Bangladesh

নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বাজারের ফল: খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি

হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে খুচরা ফল বিক্রেতা সিন্ডিকেট। পাইকারি আড়ত থেকে কম মূল্যে ফল কিনলেও খুচরা পর্যায়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে।

তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারা বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। এছাড়া খুব প্রয়োজনে খরচ সমন্বয় করতে একটি-দুটি করে ফল ওজন দিয়ে কিনছেন। ফলে একদিকে ভোক্তার পকেট কাটা যাচ্ছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার ফল কিনতে পারছে না।

এদিকে দেশে ডলার সংকট হওয়ায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ফল আমদানিতে ঋণ সুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই কেউ যদি ফল আমদানি করতে চায়, তাহলে যে পরিমাণে ফল আমদানি করবে ওই পরিমাণ নগদ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীকে।

এতে বছরের তুলনায় বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। আমদানি কমায় দামও বেড়েছে। আর এই অজুহাত দেখিয়ে খুচরা বিক্রেতা সিন্ডিকেট সব ধরনের ফলের দাম পাইকারির তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছে। রাজধানীর বাদামতলীতে পাইকারি ফলের আড়ত ঘুরে ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রতি কেজি লাল আপেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ২৮০-৩৭০ টাকা। পাশাপাশি আড়তে প্রতি কেজি সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, যা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।

পাইকারি পর্যায়ে লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, খুচরায় এই আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪২০ টাকা। প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রেতারা ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি করছে। আড়তে আকার ভেদে প্রতি কেজি আনার বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা, যা খুচরা বাজারে ৩০০-৪০০ টাকা।

পাশাপাশি আড়ত পর্যায়ে প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, যা ক্রেতার ৭০-৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি আমড়া পাইকারি পর্যায় থেকে ৩০-৩৫ টাকায় এনে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৬০-৭০ টাকা। আনারস প্রতি পিস আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। যা বাজারে প্রতি পিস ৭০-১০০ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। আর প্রতি পিস ডাব আড়তে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও রাজধানীর খুচরা বাজার কিংবা এলাকার গলিতে ভ্যানে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রোববার নয়াপল্টনে ফলের দোকানে ফল কিনতে আসেন মো. আবু নোমান। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, এক সময় সপ্তাহে দুই দিন পরিবারের জন্য ফল কিনে বাড়ি ফিরতাম। অসহনীয় দামের কারণে এখন আর কেনা হয় না। নিত্যপণ্য মূল্যসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বেড়েছে। তাই খুব দরকারে একটি-দুটি করে ফল নিয়ে ওজন মেপে যে টাকা হয় সেভাবে ফল কিনতে হচ্ছে।

দোকানি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা আপেলের দাম চাচ্ছে। তাই দুটি আপেল কিনেছেন। এখন দুটি মাল্টা ওজন দিচ্ছি। ওজনে যে দাম হবে সেটা দিতে হবে। তিনি জানান, ফলের কোনো সংকট নেই। তারপরও বিক্রেতারা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তারা বলছে যে ফলের যে দাম চাওয়া হচ্ছে সেই দামেই কিনতে হবে। তা না হয় চলে যান।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিদেশি ফলকে ‘বিলাসপণ্য’ দেখিয়ে অতিরিক্ত এলসি মার্জিন ও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে গত বছর ঠিক একই সময়ের তুলনায় সব ধরনের ফলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট অতি মুনাফার লোভে দাম আরও বাড়াচ্ছে। কারণ পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিগগিরই ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি সূত্র জানায়, সরকার ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের পর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে গত অর্থবছর থেকে ফল আমদানি কমতে থাকে। এ ছাড়া ডলারের বাড়তি দামের কারণেও ফলের দাম বেশি।

যে কারণে আমদানি ও পাইকারি পর্যায়ে ফলের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে দেখা গেছে, আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা কম দামে ফল নিলেও খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। এ সিন্ডিকেট না ভাঙলে ক্রেতারা রোজায় ফল কিনতে স্বস্তি পাবে না। তাই তদারকি করা প্রয়োজন।

রামপুরা বাজারের ফল বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দরে ফল আনি, কিছু লাভে তা বিক্রি করি। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। পাইকারি পর্যায় থেকে ফল আনতে কিছু ফল নষ্ট হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হয়।

জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে নিয়ম অনুযায়ী বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। একই সময় বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ফলের বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। অনিয়ম পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে ডলার সংকট শুরু হলে গত বছর এপ্রিল মাসে ফলসহ অন্যান্য বিলাসী পণ্যে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর একই বছরে ১০ মে ফল আমদানিতে ৫০ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করা হয়। এতেও ডলার সাশ্রয় না হওয়ায় ৪ জুলাই ফল আমদানিতে ১০০ ভাগ এলসি মার্জিন আরোপ করা হয়।

এছাড়া এনবিআরের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে বিদেশি ফল এসেছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বিদেশি ফল আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। অর্থাৎ, সর্বশেষ অর্থবছরে দেশে ফল আমদানি কমেছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন বা ২৭.৬৩ শতাংশ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor