Bangladesh

নতুন দলের বার্তা নিয়ে ধোঁয়াশা, কৌশল নির্ধারণে তৎপরতা

এক প্ল্যাটফরমে নানা মত, নানা পথের মানুষ। ডান, বাম, ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতার সঙ্গে আছে বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পড়ে আসা প্রতিনিধি। ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি- এনসিপি গঠিত হয়েছে সব মানুষকে নিয়ে। সবাইকে নিয়ে মধ্যপন্থি রাজনীতির যে চর্চার কথা বলছে এনসিপি সেটিই দলটির বড় চ্যালেঞ্জ। দলের নেতাকর্মীরা নাহিদকে ইমাম মানলে সেই দলের কেবলা কী- সেই প্রশ্নই এখন জনমনে। ইতিমধ্যে বিএনপিসহ অনেকে নতুন দলের আদর্শ পরিষ্কার নয় বলে আওয়াজ তুলেছে। ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির যে ইতি চাইছে এনসিপি তারাই বা কোনপন্থি- প্রশ্ন অনেকের। তবে নতুন দলের নেতারা স্পষ্ট করেছেন এখন থেকে কেবল বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি হবে। মধ্যপন্থির এ দল সব মত, সব পথকে গুরুত্ব দেবে। যেটি করতে গেলে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেও মনে করছেন দলটির নেতারা। দ্রুত গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার করতে চায় এনসিপি। এ ছাড়াও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যে সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলেছেন, সেটি বলতে কী  বোঝাতে চান নতুন দল? একই মঞ্চে সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ এখন বাস্তবতা। যেটি তারা আরও আগ থেকেই বলে আসছেন। সেটি বাস্তবে রূপ দেয়া নিয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে নতুন দলকে। সব মিলিয়ে নতুন দলের বার্তা নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। যেটি নিয়ে অন্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে তাদের এক ধরনের মতবিরোধ হতে পারে। 
এদিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে শহর থেকে গ্রামে পৌঁছাতে চায় নতুন দল। একইসঙ্গে মহানগর, জেলা, উপজেলায় কমিটি দিতে চায় তারা। সেক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঘোষিত কমিটি এনসিপি’র কমিটিতে রূপ পাবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু যোগ-বিয়োগ হতে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি দলটি। আত্মপ্রকাশের দিন একটি কমিটি প্রস্তুত করা হলেও সেটি নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকায় তাতে সংশোধন আনা হচ্ছে বলে দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া রমজানের মধ্যেই দলের প্রতীক চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় এনসিপি

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা দল গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করে। যেখানে যোগ দেয়, 
ডান ও বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এ ছাড়াও এতে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে যুক্ত করা হয়। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে এত মতের মানুষের সংগঠন রাজনৈতিক দলে পরিণত হলে তাদের মতাদর্শগত ঐক্য হবে কিনা। এ ছাড়াও তারা যে মধ্যপন্থি রাজনীতির কথা বার বার বলছেন সেটি  কতোটুকু সম্ভব হবে। গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়ার কাছে। তিনি বলেন, নানা মত ও পথের মানুষকে এক জায়গায় আনা চ্যালেঞ্জ এটা ঠিক। আবার এটি দলকে অনেক বেশি শক্তিশালীও করবে। আমরা বলছি এনসিপি হবে মধ্যপন্থি দল। এ দলে সব মতের মানুষ থাকবে। আমরা এখানে সবাইকে নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই। তার মতে, আগামী দিনে এটি পরিষ্কার হবে দলগত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে ঐকমত্যে আনা যাবে কিনা। তিনি বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি নিয়ে এখনো কাজ হয়নি। এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে তারা আমাদের মতাদর্শ, দফা, মূলনীতি কী হবে বাকি সব ঠিক করবেন। মূল বিষয় হচ্ছে আমরা মানুষের অধিকার ভিত্তিক আমাদের দফাসমূহ ঠিক করবো। 

দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সেকেন্ড রিপাবলিক, নতুন সংবিধান ও গণপরিষদের কথা বলেছেন। দলের সদস্য সচিব বলেছেন, নতুন সংবিধান এখন বাস্তবতা। নাহিদ তার ঘোষণাপত্রে বলেছেন, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্যদিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবো। 

তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না। নাহিদ বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে। আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। তাদের সকল ধরনের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী সুরক্ষাই হবে আমাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। আমাদের রিপাবলিক সকল নাগরিককে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকেই অপরায়ন করা হবে না। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে সমান গুরুত্ব প্রদান ও সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। মিরাজ মিয়া এ বিষয়ে বলেন, সেকেন্ড রিপাবলিক বলে আমরা কী বোঝাতে চেয়েছি সেটি নাহিদ ইসলামের ঘোষণাপত্রেই পরিষ্কার। তবে আমরা বলছি একটি গণপরিষদ গঠনের কথা। যারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। ওই অনুযায়ী দেশ চলবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীরাই গণপরিষদের সদস্য হিসেবে ৩ থেকে ৬ মাস দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবেন। তারপর তারা সংসদের সদস্য হিসেবে থেকে যাবেন। গণপরিষদের কথা আমরা এজন্য বলছি যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা কিন্তু সংবিধানে বড় পরিবর্তন আনতে পারেন না। তারা কেবল কিছু আর্টিকেল চেঞ্জ করেন। যেটি আবার অন্য দল আসলে বাদ দিয়ে দেয়। তাই আমরা চাই গণপরিষদের মাধ্যমে এমন একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে যেটি পরবর্তীতে অন্য কেউ চাইলেও আর পরিবর্তন করতে পারবে না।

এদিকে নতুন দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে শিগগিরই তিনটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। যারা দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কেন্দ্রীয়ভাবে দলকে পরিচালনার কাজ করবে। এ বিষয়ে সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া বলেন, আমাদের প্রাথমিক কমিটির পর আমরা তিনটি কমিটি করে দেবো। প্রথম কমিটিতে যারা নির্বাচন করবে তারা নির্বাচনী কলাকৌশল ও মাঠ গোছানো নিয়ে কাজ করবেন। দ্বিতীয়টি পার্টি শক্তিশালী করা ও গঠতন্ত্র নিয়ে কাজ করবে। আর তৃতীয়টি ন্যাশনাল পলিটিক্স নিয়ে কাজ করবে। 

এদিকে শিগগিরই সব জেলা উপজেলায় কমিটি চূড়ান্ত করতে চায় এনসিপি। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, রমজানে আমরা দল গোছানো, কর্মবণ্টন- এসব নিয়ে কাজ করবো। জেলা, থানা কমিটি নিয়ে কাজ করবো। আমাদের সংগঠন গোছানো প্রায় শেষ। সারা দেশে ৪৩০ থানায় নাগরিক কমিটির কমিটি আছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে এনসিপি’র কমিটি হিসেবে রূপ নেবে। আশা করছি মার্চের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করতে পারবো।

দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সাঈদ লিয়ন বলেন, ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনার বিগতদিনের স্বৈরশাসনের পরও তাকে এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সরাতে পারেনি। রাজনীতিতে সেই ঘাটতি ছিল। যেটি পোষাতেই আমরা নতুন দল নিয়ে এসেছি। আমরা মনে করি এনসিপি সেই কাজটি করতে পারবে। রাজনৈতিক যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটি পূরণ করবে। সম্পূর্ণ বাংলাদেশপন্থি একটি দল হবে এনসিপি। তিনি বলেন, রমজানের মধ্যেই আমরা নিবন্ধন ও প্রতীক চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবো। কারণ আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো ইতিমধ্যে চূড়ান্ত। তিনি বলেন, আমাদের মূল টার্গেট এদেশের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এরাই ছিল আমাদের অন্যতম শক্তি। তারাই ফ্যাসিবাদকে সরিয়েছে। তাই আগামীদিনের বাংলাদেশও তাদের গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের কর্মসূচিতে তাদের গুরুত্ব দিচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor