বাতাসের কারণে গ্যাসের প্রবাহ গ্রহটির চিরস্থায়ী উষ্ণ পাশ থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা পাশে স্থানান্তরিত হয়।
দ্বিতীয় স্তর: মধ্যবর্তী স্তরটি সোডিয়াম দ্বারা চিহ্নিত, যেখানে ঘণ্টায় প্রায় ৭০,০০০ কিলোমিটার গতিবেগে একটি জেট স্ট্রিম বাতাস প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহ আমাদের সৌরজগতের যেকোনো বাতাসের চেয়েও শক্তিশালী।
তৃতীয় স্তর: শীর্ষ স্তরটি মূলত হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত এবং কিছু অংশ মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় সাদার্ন অবজারভেটরি এবং ফ্রান্সের Observatoire de la Côte d’Azur-এর ল্যাগ্রাঞ্জ ল্যাবরেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জুলিয়া ভিক্টোরিয়া সিডেল বলেন, এই কাঠামো আগে কখনো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি এবং প্রচলিত ধারণাগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘Nature’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, WASP-121b-এর বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকা টাইটানিয়াম রয়েছে। আমাদের পৃথিবীতে লোহা ও টাইটানিয়াম কঠিন অবস্থায় থাকে, কারণ আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে সোডিয়ামের একটি স্তর রয়েছে। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার পথ উন্মুক্ত করবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।