Bangladesh

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া ২৬ দলের অধিকাংশই ক্ষুদ্র

কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন মহল থেকে তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।

নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬টি দল আগামী ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০০৮ সালে ‘দেশের সর্বশেষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’র পর গঠিত নবম জাতীয় সংসদে তাদের মধ্যে কেবল পাঁচটি দলের আসন ছিল।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি দল অংশ নিলেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এবার ১৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে চারটি দল এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এসব দলের কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন মহল থেকে তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ৩৭টি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং বাকি সাতটি দলের অবস্থান জানতে নির্বাচন কমিশনে তাদের জমা দেওয়া নথি দেখেছে।

গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্রদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই এই ঘোষণা আসে।

সরকার যতবেশি সম্ভব নিবন্ধিত দলগুলোকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে স্বল্প পরিচিত ও সদ্য গঠিত বেশ কয়েকটি দলও ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক করার জন্য এই দলগুলোকে নির্বাচনে আনানো হচ্ছে।

গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সমালোচিত হওয়ায় এ ধরনের পদক্ষেপকে অনেকেই আগামী জাতীয় সংসদে আরও বেশি বিরোধী দল রাখতে সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচনে আসা দল

নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া ২৬টি দল হচ্ছে—আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মুকিত), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি।

এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা পাঁচটি দল হলো—আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)।

ওই ২৬ দলের মধ্যে সাতটি এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছেন। এগুলো হলো—জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) ও তরিকত ফেডারেশন।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মতো কয়েকটি স্বল্প পরিচিত দল জানিয়েছে, তারা ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

নির্বাচন বর্জন করা দল

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে আসা ১৪টি দল হলো—বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (আম্বিয়া)।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এসব দলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা চারটি দল হচ্ছে—বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (লণ্ঠন), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও খেলাফত মজলিস।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের দল এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তবে সম্প্রতি তিনি ইসিতে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, তার দল তাকে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে সই করার ক্ষমতা দিয়েছে। ডেইলি স্টার সেই চিঠির একটি অনুলিপি পেয়েছে।

খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ নয়টি ইসলামি দলের নেতারা বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত দুই নেতা ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে অংশ নিতে নেতাদের অনুরোধ করেন এবং নেতারা তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত আন্দোলন ও মুসলিম লীগের নেতারা গতকাল বলেন, তারা শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর দলটির সহ-সভাপতি শাহিনুর পাশা চৌধুরীকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button