নতুন করে ২৬৫ কোটি টাকা তারল্য সুবিধা পেল তিন ব্যাংক
গত অক্টোবর থেকে এপর্যন্ত ৭টি ব্যাংক তারল্য সুবিধা পেয়েছে ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের কারণে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত তারল্য গ্যারান্টি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এই গ্যারান্টির আওতায়, আর্থিকভাবে সবল চারটি ব্যাংক সংকটে থাকা তিনটি ব্যাংকে ২৬৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।
মঙ্গলবার ধার পাওয়া তিনটি ব্যাংক হলো- ফাস্ট সিকিউরিটি, ন্যাশনাল ও এক্সিম ব্যাংক। অপরদিকে এসব ব্যাংকগুলোকে ধার দিয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সংকটে থাকা ৭টি ব্যাংককে গত অক্টোবরের শুরু থেকে এপর্যন্ত মোট ধার দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে সহায়তা করেছে, তা পর্যাপ্ত না। তারল্য সহায়তা না বাড়ালে– ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থা আরও কমে যাবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন শাখায় গিয়ে গ্রাহক টাকা পাচ্ছে না। গ্রাহকদের টাকা দিতে না পেরে হেনস্তা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই ব্যাংকগুলো যেন আরও তারল্য পায় সে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
জানা যায়, ঋণ জালিয়াতি ও নানা অনিয়মের কারণে দুই বছর যাবৎ তীব্র তারল্য বা নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে দেশের প্রায় ১২টি ব্যাংক। এরমধ্যে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল আটটি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হয়। তবুও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরবর্তীতে ব্যাংকগুলো আরও বেশি তারল্য সংকটে পড়লে চলতি হিসাব ঘাটতি রেখেও লেনদেনের সুযোগ দেয়া হয়।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া ছিল তা নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোর সঠিক আর্থিক চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করে। গ্রাহকের টাকা দিতে না পারার মতো ঘটনাও ঘটে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকখাতে দখলকৃত অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন পর্যন্ত এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটি ব্যাংকসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্যারান্টির অধীনে দুর্বল ব্যাংকগুলো অর্থসহায়তা নিয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯৮৫ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘সব ব্যাংককে রক্ষা করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। পরিচালনায় বদল এনেও যেসব ব্যাংক এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব আমানতকারীকে রক্ষা করা হবে।’
একইদিন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিন মাসে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ দেওয়া বন্ধ আছে। ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ব্যাংকের আমানত বাড়াতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গত ২০২৪ সালের আগস্ট শেষে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে অন্তত ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এস আলম মুক্ত করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ২৬৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩৯৪ কোটি টাকার ঘাটতি স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের। দুই হাজার ৩৪২ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ন্যাশনাল ব্যাংক।