Hot

নিম্নমানের বই ছাপা ২৫৫ কোটি টাকা লুটে ৪৬ প্রতিষ্ঠান

নানা চেষ্টা থাকলেও নিম্নমানের পাঠ্য বই সরবরাহকারীদের চক্র থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। চলতি শিক্ষা বছরেও অন্তত ৩৩ শতাংশ নিম্নমানের বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। আর বইয়ের মান কমিয়ে অন্তত ২৫৫ কোটি টাকা লোপাট করেছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠান। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্টদের তদন্তে এসব অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রাপ্ত হিসাবে দেখা যায়, ৪০ কোটি পাঠ্য বইয়ের মধ্যে ১৩ কোটি পাঠ্য বই নিম্নমানের। যার মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলের পুরনো সিন্ডিকেটের দখলেই রয়েছে পাঠ্য বই ছাপানোর কাজ। আগামী শিক্ষাবর্ষে এসব সংকট কাটিয়ে ওঠার কথা বলছে পাঠ্য বই ছাপানোর তদারকির দায়িত্বে থাকা এনসিটিবি। কিন্তু কতোটুকু লক্ষ্য অর্জন করা যাবে এনিয়ে রয়েছে সংশয়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এনসিটিবি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে বিনামূল্যে বই ছাপাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে, যা নিয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে শেষ মুহূর্তে পাঠ্য বই ছাপানোর কাজ শুরু করার কারণে না চাইলেও অনেক বিষয়ে ছাড় দিতে হয় এনসিটিবিকে। এবার সময়মতোই ছাপানোর কাজ শুরু করেছে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি’র আওতায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার। প্রায় এক থেকে দেড় মাস এগিয়ে এনে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই আহ্বান করা হয় দরপত্র। যা পর্যাক্রমে চলবে জুলাই পর্যন্ত। অতিরিক্ত না ছাপাতে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ করেছে এনসিটিবি। আগামী বছরের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি পাঠ্য বই ছাপানো হবে। সঠিক চাহিদা বিশ্লেষণ করে এবার প্রায় ৭ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে। এতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি ছাপাতেও কম সময় লাগবে। এবার ছাপাখানাগুলোর সক্ষমতার ৮০ শতাংশ কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেশ কিছু নতুন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেমন, ছাপাখানাগুলোর থাকতে হবে অন্তত দুটি ওয়েব মেশিন, জমা দিতে হবে পেপার মিলের সঙ্গে চুক্তির কাগজ, থাকতে হবে অটো-বাইন্ডিং সক্ষমতা। এ ছাড়াও ছাপাখানায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও টয়লেট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি বছরের পাঠ্য বইয়ের জন্য ৩২টি টিম গঠন করা হয়। এই টিমগুলো ৬৪ জেলায় মাঠপর্যায়ে কাজ করে। তারা দৈবচয়নের মাধ্যমে প্রতিটি জেলার একটি উপজেলা থেকে বই সংগ্রহ করে। ৪৭টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত পাঠ্য বইয়ের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বই নিম্নমানের বলে তথ্য উঠে আসে। হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইনস্পেকশন সার্ভিস নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঠ্য বই ছাপার পরের মান যাচাইয়ের জন্য নিয়োগ দেয় এনসিটিবি। তাদের ল্যাব টেস্টে ধরা পড়ে ২০ শতাংশ পাঠ্য বই নিম্নমানের।
তথ্যানুযায়ী, অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সে ছাপা ইবতেদায়ি ৩য় শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি নিম্নমানের। দরপত্রের নির্ধারিত মান অনুযায়ী কাগজের মান ৮০ জিএসএমের পরিবর্তে এতে ৭৩ জিএসএম ব্যবহার করা হয়েছে। রেদওয়ানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সে ছাপা ভোকেশনাল ৯ম শ্রেণির জেনারেল মেকানিক্স বইয়ে ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৬৫ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। অনুপম প্রিন্টার্স মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির রসায়ন বইয়ে ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে মাত্র ৬১ জিএসএম কাগজ দিয়ে ছেপেছে। শাফিন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স মাধ্যমিক ভোকেশনাল ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের মান ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে অতি নিম্নমানের ৫৯ জিএসএম কাগজ দিয়ে ছেপেছে, সুবর্ণা প্রিন্টার্স মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৫৫ জিএসএম কাগজ দিয়ে সরবরাহ করে, অ্যারিস্টোক্র্যাটস সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণির আকাইদ বইয়ে নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে ৫৬ জিএসএস কাগজ ব্যবহার করে, লেটার এন কালার লি. ইবতেদায়ি ১ম, ২য় ও ৪র্থ শ্রেণির বইয়ের নির্ধারিত মান ৮০ জিএসএম পরিবর্তে ৭০ জিএসএম কাগজ দিয়ে ছাপে, বর্ণমালা প্রেস মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে ৫৮ জিএসএম কাগজ দিয়ে ছাপে। ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস দাখিল নবম শ্রেণির গণিত বইয়ে নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে ৬৩ জিএসএম এর কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশি রান্না
এতে আরও দেখা যায়, বর্ণমালার নবম শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ে নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে ৬০ জিএসএম কাগজ ব্যবহার, দোয়েল প্রিন্টার্স দাখিল ১০ম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বইয়ে নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে সাড়ে ৬৫ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করে। দ্য গুডলাক প্রকাশনী ইবতেদায়ি ৪র্থ শ্রেণির কোরআন মজিদ ও তাজভিদ শিক্ষা বইয়ে নির্ধারিত মান ৮০ জিএসএম পরিবর্তে ৭১ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করে। 

আল-হামরা প্রকাশনীর প্রকাশক খান মুহাম্মদ মুরসালীন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলেও স্বৈরাচর আমলের ভূত এখনো বলবৎ আছে। প্রকাশনা শিল্পে এর প্রভাব আরও বেশি। পূর্বের সিন্ডিকেটটা বহাল তবিয়তে। গত বছরের জরুরিভিত্তিতে বইগুলো ছাপানো হয় সেটাও তাদের তত্ত্বাবধায়নে। অন্তত ৩০ শতাংশ পাঠ্য বই নিম্নমানের গেছে। এ বছরও একইভাবে টেন্ডার করা হচ্ছে। একই ব্যক্তিরা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা আশঙ্কা করি এবারো একই পরিমাণ পাঠ্য বই নিম্নমানের যাবে। তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসাটা জরুরি। প্রয়োজনে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। 

এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, মানহীন পাঠ্য বই ছাপানোর কারণে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা দরপত্রের মান ঠিক রেখে আবার শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই রিপ্লেস করবে। যদি তারা না পারে তবে তাদের অর্থদণ্ড করা হবে। এরপরও সুরাহা না হলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto