Bangladesh

নতুন মিত্রের খোঁজে সেভাবে সাড়া পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পুরোনো মিত্রদের বেশির ভাগই সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু নতুন মিত্রের খোঁজে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে সেভাবে সাড়া মিলছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সখ্য ছিল, এমন একটি দল ইসলামী আন্দোলন ও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে সম্প্রতি সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে থাকা এবং স্বতন্ত্র ইসলামি দলগুলোকে নির্বাচনে আনার উদ্যোগে সেভাবে সাড়া পাচ্ছে না ক্ষমতাসীনেরা।

আওয়ামী লীগ যেমন ইসলামি দলগুলোর মধ্যে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে আরও কিছু ইসলামি দলকে অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল নিয়েছে, একই সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনে না এলে দলটির সঙ্গে থাকা ইসলামি দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টাও ছিল ক্ষমতাসীনদের। এসব উদ্যোগে এখনই সাড়া না দিয়ে ইসলামি দলগুলোও সময়ের জন্য অপেক্ষা করা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা—এই কৌশল নিয়েছে বলে ওই দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন কত দূর গড়ায়, সেদিকে নজর রাখছে বেশির ভাগ ইসলামি দল। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোটে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে আরেকটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে কি না, সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাইছে দলগুলো।

ইসলামি দলগুলোর এমন অবস্থানকে ক্ষমতাসীনদেরও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানা এবং বিএনপির কাছ থেকে সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে আনার তাদের উদ্যোগ এখনো সফল হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ইসলামি সব দলকে নির্বাচনে পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এরপরও আওয়ামী লীগ দলগতভাবে এবং সরকারের দিক থেকে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

নিবন্ধন নেই, এমন ইসলামি দলের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। ইসলামি দলগুলোও কোনো সংখ্যা বলতে পারে না।

নিবন্ধিত ইসলামি দল ১১টি

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৭। এর মধ্যে ইসলামি দল ১১টি। এগুলো হচ্ছে জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।

নিবন্ধন নেই, এমন ইসলামি দলের সংখ্যা অনেক। কিন্তু এর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। ইসলামি দলগুলোও কোনো সংখ্যা বলতে পারে না।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন এবং তারপর থেকে গঠিত সংসদগুলোর ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পর সবচেয়ে বেশি ভোট রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। সাম্প্রতিক সময়ে ভোটের মাঠে অন্যতম ইসলামি শক্তি হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর বাইরে প্রয়াত শায়খুল হাদিস আজিজুল হকের খেলাফত মজলিস ও প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটের প্রভাব রয়েছে ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে।

বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় ভোটে অংশ নেওয়ার কথা বলে পোস্টারও টানিয়েছেন জামায়াতের কোনো কোনো নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে অপরের বিরুদ্ধে জামায়াতকে মাঠে নামানোর অভিযোগও করেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত নিজের গুরুত্ব বাড়াতেই একটা ‘রহস্যময়’ অবস্থান নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের পুরোনো মিত্ররাই নির্বাচনে

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যেসব ইসলামপন্থী দল আওয়ামী লীগের মিত্র ছিল, এখন পর্যন্ত তারাই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখেছে। এর মধ্যে তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ছিল জাকের পার্টি। তারা এখনো আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যায়নি।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৪-দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে। কিন্তু জোটের বামপন্থী দলগুলো ও তরীকত ফেডারেশনের বিরোধিতায় তা হয়ে ওঠেনি। তবে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে। ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চান তাঁরা।এই ধারার আরেকটি দল হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির মিত্র ছিল তারা। তবে তারাও সরকারঘেঁষা হিসেবে পরিচিত।

এর বাইরে নিবন্ধনহীন নামসর্বস্ব কিছু ইসলামপন্থী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আছে। অবশ্য তাদের নিজস্ব কোনো ‘ভোটব্যাংক’ নেই। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এসব দল সংখ্যা বাড়াতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে মাইজভান্ডারের পীর সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহম্মেদ ও মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন লিবারেল ইসলামী জোট। এই জোটে ছয়টি দল আছে। এর মধ্যে সাইফুদ্দিনের বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় এসেছে।

আমরা আওয়ামী লীগ, সরকার কিংবা বিএনপি—কারও সঙ্গেই নেই। স্বতন্ত্র ও স্বাধীন একটি দল।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ

ইসলামি বড় শক্তিগুলো সময় নিচ্ছে

১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে আসার পর বেশির ভাগ সময় বিএনপির মিত্র হিসেবে দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামীকে। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদের যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতকে পাশে পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোট গঠনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত গাঁটছড়া বাঁধে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হওয়ার পর নিবন্ধনও হারিয়েছে দলটি। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক তিক্ততার।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মধ্যপন্থী বেশ কিছু দল নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর জামায়াত কিছুটা গুরুত্ব হারায়। বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ভেতরে-ভেতরে যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।

সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি দূরে ঠেলে দেওয়ার পর জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একধরনের ‘কর্ম যোগাযোগ’ স্থাপিত হয়। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে কোনো ঐক্য সম্ভব নয়। তাই দলটিকে বিএনপির পক্ষে যাওয়া ঠেকাতে এবং আগামী নির্বাচনে পেতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপিকে চাপে ফেলতে জামায়াতও আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার একটা আবহ তৈরি করার চেষ্টা করে। বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় ভোটে অংশ নেওয়ার কথা বলে পোস্টারও টানিয়েছেন জামায়াতের কোনো কোনো নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে অপরের বিরুদ্ধে জামায়াতকে মাঠে নামানোর অভিযোগও করেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, জামায়াত নিজের গুরুত্ব বাড়াতেই একটা ‘রহস্যময়’ অবস্থান নিয়েছে।

‘অচেনা’ ৫৮টি ইসলামি দলের একটি জোট রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে প্রয়াত এইচ এম এরশাদ সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) নামে এই জোটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আর এই জোটের অস্তিত্ব দেখা যায়নি।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পর জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিয়মিত অংশ নেয় চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন। আওয়ামী লীগ দলটিকে পাশে রাখার চেষ্টা করেছে। আর ইসলামী আন্দোলনও জামায়াতের শূন্যস্থান দখলে সরকারের সঙ্গে সখ্য রেখে চলেছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে ইসলামপন্থী ও অন্যান্য কিছু দল নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা চালায়। মূল লক্ষ্য ছিল আগামী নির্বাচনে দর–কষাকষির জন্য শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। বিএনপিও ইসলামী আন্দোলনকে কাছে টানার চেষ্টা চালায়। গত ২ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু। তবে গত জুনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে মেয়র পদপ্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা হয়। এরপর থেকে দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কে চিড় ধরে। এখন ইসলামী আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিরোধী শিবিরের বেশি কাছের বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না—এটা তাঁরা পরিষ্কার করেছেন। তাহলে বিরোধী দলের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরাও তো বিরোধী দল। আমরা আমাদের মতো মাঠে আছি।’

বিএনপি থেকে সরে আসার পর ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কিছুটা সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে। তবে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হককে ২০২১ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে তা আর হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহকে সরকারঘেঁষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে দলটি এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্পষ্ট করেনি।

এ বিষয়ে মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ, সরকার কিংবা বিএনপি—কারও সঙ্গেই নেই। স্বতন্ত্র ও স্বাধীন একটি দল।’ ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে তাঁরাও অংশ নেবেন।

নামসর্বস্ব ‘ঢাউস’ জোট

‘অচেনা’ ৫৮টি ইসলামি দলের একটি জোট রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে প্রয়াত এইচ এম এরশাদ সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) নামে এই জোটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আর এই জোটের অস্তিত্ব দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন এই জোটের পেছনে সরকারের তৎপরতা রয়েছে। তারাই রওশন এরশাদের পেছনে জোটটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ইসলামপন্থীদের নিয়ে তৎপরতা আরও বাড়বে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, সব দলই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ভেতরে–ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d