USA

নারীকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে কি প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্র

কমলা হ্যারিস হেরে গেছেন– এটাই শুধু ডেমোক্র্যাটদের একমাত্র হতাশার কারণ নয়।  দলটির অনেক নারীর কাছে এটাও একটা বেদনাদায়ক ব্যাপার, আট বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো একজন ডেমোক্রেটিক নারী প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। 

কমলা হ্যারিস এবং হিলারি ক্লিনটন নাটকীয়ভাবে ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবং ভিন্ন কৌশল নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে উভয়ের ফলাফল একই ছিল। তারা এমন একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হেরেছেন, যিনি যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত। ট্রাম্প তাঁর বিরোধীদের যৌন এবং বর্ণবাদী ভাষায় অপমান করেছেন। 

বুধবারের ফলাফলের পরে কিছু ডেমোক্র্যাট নারী ওভাল অফিসে একজন নারীকে নির্বাচিত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে সবচেয়ে হতাশাজনক উপসংহার ছাড়া অন্য কিছুতে পৌঁছাতে পারছেন না। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম পলিটিকোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ডেমোক্রেটিক দলের প্রায় এক ডজন নির্বাচিত কর্মকর্তা এবং কৌশলবিদ বলেন, কমলার পরাজয়ের পেছনে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ভূমিকা রেখেছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। 

হিলারি ক্লিনটনের প্রচার পরিচালনায় যুক্ত প্যাটি সোলিস ডয়েল বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশটি এখনও যৌন বৈষম্যবাদী। দেশটির নাগরিকরা আজও একজন নারী প্রেসিডেন্টকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। আমি আশা করছিলাম, এবার আমরা অন্তত কাছাকাছি যাব। তবে আমরা আরও দূরে চলে এসেছি।’ 

ডেমোক্র্যাট নারীরা বলেছেন, যৌন বৈষম্যবাদ এবং বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এগুলো এবারের প্রচারে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে একমাত্র নারী-বিদ্বেষের কারণেই কমলা হেরেছেন, তাও মনে করছেন না অনেক ডেমোক্র্যাট নারী। 

পরাজিত হওয়ার পর বুধবার বিকেলে বিদায়ী বক্তৃতায় কমলা নারীদের বিশেষভাবে সম্বোধন করেননি, যেমনটি হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালে করেছিলেন। এর পরিবর্তে কমলা অগ্রগতির দীর্ঘ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের অনুরোধ করেন, ‘কখনও কখনও লড়াই কিছুটা দীর্ঘ হয়। তার মানে এই নয়, আমরা জিতব না।’

প্রেসিডেন্ট পদে তিন মাসের প্রচারাভিযানের সময় কমলার কর্মীরা বাজি ধরেছিলেন, তারা ২০২০ সালে বাইডেনের তুলনায় নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে পারবেন।  উল্টো বুথফেরত জরিপ অনুসারে, কমলা আরও খারাপ পারফর্ম করেছেন। তিনি ট্রাম্পের তুলনায় নারীদের ভোট ৮ পয়েন্ট বেশি পেয়েছেন বটে, তবে ২০২০ সালে বাইডেন ১৫ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ট্রাম্প পুরুষদের বড় ধরনের সমর্থন পেয়েছেন। কমলার চেয়ে পুরুষ ভোটে তিনি ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, হিলারির চেয়েও নারীদের কম ভোট পেয়েছেন কমলা। হিলারি নারীদের ভোটে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

২০২৩ সালে এক ডজন নারী যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গভর্নর হিসেবে কাজ করেন, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে এটাই শেষ কথা নয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডেমোক্র্যাট নারী বলেছেন, ‘আমরা নির্বাহী পদে নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি দেখছি। তবে নারীদের প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চাই না। কারণ গভর্নররা সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেন না।’ তিনি বলেন, ট্রাম্প কমলাকে বিশ্বনেতাদের ‘খেলার পুতুল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।  ট্রাম্প জেন্ডার ইস্যুকে কাজে লাগাতে চেয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার কমলার চেহারা নিয়ে কথা বলেছেন। ট্রাম্প প্রায়ই ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় বলতেন, কমলা পেশাগতভাবে ওপরে ওঠার জন্য শরীরকে ব্যবহার করেছেন। কমলাকে যৌনকর্মী হিসেবেও ইঙ্গিত করেন তিনি। 

উত্তর ক্যারোলাইনার বাসিন্দা সেন সিডনি ব্যাচ বলেন, ‘আমি শ্বেতাঙ্গ নারীদের গভীরভাবে বুঝতে চাই যে, কেন তারা আজ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমস্ত যৌনতা, তাঁর সমস্ত বর্ণবাদের পরও তাঁকে ভোট দিয়েছে। আমি হতবাক।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্রেটিক কৌশল প্রণেতাদের মধ্যে শক্তিশালী অনুভূতি তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সম্ভবত রিপাবলিকান পার্টি থেকে হবেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন পর্যন্ত দুইজন নারীকে মনোনীত করেছে এবং তারা উভয়ই হোয়াইট হাউস জয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে খুব শিগগির অন্য কোনো নারীকে মনোনীত করার বিষয়ে দলটি সতর্ক থাকবে।  

ডেমোক্রেটিক দলের অনেক নারী বিশ্বাস করেন, নারী হওয়ার কারণে কমলা হ্যারিস পরাজিত হয়েছেন। ভোটারদের একটি অংশ, বিশেষ করে রক্ষণশীল পুরুষরা একজন নারীকে যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে কল্পনাও করতে পারছেন না।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, কমলা হ্যারিস দ্বিতীয় নারী হিসেবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার পর অনেকে ভাবছিলেন, এবার বুঝি গ্লাস সিলিং ভেঙে যাবে। কিন্তু তা হলো না। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের পুরো সময়টাই পুরুষদের দ্বারা শাসিত হয়েছে।  

ডেমোক্র্যাট সমর্থক স্বতন্ত্র ভোটার নিকোল সেলর বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, আমি আতঙ্কিত। এর কারণ, আমি এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে ৫১ শতাংশ মানুষ এমন একজনকে ভোট দিয়েছে যিনি ধর্মান্ধ এবং অসামাজিক। আমি আতঙ্কিত, দেশের অর্ধেক ভোটারই মনে করেন, তার এই আচরণ ঠিকই আছে।’

কমলার সমর্থক অনেক নারীর মনে দুঃখ ও বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে। তারা ভাবছেন, আমেরিকানরা আসলে আবারও একজন নারীকে হোয়াইট হাউসে পাঠানোর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor