Hot

নিত্যপণ্যে ভয় ধরাচ্ছে ডলার

রমজানের আগেই নতুন করে ডলারের দর বৃদ্ধি আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করছে। এখন আমদানিকারকদের বাড়তি দরেই এলসি বা ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য আমদানির এলসি খোলাও খুব একটা বাড়েনি, বরং তথ্য বলছে নভেম্বর পর্যন্ত এলসি খোলা কমেছে। ফলে রমজান ঘিরে ভোক্তার ঘাড়ে বাড়তি দামের বোঝা আরো ভারী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট ও ছোলার সরবরাহ জটিলতাই ভোক্তার মনে ভয় ধরাচ্ছে বেশি। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকা ও শুল্কছাড়ের কারণে দাম খুব একটা না বাড়ার ব্যাপারে আশার বাণী শোনালেও আশ্বস্ত হতে পারছে না ভোক্তারা। তথ্য-উপাত্ত, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

রমজান উপলক্ষে দেশে সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করে পণ্যের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকে।

এ সময়ে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্য তেলসহ নানা পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। ভোক্তার বাড়তি চাহিদার জোগান দিতে রোজার তিন থেকে চার মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবারের রমজানের আগে পণ্য আমদানির এলসি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত নভেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভোগ্য পণ্য আমদানি কমেছে।

জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৫৭ কোটি ডলারের ভোগ্য পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। অন্যদিকে ভোগ্য পণ্য আমদানি নিষ্পত্তি কমেছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। কারণ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৪০ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হলেও আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২৬৫ কোটি ডলার।

এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর বাড়িয়েছে। এখন রমজানের পণ্যের এলসি খোলার চূড়ান্ত সময়। তাই বাড়তি ডলারের চাপে আমদানি করা পণ্যের পেছনে খরচ বাড়বে। এ সময়ে বেশি দরে ডলার কিনে এলসি করার কারণে আমদানি কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১১০ টাকা। গত ৮ মে মাসে ছিল ১১৭ টাকা, সেটি বেড়ে সর্বশেষ হয়েছে ১২২ টাকা। এ ছাড়া খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে ১২৬-১২৭ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা অবশ্য রমজান ঘিরে পণ্যের ব্যাপক আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তাঁদের আশা, পণ্যের দাম খুব একটা বাড়বে না। তবে তাঁরা আশার বাণী শোনালেও প্রতিবছরই এমন কথা শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে ঠিক বাজারে পণ্যের দাম লাগামহীন বাড়ে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশ থেকে এবার ১৫ হাজার কোটি টাকার ভোগ্য পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আসছে এসব পণ্য। সরকারি উদ্যোগে আসছে চিনি, ছোলা, সয়াবিন তেল, চাল ও গমের মতো পাঁচ পণ্য। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের ‘সাপ্লাই চেইন’ স্বাভাবিক রাখতে ১৫ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোগে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে। এতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে রোজায় আমদানীকৃত ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর।

জানা যায়, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে রমজানে সয়াবিন তেল নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কারণ সরকার ভোজ্য তেল আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরও সয়াবিন তেল লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়েছে। তার পরও ঠিকমতো বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না কম্পানিগুলো। এতে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। 

এ ব্যাপারে আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানি পর্যাপ্ত হচ্ছে, এতে রমজানে ফল ও খেজুরের কোনো ঘাটতি থাকবে না। এরই মধ্যে রমজানে খেজুর ও ফলের চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলসি সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকিটুকু এলসির প্রস্তুতি চলছে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে যে হারে পণ্যের দাম কমার কথা ছিল, সেই হারে কমবে না। কারণ গত বছর আমরা ডলার কিনেছি ৯৫ টাকায়, এখন সেটি কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৩০ টাকায়। তার পরও গত বছরের তুলনায় খেজুরের দাম কিছুটা কমবে।’

সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই খেজুরের চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন।’

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাল ও ছোলা আমদানি বেশি হচ্ছে। তবে এবার বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বৃদ্ধি ও ডলারের বাড়তি দরের কারণে দেশের বাজারে ছোলার দাম বেশি। গত বছর পাইকারিতে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে ছোলা বিক্রি করেছি, এ বছর ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা কেজিতে ছোলা বিক্রি করতে হচ্ছে। সাধারণত দাম বেশি থাকলে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে যায়, তাই আমরা আশা করছি এ বছর ছোলার চাহিদা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম থাকবে।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার-সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘রমজানে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ব্যাংকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যাপকহারে এলসি খোলা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের সব ধরনের পণ্য ব্যাপকভাবে আমদানি করা হচ্ছে। তাই এবারের রমজানে কম থাকবে সবকিছুর দাম। সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় দামও কমছে বেশ। কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা ও ডালের দাম কমেছে। অন্যান্য পণ্যের দামও কমতির দিকে।’

বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আসন্ন রমজান ও ঈদ সামনে রেখে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রমজানে সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় বাজার স্থিতিশীল ও নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে।’

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজান মাস উপলক্ষে টিসিবির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর, ছোলা, চিনি, সয়াবিন তেল ও ডাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হবে সারা দেশে। ফ্যামিলি কার্ডের পাশাপাশি টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রমেও এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।’ 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে সারা বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে চার লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে তিন লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারা বছর যেখানে পাঁচ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার পাঁচ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘সামনেই রমজান আসছে। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারমূল্যের দিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর রাখবেন। শুধু বাজারমূল্য নয়, জিনিসপত্র আনা-নেওয়া আরো কিভাবে সহজ করা যায়, সে বিষয়েও কাজ করবেন।’

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে যতটুকু করা সম্ভব ছিল সরকার শুল্কছাড় দিয়েছে। যাতে করে রমজানে সবচেয়ে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর দাম কমে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি খুলতে সমস্যা—এ কারণে হয়তো যতটা স্বস্তি আমরা আশা করেছিলাম, ততটা স্বস্তি হয়তো খুচরা পর্যায়ে পড়বে না। তবে পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি হবে না। তাতে করে রমজানে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজানের পণ্যগুলোর ওপর যে হারে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেই হিসাবে ডলারের দাম এত বাড়েনি। এখন ডলারের জোগানও বেড়েছে। বিশ্ববাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তাই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বাজারে পরার কথা নয়।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot