Hot

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার নেপথ্যে কী

এক মাসের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হালিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা 
পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। খোলা পামঅয়েল ও সুপার তেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। সাধারণের নাগালের বাইরে রয়েছে পিয়াজ ও রসুনের দাম। শাকসবজি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার থেকে কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছেন না বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অসৎ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের কারসাজির জন্যই মূলত পণ্যমূল্য বাড়ছে। পণ্যের দাম বাড়ার অন্য কোনো কারণ নেই। এটা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।

 তারা বলছেন, সরকার বদলালেও বাজারের দৃশ্যপট বদলায়নি। এখনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কব্জায় রয়েছে বাজার। আমরা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদাসীনতা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের কষ্ট কমেনি। 
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে পামঅয়েল সুপারের দাম লিটারে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রতিলিটার পামঅয়েলের দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সেটি এখন বেড়ে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল সরকার থেকে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলের পাশাপাশি আটার দামও বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। খোলা ময়দার দাম ৬০ টাকা। আর দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম ১১০ টাকা। আর গত মাসে আটার কেজি ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা। যদিও এই সময় বিশ্ববাজারে গমের দাম ছিল নিম্নমুখী। বিশ্বব্যাংকের পিঙ্কশিটের তথ্যমতে, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের টনপ্রতি দাম উঠে যায় ৩৮১ ডলারে। পরে তা কমতে থাকে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি গমের দাম ছিল ২৯৮ ডলার। আর চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে টনপ্রতি দাম কমে দাঁড়ায় ২৩৭ ডলার। জুলাইয়ে আরও ১৯ ডলার কমে হয় ২১৮। আর আগস্টে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি গমের দাম ছিল ২০৫ ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ গমের দাম ক্রমাগত কমেছে। দেশে আমদানি করা গম আসতে গড়ে দুই মাস সময় লাগে। সে হিসাবে আগস্টে বিশ্ববাজারে হ্রাস পাওয়া দামের প্রভাব অক্টোবরের শুরুতে বাজারে পড়ার কথা। কিন্তু বাজারে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। 

এদিকে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ডিমের বাজারে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে পণ্যটির দাম। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। এক মাস আগে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায়। যদিও সরকার ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে চালের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ থাকলেও দাম আগের মতোই চড়া। সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়- শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মুলা, ঢেঁড়স, বেগুন, পটোল, ঝিঙা, করলা, টমেটো, শসা, গাজরসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ৫০ টাকার নিচে প্রায় কোনো সবজিই মিলছে না। এ ছাড়া পিয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি আদা ৫০০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

ডিমের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে: ডিমের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে বহুজাতিক কোম্পানি এবং রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেছেন, সারা দেশে ডিমের বাজারে অস্থিরতা চলছে। যার প্রেক্ষিতে ডিম-মুরগির দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোনো প্রান্তিক খামারিকে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণের ওয়ার্কিং গ্রুপ কমিটিতে রাখেনি। তারা শুধু কর্পোরেট গ্রুপদের পরামর্শে দাম নির্ধারণ করেছে। যার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবার এর জন্য ফিড ও মুরগির বাচ্চার উৎপাদনকারী কোম্পানি, তাদের এসোসিয়েশন এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিসহ আরও অনেকের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে। তিনি বলেন, ডিম আর মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে ডিম-মুরগির উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে শিগগিরই বাজার সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

বাজার বিশ্লেষকরা যা বলছেন: নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অসৎ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের কারসাজির জন্যই মূলত পণ্যমূল্য বাড়ছে। এ বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রভাব নেই। বরং উল্টো জিনিসের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কথায় পরিবহন চাঁদাবাজি কমেছে। তাহলে সেই প্রভাব বাজারে নেই কেন? এ ছাড়া ২৯টি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও তার প্রভাবও বাজারে দেখা যাচ্ছে না। আগের কারবার এখনো চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না। ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করে জিনিসের দাম বাড়িয়ে থাকে। প্রতিযোগিতা কমিশন নামে থাকলেও কামে নেই। এ ছাড়া পুলিশ প্রটেকশন না পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না। এজন্য আগের মতোই নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। ভোক্তাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো যা বলছেন: তবে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর দাবি পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে তারা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচায় সুস্থ প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করতে ও অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সদস্য মো. হাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার থেকে আমাদের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পানির দাম বৃদ্ধির কারণে কিছুদিন আগেই আমরা একটি মামলা করেছি। এর প্রভাব বাজারে দেখা গিয়েছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের টিমও বাজারে কাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে পণ্যের মূল্য বাড়াতে হলে তার যৌক্তিক কারণ অবহিত করার নিয়ম রয়েছে ট্যারিফ কমিশনকে। কোম্পানির পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি সঠিক মনে না হলে কোনো কোম্পানি তার পণ্যের দাম বাড়াতে পারে না। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ট্যারিফ কমিশনকে অবহিত না করে বাড়ানো হচ্ছে নানা প্রকার আমদানি পণ্যের দাম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান মানবজমিনকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার আমাদের থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। কাজ চলছে। দ্রুতই আপনারা এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজার তদারকি সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ায়। এবার জিনিসের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা বন্যার অজুহাত দেখিয়েছে। তিনি বলেন, পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি এখনো বন্ধ হয়নি। তবে কিছুটা কমেছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা জিনিসের সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor