নভেম্বর যেন সংঘাতময় ছাত্র বিক্ষোভের মাস
গত ১৮ নভেম্বর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভের সময় একটি ট্রেনে হামলার ঘটনাও ঘটে। হামলায় ট্রেনটির একাধিক যাত্রী আহত হন।
নভেম্বর মাসজুড়ে দেশে ধারাবাহিক ছাত্র আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। আগে যে ধরনের সহিংসতার সঙ্গে ছাত্রলীগকে (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত) জড়িত থাকতে দেখা যেত, একই ধরনের সহিংসতায় বর্তমানে বিভিন্ন ছাত্র গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া ৫ আগস্ট আওয়মী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তৈরি পোশাক খাত এবং ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিক্ষোভও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
তিতুমীর কলেজের আন্দোলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কয়েক সপ্তাহ ধরে সড়ক অবরোধ করার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয়, ঢাবি ক্যাম্পাসে কেবল সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কর্মকর্তা ও সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
তবে এতে সন্তুষ্ট হননি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানাচ্ছিলেন। ফলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এছাড়া, তারা শ্রেণিকার্যক্রম ও সাত কলেজের পরীক্ষাগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণাও দেন। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে নিজেদের ক্যাম্পাসে তিনদিন সমাবেশও করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গত ১৮ নভেম্বর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাখালীতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভের সময় একটি ট্রেনে হামলার ঘটনাও ঘটে। হামলায় ট্রেনটির একাধিক যাত্রী আহত হন।
তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রফিক উদ্দিন রায়হান টিবিএসকে বলেন, ‘কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সময় লাগে, তবে একবার কমিশন গঠন হলে তা ধীরে ধীরে কাজ শুরু করবে।’
পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তের পর আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের সংঘর্ষ
তিতুমীর কলেজের বিক্ষোভ থামার মাত্র দু’দিনের মাথায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, সিটি কলেজের ছাত্ররা সেদিন সকালে তাদের এক সহপাঠীকে মারধর করেছেন।
গত ২০ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা কলেজের একটি বাসে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এরপর দু ঘণ্টার সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয় পক্ষই লাঠি ও লোহার রড নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া দেয় এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ এরপর সিটি কলেজকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়। এটি দাবি করেছিল, সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
তেজগাঁওয়ে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
২৪ নভেম্বর রাতে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মৌখিক বাকবিতণ্ডার কারণে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
এ হাতাহাতি শীঘ্রই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নিয়ে রাত ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে দুই পক্ষকে আলাদা করে দেয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
একটি মৃত্যু ও পরবর্তী হামলা
২৪ নভেম্বর সকালে পুরান ঢাকার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা এক সহপাঠীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে হাসপাতালটিতে হামলা চালান।
এ ভাঙচুরের ঘটনার রেশ শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের ছাত্ররা ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান।
এর ফলে পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় শিক্ষকসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
৮ হাজার কলেজ ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা
সংঘর্ষের ঘটনায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ (ডিএমআরসি) বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর নামে ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।
ঢাকার সূত্রাপুর থানার উপ–পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে গতকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) মামলাটি করেন।
থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপ-পরিদর্শক অনুপম দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।