Bangladesh

নির্বাচনে অনড় সরকার

– বিএনপিসহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬০টি দলের নির্বাচন বর্জন
– আ’লীগসহ নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ

তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ওই সময় আওয়ামী লীগ তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় তুললেও সেই একই প্রক্রিয়ায় আয়োজিত একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই ২০১১ সালে ১০ মে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্রদের চলা তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করে সরকার। এবারো সেই একই দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করে তাদের চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিন থেকে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে। এ দিকে গেল বছরের শুরু থেকেই মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযাগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দেশীয়-আন্তর্জাতিক মহলের তরফ থেকে সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ ছিল। ওই চাপ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ও তার মিত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়াই যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় রয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মাত্র একদিন পর আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের গায়ে নতুন একটি কলঙ্ক লেগে আছে। যা তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ওই নির্বাচন নিয়ে দেশীয়-আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এবার সুযোগ ছিল সেই বিতর্ক ঘুচিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেয়ার। কিন্তু সরকার দাবি না মানায় বিএনপিসহ ৬০ দল নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে। আর ৪৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ নিবন্ধিত যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে সেটা আসলে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন। এখানে বিরোধী দলকে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় পার্টি সংসদীয় বিরোধী দল হলেও তাদের সাথে ২৮টি আসনে সমঝোতা হয়েছে, যা সরকারি দলের শীর্ষ নেতারাও বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, ’৮৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং ’৯৬ সালে বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে তাদের গায়ে সারা জীবনের জন্য একটি কলঙ্ক জড়িয়ে রেখেছে। যদিও সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ’৯৬ সালের নির্বাচন করতে বিএনপি অনেকটা বাধ্য হয়েছিল বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বর্তমানে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য যে আন্দোলন করছে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ একই দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন এ দলটি। আর ২০১১ সালের ১০ মে আদালতের এক রায়ের মাধ্যমে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্ররা আন্দোলন করে আসছে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের উপযোগিতা এখন নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেনি, বাতিল করেছে আদালত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মরা লাশ। মরা লাশ নিয়ে টানাটানির কোনো মানেই হয় না। কারণ সংশোধিত সংবিধানের আলোকে ইতোমধ্যে দু’টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’টি নির্বাচনের প্রথমটিতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। দ্বিতীয়টিতে অংশগ্রহণ করেও মাঝপথে পরাজিত হওয়ার ভয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে পালিয়েছে তারা। এবারো তারা আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং তারা আবারো নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে অংশগ্রহণ করেনি। নেতারা আরো বলছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপির রাজনৈতিক অধিকার। আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অধিকার তাদের রয়েছে। যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগতো তাদের জোর করে নির্বাচনে আনতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে আর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তাছাড়া নির্বাচনতো সরকারের অধীনে হচ্ছে না, নির্বাচন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেন, ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হচ্ছে তাকে কোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। বড়জোর এটাকে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন বলা যায়। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভিন্ন মত থাকতে হবে, ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে হবে। কে ক্ষমতায় আসবে তা নিয়েও মানুষের মধ্যে একটা সংশয় থাকবে। এখানে সেই সুযোগ রাখা হয়নি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কে কয়টি আসন পাবে সেটাও ক্ষমতাসীনরা নির্ধারণ করছে। তাহলে কিভাবে একে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যায়? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। সেখান থেকেইতো রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে পোক্ত করার জন্য মূলত তারা সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। ড. মজুমদার বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বড় ধরনের একটা বৈধতার সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এ রকম যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সঙ্কট জটিল থেকে জটিলতর হবে, যেটার সমাধান আসলেই কঠিন হয়ে যাবে। এই সরকার নতুন আরেকটি সমস্যায় পড়বে তা হালো নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়ে। এই নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যাদের পরামর্শে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে তাদেও অনেকেরই পরামর্শ দেয়ার আইনি ভিত্তি নেই। আর তাদেরই পরামর্শের ভিত্তিতে গঠিত নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রমই ভবিষ্যতে অবৈধ বলে গণ্য হবে।

৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, তামাশা, প্রহসনমূলক, কলঙ্কজনক একতরফা একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পরিবর্তে আরো ঘনিভূত হবে। দেশের ভবিষ্যৎ একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এর শেষ আসলে কোথায় হবে তা বলা মুশকিল। তবে আমাদের সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ দিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে নির্বাচন বলতে নারাজ বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেন, এটা কোনো নির্বাচন নয়, এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সম্মেলন। নির্বাচনে প্রতিযোগী, প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হয়, এখানে কি তা আছে? ফলে একে কোনোভাবেই নির্বাচন বলা যাবে না।

অবশ্য আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে আরো ২৮টি দলের প্রার্থী আছে। এটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করি। আশা করি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করল সেটি মুখ্য বিষয় নয়, জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে কি না সেটিই মুখ্য বিষয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও অনেক নাম করা দল, অনেক নাম করা নেতা অংশগ্রহণ করে নাই কিন্তু জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং সেটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। তাই এখনো কোনো একটি বিশেষ দলের অংশগ্রহণের ওপর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নির্ভর করে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির পরোয়া করেন না। বিএনপি এবং তাদের দোসররা একতরফাভাবে এ নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। বিএনপি লিফলেট বিতরণ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেটাই করুক না কেন নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণœ রাখতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, ’৯৬ সালের নির্বাচন ও আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এক নয়। বিএনপি বলছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে নির্বাচনে যাব। কিন্তু সংবিধানেতো এ ব্যবস্থা নেই। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই। সংশোধিত সংবিধানের আলোকে যে দু’টি নির্বাচন হয়েছে তার একটিতেতো বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে। জনগণ তাদের ভোট দেয়নি বলে তারা জিততে পারেনি। এর দায়তো আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সফল হয়নি। এবারো নির্বাচন বর্জন করে তারা আন্দোলন করছে, আমরা মনে হয় না তারা সফল হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot