Bangladesh

নির্বাচনের চাপ বাড়ছেই

ইউনূস-তারেকের যৌথ ঘোষণার পরই দাতারা অর্থছাড় শুরু করেছে

এখন অপেক্ষা দিন-তারিখের সরকারের বিলাসী বিনিয়োগের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেনি
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর হাসিনা সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য অর্তনীতির উপর বেশি জোর দেয়া হয়। বিশেষ করে বিদেশে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ করা। কিন্তু অর্থনীতির সামান্য উন্নতি হলেও বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা আসেনি; বরং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেকটা হাত গুটিয়েই বসে থাকে। তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকারের জন্য মূলত অপেক্ষা করতে থাকে। অন্যদিকে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিকদের নজরও ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। ভেতরে ভেতরে তাদের চাপও ক্রমে বাড়তে থাকে। যা এখনো অব্যাহত আছে।

বিদেশি ক‚টনীতিকরা সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানা ও বোঝার চেষ্টা করেন নির্বাচনের ডেটলাইন সম্পর্কে। শুরু থেকেই সরকার নির্বাচনের আগে সংস্কারের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে সেদিকেই বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু তা কার্যত বিফলই হয়। বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও দাতারা মৌন চাপ হিসেবে সাহায্য, সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখায়। এক পর্যায়ে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী বছরের জুনের আগে নির্বাচন নয়। এ নিয়ে যখন পরিস্থিতি অনেটাই উত্তপ্ত তখন চলতি মাসের ১৩ তারিখে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক থেকে যৌথ ঘোষণা আসে- আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার পরই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। তবে ফেব্রæয়ারির কত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই ঘোষণা এখনো আসেনি। বিষেশজ্ঞদের ধারণা, সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ দাতাদের চাপ ক্রমে কমবে, সেই সাথে বাড়বে সাহায্য-সহযোগিতাও।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের সময় প্রকাশের পর দাতারা অর্থ ছাড় শুরু করেছে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে চেয়েছিল। নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় প্রকাশ পাওয়ার পর আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর বাজেট সহায়তার অর্থ ছাড় শুরু হয়েছে। গত বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। গত সোমবার আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড় করার অনুমোদন দেয়। এর আগে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার, এডিবি ৯০ কোটি ডলার এবং এআইআইবি ৪০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে, যা ৩০ জুনের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকাÐ ও সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন নির্বাচনের একটা সময় প্রকাশ পাওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন. তাদের (দাতাদের) চিন্তা ছিল ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচন হবে কি-না। আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেব্রæয়ারিতে হবে। আইএমএফের দৃষ্টিতে, অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকারের উপর আসলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী বা সংস্থাগুলো আস্থা রাখতে পারে না। তারাও অপেক্ষায় ছিল একটি নির্বাচন তারিখের ঘোষণা আসুক। ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসায় তারা এখন আস্থা ফিরে পেয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দেশে দ্রæত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ইতোমধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি ক‚টনীতিকরা হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকা সফরকালেও বাইডেন সরকারও একই কথা বলেছে। সর্বশেষ চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েডং বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে যত দ্রæত সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জানিয়েছেন চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংস্কারের উপর জোর দিলে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা সরকারের উপদেষ্টা বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎকালে সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানালেও নির্বাচনের প্রতি গুরুত্বরোপ করেছেন। বিশেষ করে আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ফ্রান্স, ইটালি, পাকিস্তান, রাশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্বরোপ করেন। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। একমাত্র তিনিই শুধু সংস্কারের প্রতি বেশি জোর দিয়েছেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্রæত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরবে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠকের আলোচনার বিষয় তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, সবার আগে নির্বাচন। এটা নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ফেব্রæয়ারি মাসে হতে যাচ্ছে এজন্য সবার একটা প্রস্তুতি আছে। সন্তুষ্টি আছে। তারা আশা করছেন, আমরা দ্রæত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ ফিরে যাবে। তারা তো সবাই অপেক্ষা করছেন একটি নির্বাচিত সরকারের উপর তাদের কর্মকান্ড কি হবে।

গত বছরের ১০ নভেম্বর এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এই খবরটিতে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত পাটেল ওয়াশিংটনে একটি সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন। সেখানে বাংলাদেশি একজন সাংবাদিক নির্বাচন সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার চায় কি-না। এমন প্রশ্নের উত্তরে মি. পাটেল বলেন, বাংলাদেশে সবাই দ্রæত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো দেশেই বিশেষ কোনো সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে সমর্থন করে না। ওই সংবাদ সম্মেলনে মি. পাটেল আরো বলেন, অবাধ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা। এটি বাংলাদেশের জনগণেরও প্রত্যাশা।

অন্যদিকে বাংলাদেশে দ্রæত নির্বাচন চেয়ে চলতি বছরের ২১ মে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ৪১ সিনেটর। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্য ও ফেডারেল পর্যায়ের ৪১ জন সিনেটর ও এমপি একযোগে একটি চিঠি দেন। ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে তারা বাংলাদেশে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য এবং সময়সীমা নির্ধারিত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান। চিঠির শুরুতেই অস্ট্রেলীয় এমপি ও সিনেটররা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক সঙ্কটের মুখোমুখি এবং সরকারে গণতান্ত্রিক বৈধতার অভাব রয়েছে। তারা লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে তত্ত¡াবধানযোগ্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তারা বলেন, বাংলাদেশে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথেষ্ট বৈধতা পায়নি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও একাধিকবার এই নির্বাচনগুলোর স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও স্থিতিশীলতার জন্য অবিলম্বে নতুন নির্বাচনী পরিকল্পনা প্রয়োজন।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদদের মতে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে সরকারের ফোকাস ছিল মূলত হাসিনার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, বিদেশে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। এ জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হলেও বাস্তবে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিনিয়োগ বিষয়ে একের পরে এক প্রচারণামূলক কর্মকাÐে উদ্যোগী হন। বিনিয়োগ আকৃষ্টের হিটম্যাপ তৈরিসহ যার মধ্যে রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা পেতে ইলোন মাস্কের স্টারলিংকের নিবন্ধন, শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানে নাসার সঙ্গে চুক্তি, সব বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থাকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন লজিস্টিক অবকাঠামো শক্তিশালী করতে চট্টগ্রাম বন্দরে ডেনমার্কভিত্তিক এপি মোলার মায়ের্স্কের বিনিয়োগ। নিত্যনতুন এমন সব উদ্যোগ নিয়ে চৌধুরী আশিক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে হইচই ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিনিয়োগ অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রচারণামূলক ওইসব কর্মকাÐের প্রতিফলন প্রকৃত বিনিয়োগ আকৃষ্টে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের সূচক হিসেবে বিডায় নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের সংখ্যা যেমন নি¤œমুখী, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) নিট প্রবাহও কমেছে। অন্যদিকে শিল্পের মূলধনী যন্ত্র আমদানিও নি¤œমুখী। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ আকৃষ্টে চৌধুরী আশিকের প্রচারণা বা তৎপরতা যতটা আলোচিত হয়েছে, প্রকৃত বিনিয়োগ পরিস্থিতি তার ঠিক বিপরীত।

বিষেশজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীরা অনেক ধরনের বিষয় চিন্তা করেন। বিনিয়োগ হঠাৎ করে বাড়ে না। বিশেষ করে একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা চায় একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ। এদিক থেকেও সরকারের প্রতি তাদের একটা প্রচ্ছন্ন চাপ রয়েছে।
স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, দেশে অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায়ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। এক স্থানীয় বিনিয়োগকারী গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে এক রাষ্ট্রদূতের কাছে অভিমত জানতে চান। তার প্রশ্ন ছিল, শেষ হওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনে আপনার দেশ থেকে অনেক বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছিলেন, বিনিয়োগ বাস্তবায়নে তারা কত সময় নিতে পারেন? জবাবে সেই রাষ্ট্রদূত প্রথমেই বলেছেন, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া কোনো বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবে না। রাষ্ট্রদূতের কথায় দ্রæত নির্বাচনের জন্য একটা প্রচ্ছন্ন চাপ দৃশ্যমান।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণ নির্ভর করে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে তার ওপর। বাংলাদেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, এ পরিস্থিতিতে বিদেশিরা কীভাবে বিনিয়োগ করবেন?’

বিসিআই সভাপতি আরো বলেন, দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার এখন ১৫ শতাংশের বেশি। এত সুদ দিয়ে এখানে বিনিয়োগ করবে কে? উচ্চ সুদ ছাড়াও আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ব্যয়ও প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা না হয় বাদই দিলাম! এ অবস্থায় বিদেশিরা এখানে কেন বিনিয়োগ করতে আসবেন? তিনি বলেন, বিদেশিরা তখনই বিনিয়োগ করেন যখন স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা এখন নানা কারণে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। আমরা যদি না করি তাহলে বিদেশিরাও আগ্রহী হবেন না- এটিই স্বাভাবিক। তার মানে যত তাড়াতাড়ি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার আসবে, তত তাড়াতাড়ি দেশে বিনিয়োগ বাড়বে-অর্থনীতিতে গতি আসবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto