Hot

নিত্যপণ্যের : বাজারসরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ কারসাজি, সিন্ডিকেট দমন

ডলারের লম্ফঝম্প, বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে ওঠানামা, আমদানি সংকট, চাঁদাবাজিসহ নানা যুক্তি দাঁড় করিয়ে নিত্যপণ্যের বাজার ‘গরম’ রাখছে অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট। সবসময় দাম বাড়ার পেছনে কুশীলব হিসেবে তারা থাকে পুরোভাগে। নানা সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসে পণ্যের দর কারসাজিতে সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার তথ্য। তবে প্রভাবশালী চক্র হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া আলোচনাতেই থেমে যায় বাজার নিয়ন্ত্রণের তোড়জোড়। 

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে প্রায় সব পণ্যের দর হয়েছে কয়েক গুণ। এ পরিস্থিতিতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে লাগাম টানতে দর বেঁধে দেওয়া, অভিযান, জরিমানাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কারসাজি চক্রকে দমানো যায়নি। সিন্ডিকেটের সামনে কখনও খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীকেই অসহায় বোধ করতে হয়েছে। এখন সরকারেরই কোনো কোনো মন্ত্রী বলছেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ করা জরুরি।

এ পটভূমিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজার নিয়ন্ত্রণে নিজেই এগিয়ে এসেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকও ডাকা হয়েছিল। তবে আজ একই সময়ে সংসদ অধিবেশন থাকায় তা পরে স্থগিত করা হয়। 

এদিকে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারপ্রধান ভূমিকা নিচ্ছেন– এটা ইতিবাচক। তবে জনবান্ধব নীতি প্রণয়ন না করলে কিংবা অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না হলে বাজার অনিয়ন্ত্রিতই থেকে যাবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে। 

মহামারি করোনা ও বৈশ্বিক যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। তবে এখন বিশ্ববাজারে দর কমলেও তার সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত ডিসেম্বরেও সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বাড়লে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। তাতে তাদের খরচের বোঝা বাড়তে থাকে, কমে যায় ক্রয়ক্ষমতা। অনেকের সংসারের চাকা ঘোরাতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ভাঙতে হয় সঞ্চয়। 

খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলে দিচ্ছে, কতটা বাড়তি দরে মানুষকে নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রধান দুই খাদ্যশস্য চালের দর প্রায় ২ ও আটার দর ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া সয়াবিন তেলের দর আড়াই শতাংশ ও ডিমের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে বেশির ভাগ পণ্যের দর বেড়েছে। এ সময় পামঅয়েলের দর প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ, চিনি ২০, পেঁয়াজ ১৬৪, রসুনের ৬৭ শতাংশ দর বেড়েছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই, যেটির দাম বাড়েনি।  

বাজার নিয়ন্ত্রণে এক রকম ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় গেল বছর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংসদে বেশ তোপের মুখে পড়েছিলেন। এমনকি গত বছর ২৬ জুন বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিও করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। ওই সময় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে বেশি ব্যবসা করে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তাদেরকে হয়তো জেল-জরিমানা করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ যে ক্রাইসিস তৈরি হবে, সেটা সইতে ভোক্তাদের কষ্ট হবে।’ 

তবে বাজারে নিত্যপণ্যের চাপে এখন মন্ত্রীরাও মুখ খুলছেন। পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবিও তুলেছেন কেউ কেউ। গত মঙ্গলবার সংসদে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিজ এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘সিলেটে কিছু সন্ত্রাসী প্রতি রাতে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নেয়। নিত্যপণ্য যেমন শাকসবজি, চিনি ইত্যাদি পরিবহনে আসা প্রতি ট্রাক থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। চাঁদা না দিলে ট্রাক ছিনতাই করে। চাঁদাবাজি বন্ধ এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা টাকা বাজেয়াপ্ত করতে হবে।’ 

বাজারে প্রভাব বিস্তারকারীদের আইনের আওতায় আনাই মুখ্য বিষয় বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এক, পণ্য উৎপাদন, মজুত ও চাহিদার যথাযথ তথ্য সরবরাহ ও বিশ্লেষণ। দুই, চাহিদা অনুযায়ী জোগান ঠিক আছে কিনা। ঘাটতি থাকলে সেটি কীভাবে পূরণ করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া। তিন, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে যাদের হাত থাকে; দক্ষ ও যোগ্য লোক দিয়ে তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা। সেই সঙ্গে প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে, তারা প্রভাবশালী হলেও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

বাজারে অভিযান, জরিমানা আর দর বেঁধে দেওয়া– এগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার নয় বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তাঁর মতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হাঁকডাক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তারা শুধু মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে পারে। বাজারের লাগাম টানার মূল অস্ত্র অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। কারণ দাম সহনীয় রাখতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। আর এ ভূমিকা রাখতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, সরকার ব্যবসাবান্ধব হলে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙবে কীভাবে? কারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, তা সরকারের সংস্থাগুলো জানে। এ চক্র ভাঙতে হলে সরকারকে প্রত্যক্ষভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে হতে হবে জনবান্ধব। আর জনবান্ধব তখনই হবে, যখন জনস্বার্থে মুদ্রানীতি, জ্বালানিনীতি, ব্যবসানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির ব্যবসায় বর্তমানে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। এ দুই ব্যবসায় সত্যিকারে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে, কয়টি বন্ধ রয়েছে, কীভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি কেন চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, উৎপাদন কতটুকু হয়েছে, সে ব্যাপারে চাল উৎপাদনকারী এলাকা থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আলুর বাজারের অস্থিরতার কারণ অনুসন্ধানে ৪২ জেলা থেকে উৎপাদন ও মজুতের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কাজ চলছে পেঁয়াজের বাজার নিয়েও। প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী  বলেন, অসম প্রতিযোগিতার অভিযোগ উঠলে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা ও আর্থিক জরিমানার বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d