Hot

নিবন্ধন স্থগিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসি। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানান। এর আগে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গতকাল বিকালে সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধনপ্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন। গত চারটি নির্বাচনে ৫৫টি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। দেশের প্রাচীনতম দলটির নিবন্ধন নাম্বার ৬, প্রতীক নৌকা। নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে দলটির ভোটে অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেল। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ ছয়টি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে।

কমিশন সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও রহমানেল মাসউদ উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, আইন শাখার যুগ্ম সচিব ফারুক আহমেদসহ কর্মকর্তারা আইনি দিকগুলো তুলে ধরেন।

নির্বাচনি আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯০(জ) অনুচ্ছেদ দফা ১(খ) অনুযায়ী সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। আওয়ামী লীগ এর আগে নিবন্ধনশর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

অভ্যুত্থান দমাতে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সদ্য সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। দলটিকে এখন জুলাই আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সেজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন আসায় এখন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়েও সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ-২০২৫ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়, যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসআরও নম্বর ১৩৭-আইন/২০২৫, তারিখ ১২ মে ২০২৫ মূলে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন (নম্বর-০০৬ তারিখ : ০৩/১১/২০০৮) এতদ্বারা স্থগিত করল। গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন হয়ে গেছে। অধ্যাদেশ অনুসারে বিষয়টি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখিত অপরাধগুলোর অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন।

এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক গণ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল আয়োজন, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং ভিনদেশে পলাতক তাদের নেত্রীসহ অন্য নেতা-কর্মী কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান, ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে, বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কথা উল্লেখ করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকার যুক্তিসংগতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d