Bangladesh

নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা ও উপচানো কারাগার: বাংলাদেশের বিরোধী দল দমন-পীড়নের কবলে

বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে এখন আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণ ক্ষমতা প্রায় চার হাজার। এটি এখন ১৩হাজার ৬শ’রও বেশি বন্দী ধারণ করছে। গত দুই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১০হাজার বিরোধী নেতা, সমর্থক ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজার হাজার অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দী ইতিমধ্যে কয়েক মাস ধরে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে ডজন ডজন, সম্ভবত শত শত ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ জানুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ দল টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর উপর নির্মম দমন-পীড়ন চালিায়ে যাচ্ছে। বিএনপির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বিএনপি ও এর সদস্য সংগনগুলির ৫০ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে ১লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুব কম লোকই বিশ্বাস করছে যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি বলেছে যে, যতদিন হাসিনা দায়িত্বে থাকবেন, ততদিন তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

গত কয়েক মাস ধরে বিরোধীদের ওপর নিপিড়ন চললেও, হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশ সরকারী দমন-পীড়নকে আরও জোরদার করতে প্ররোচিত করেছে। সেদিন কয়েক হাজার বিএনপি সমর্থক রাস্তায় নেমে আসলে, হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুলিশের সাথে লাঠি, লোহার রড, ছুরি এবং অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সমাবেশে হামলা করতে দেখা গেছে। সেই সহিংসতায় একজন বিএনপি কর্মী, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সাংবাদিকসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। সমাবেশের আগের দিনগুলোতেও বিএনপির শতাধিক নেতাকে আটক করা হয়েছে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন যে, বিএনপিকে দমন করার জন্য কর্তৃপক্ষের পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‹পুলিশের প্রতিক্রিয়া, যা সহিংসতার সূত্রপাত করেছিল, মনে হচ্ছে সমাবেশের আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শুধু কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত করার জন্যই নয়, পুলিশের তৎপরতার সরাসরি সম্প্রচার ঠেকাতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে, বিএনপি নেতারা এবং সদস্যরা বলেছেন যে, হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে বাধা দেওয়ার জন্য তাদেরকে অনবরত নিপিড়ন করা হয়েছে। রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিটা বেয়েন্স বলেন, ‘ভিন্নমতালম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন কতটা চরম আকার ধারণ করেছে, গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা, কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের উর্ধ্বগামী সংখ্যাই তার একটা ভালো সূচক।’

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ ও নথিভুক্ত করা ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট’ এর মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পঙ্গু করে দেয়া, নির্যাতন, দুর্ব্যবহারসহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশে যখনই নির্বাচন হয়, তখনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভুয়া ফৌজদারি মামলায় নির্বিচারে আটক করা হয়।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য হাসিনাকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই সপ্তাহে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সহিংসতা পরিহার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। মার্কিন সরকার সম্প্রতি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার কারণে অজ্ঞাতনামা সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং গত মাসে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসিনাকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ তুলে হাসিনা বলেছেন, ‹বাইডেন কি ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করছেন? যেদিন তাদের সংলাপ হবে, আমিও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করব।’

২০১৮ সালের আগের নির্বাচনটি বিরোধীদের হয়রানি এবং ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এবং অগণতান্ত্রিক বলে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছিল। বেশিরভাগ লোকই এখন আশঙ্কা করছে যে, জানুয়ারিতেও অনুরূপ দৃশ্য উন্মোচিত হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, হাসিনার সরকার এখন বিচার বিভাগ ও পুলিশকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদেরকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্রে পরিণত করেছে। এই সপ্তাহে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে যে, একদল সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মী টহলরত পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সেøাগান দিচ্ছে, ‹এক এক করে বিএনপির লোকদের ধরো এবং তাদের সবাইকে জবাই করো।’

রাজনীতি বিশ্লেষক মোবাশ্বর হাসান বলেছেন যে, হাসিনার নিপীড়নমূলক পদ্ধতিগুলি কেবল বিএনপির গতি বাড়িয়েছে, যেটি অর্থনীতির অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল পর্যায়ের জনসমর্থন লাভ করেছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি শ্রমজীবি ও দরিদ্র কর্মীরা দলে দলে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির জনসভা সফলভাবে সাধারণ মানুষের নাড়িতে টোকা দিয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d