Bangladesh

নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিচারে রাতেও চলছে আদালত

রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা ইকবাল গত ১০ বছরের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন আদালতের বারান্দায়। তবে, ছুটির দিন ছাড়া গত কয়েক মাসের প্রায় প্রতিটি দিনই তার কেটেছে আদালতে।

গোলাম আক্তার ইকবাল গত ২৮ আগস্ট যখন ঢাকার একটি আদালত থেকে শুনানি শেষে বেরিয়ে আসেন, তখন তাকে বেশ বিমর্ষ লাগছিল। তার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ সারাদিন কেটেছে তার।

তার এক আইনজীবী জানান, পরিপূর্ণ আদালত কক্ষে কার্যক্রম শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায় এবং চলে বিকেল প্রায় পৌনে ৪টা পর্যন্ত। এরপর প্রায় ১৫ মিনিটের বিরতির পর আবারও শুনানি শুরু হয় ৪টায়। সেদিনের শুনানি শেষ হয় রাত ৮টায়। অথচ, আদালতের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। অর্থাৎ, অফিস সময়ের বাইরেও অন্তত তিন ঘণ্টা চলেছে আদালতের কার্যক্রম।

৭১ বছর বয়সী ইকবালের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রস্টেটের সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি চোখে কম দেখেন।

ওয়ার্ড বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা আছে। অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা এসব মামলায় নিয়মিত তাকে শুনানির জন্য আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা ইকবাল গত ১০ বছরের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন আদালতের বারান্দায়। তবে, ছুটির দিন ছাড়া গত কয়েক মাসের প্রায় প্রতিটি দিনই তার কেটেছে আদালতে।

আগে মামলার শুনানির তারিখ কয়েক মাসের ব্যবধানে ফেলা হতো। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে খুব কমই উপস্থিত হতেন। শুনানির একটি তারিখ থেকে আরেকটি তারিখের এই ব্যবধান এখন কমে এসেছে। কারণ, ইকবালের মামলার মতো পুরোনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারি নির্দেশের পর বিচার এখন দ্রুত এগোচ্ছে।

চলতি বছরের ২৮ আগস্ট থেকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে এমন সাতটি বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে, যেগুলোর কার্যক্রম রাতেও হয়েছে এবং এসব মামলার প্রতিটির সঙ্গেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়িত।

উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় গত ২৮ আগস্টের মামলার বিচার কার্যক্রমকে। ওই দিন আদালত দুই ধাপে ১৬ সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন, যাদের সবাই পুলিশ সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মামলার এক আইনজীবী জানান, ইকবালের বিরুদ্ধে একটি মামলার শুনানি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এবং আরেকটি মামলার শুনানি বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে।

ওই আইনজীবী বলেন, ‘আদালত অফিস সময়ের মধ্যে মাত্র তিন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করতে পেরেছেন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বাকি সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আরেকটি তারিখ চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করি। কিন্তু আদালত শুনানি চালিয়ে গেছেন।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্তত ৭০০ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে ঢাকার আদালতে প্র্যাকটিস করছি। এই দীর্ঘ কর্মজীবনে কখনো রাতে বিচার কার্যক্রম দেখিনি।’

বংশাল থানায় দায়ের করা এক মামলায় ইকবালের সর্বশেষ ছয়টি ও আরেকটি মামলার পাঁচটি শুনানির আদালতের রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে ।

রেকর্ডগুলো থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের পর থেকে তার মামলায় শুনানির তারিখগুলোর মধ্যে ব্যবধান লক্ষণীয়ভাবে কমে এসেছে। এমনকি গত জুলাইয়ের পর থেকে কয়েক দিনের ব্যবধানেও শুনানির তারিখ পড়েছে।

একটি মামলায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ তার সর্বশেষ ছয়টি শুনানি হয় গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি, ২২ মে, ২৩ আগস্ট, ২৮ আগস্ট ও ১৩ সেপ্টেম্বর।

একই আদালত গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল, ১১ জুন, ২৮ আগস্ট ও ১৯ সেপ্টেম্বর অপর মামলার শুনানি করেন।

রাতে আদালতের কার্যক্রম চালানোর বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগরের সরকারি কৌসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘এটা হয়তো দু-একবার হয়েছে। কিন্তু আদালতে যখন এত বেশি সংখ্যক সাক্ষী উপস্থিত থাকেন, তখন নিয়ম না ভেঙে তো উপায় থাকে না।’

শেষ করার তাড়া

গত ১০ অক্টোবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্বীকার করেছেন যে সরকার পুরোনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছে প্রসিকিউশনকে।

তিনি বলেন, ‘আদালতে প্রচুর মামলা জট তৈরি হয়েছে। তাই আমি পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসকে বলেছি, পুরোনো মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিতে।’

তার ভাষ্য, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার আলাদা কোনো আদেশ দেয়নি।

তবে, এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে তাদেরকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা গত ২৮ আগস্ট ওয়ার্ড বিএনপি নেতা গোলাম আক্তার ইকবালের বিচার কার্যক্রমের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং তার জুনিয়র কর্মকর্তারা ‘সঠিকভাবে’ তাদের জবানবন্দি দিচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করেছেন।

প্রায় এক দশক আগে বিএনপির শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নামে দায়ের করা প্রায় ২৫০টি মামলা যে গতিতে এগিয়ে চলছে তাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এসব মামলার বিচার কাজ শেষ করার তাগিদ আছে।

এসব নেতাদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী। বিচারে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এর মধ্যে কয়েকটি মামলার একাধিক আইনজীবী বলেছেন, ঢাকার বেশ কয়েকটি আদালত আদালতের সময়ের বাইরেও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করছেন।

গত ১৮ অক্টোবরেও রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১৪। এ ছাড়া, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৬ রাত ৮টা ও অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এসব আদালতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বলে মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রফিকুল আলম মজনুর আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী জানান, পল্টন থানা পুলিশের দায়ের করা এক মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১৪ রাষ্ট্রপক্ষের ১১ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। দুপুর ১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

বিকেল ৫টার পর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আদিলের আইনজীবী আবেদন করেন পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ দিতে। তবে, আদালত তার আবেদন বাতিল করেন এবং এরপর আরও পাঁচ সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মামলার এক আইনজীবী জানান, তিনি সুস্থ বোধ করছেন না জানানোর পরও আদালত পরবর্তী তারিখ দেওয়ার আবেদন বাতিল করে বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যান।

বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি প্রমাণ করে যে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তাদের নেতাকর্মীদের আদালতে ব্যস্ত রাখছে, এমনকি রাতের বেলায়ও।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের নামেও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা আছে। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভাঙচুরের অভিযোগে তাকে ও আরও ১৭ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।

তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ‘এত বছর একটিও শুনানি হয়নি। কারণ, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা আদালতে হাজির হননি। এই সাক্ষীদের সবাই পুলিশ সদস্য।’

একাধিক শুনানিতে সাক্ষীরা উপস্থিত না হলে আদালত প্রথমে দুইবার সমন পাঠান, তারপরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন (আদালত সাক্ষীদের নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিতে পারেন)। তাতেও কাজ না হলে আদালত প্রথমে পুলিশ কমিশনারের কাছে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠান, তারপরে পুলিশ প্রধান এবং অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেন সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে।

তিনি আরও বলেন, ‘হাবিবের মামলায় এসব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত বছর রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি।’

হঠাৎ করেই গত ১৭ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের সাত সাক্ষী অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ এসে সাক্ষ্য দেন।

জয়নুল বলেন, ‘বিকাল ৪টার দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে।’

গত ৯ অক্টোবর এই মামলায় হাবিবসহ আরও কয়েক বিএনপি নেতাকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কয়েক ডজন মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মীর আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, প্রায় এক দশক পর হঠাৎ করেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

গত ২৪ জুলাই ও ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা—সবাই পুলিশ কর্মকর্তা—দুইটি মামলায় প্রথমবারের মতো সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দুইটি আদালতে হাজির হন। ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে এই মামলা দুইটি ২০১৩ সালে দায়ের করে পল্টন থানা পুলিশ।

আবু বকর সিদ্দিক জানান, প্রথম মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১৩-তে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রায় আট ঘণ্টা বিচার কার্যক্রম চলে। আদালত জামায়াত নেতা আল আমিন ও নুরুল আলমসহ ১৩ আসামির উপস্থিতিতে সাত সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

একই ঘটনায় ওই ১৩ আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক মামলায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ রাত ৯টা পর্যন্ত নয় পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

আবু বকর সিদ্দিকের ভাষ্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবের মামলার মতো বারবার সমন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সত্ত্বেও গত এক দশকে রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষীও আদালতে আসেননি।

‘শাস্তি দিতে মরিয়া’

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘মাঠ খালি করতে’ তাদের নেতাকর্মীদের কারারুদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে।

তারা বলছেন, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে, যেন তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে না পারেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে আদালতকে ব্যবহার করে আমাদের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হাজারো বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘গায়েবি মামলা’ করছে।

বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের নামে মোট কতগুলো মামলা আছে তার কোনো অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে, বিএনপির মামলা তথ্য সংরক্ষণ সেলের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩টি মামলা হয়েছে।

তবে, বিএনপির তথ্য সঠিক হলে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে প্রতি বছর ১০ হাজার বা প্রতিদিন ২৭টি মামলা হয়েছে।

বিএনপির মামলা তথ্য সংরক্ষণ সেলের তথ্য বলছে, শুধু ঢাকা বিভাগেই ওই সময়ের মধ্যে ছয় লাখ ১৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১৫ হাজার ৭৯টি মামলা হয়েছে।

ঢাকার বেশ কয়েকটি আদালতে প্রায় ৩০টি মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব মামলার রায় দেওয়া হতে পারে। আরও অন্তত ২২০টি মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে।

যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দায়ের করা এই ২৫০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয়, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গত আট মাসে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৯৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫৯ জন ঢাকার। তাদের মধ্যে আছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুর রহমান ও ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবদলের আহ্বায়ক শরিফউদ্দিন জুয়েল।

দুর্নীতি মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ইতোমধ্যে কারাগারে আছেন। অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, এমন শত শত বিএনপি নেতাকর্মী আছেন, যাদের একেকজনের নামে ৫০টিরও বেশি মামলা আছে। এই নেতাকর্মীদের মামলার বিচার কাজে গতি বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তিন থেকে চারটি মামলার শুনানির জন্য তাদের আদালতে আসতে হয়।

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী রবিন তাদেরই একজন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রবিন আদালতে হাজিরা দিতে দিতে চাকরিটাও হারিয়েছেন। মোট ৬২টি মামলায় প্রায় প্রতিদিনই তাকে আদালতে হাজির হতে হয়।

তিনি বলেন, ‘ভাই, প্রত্যেক দিন আদালতে আসতে আসতে আমি ক্লান্ত। এইভাবে অত্যাচার না করে বরং ফাঁসি দিয়ে দেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto