Bangladesh

নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জাপা নেতারা, চাপে এমপিরা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলের বার্তা স্পষ্ট। নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো। একদফা দাবিতে অনড় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি দিয়েছে তারা। এমন অবস্থায় এখনো অবস্থান স্পষ্ট করছে না জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে অংশ নেয়া নেতাদের প্রায় সবাই বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। এমন অবস্থায় দলীয় কিছু এমপি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন। তারা কৌশলে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে মত দিচ্ছেন। বিষয়টিতে দলীয় নেতাকর্মীরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না।

আবার সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকেও এসব এমপি’র উপর চাপ রয়েছে। এ কারণে তারা উভয়দিকে চাপে পড়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, কিছু এমপি নির্বাচনে যেতে চান বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা দলীয় স্বার্থে নয়। তারা আবার এমপি হতে চান কারণ তারা এতদিন সরকারি সুবিধা নিয়েছেন। সামনেও নিতে চান। তারা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা পেলে এতদিনে দলের কোনো লাভ হয়নি। উল্টো দলের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। এমন অবস্থায় দলীয় প্রধান দলের বিষয় চিন্তা করেই ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তারা মনে করছেন। 

সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার অনুসারী কিছু নেতা নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সূত্রের দাবি রওশন এরশাদ দলের কোনো পদে নেই। তার পক্ষে যারা বলছেন, তারাও হয় বহিষ্কৃৃত না হয় দলের কোনো দায়িত্বে নেই। দলীয় মনোনয়ন দেবেন পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর বাইরে জাতীয় পার্টি বলতে কিছু নেই। 
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ৫৯ জন নেতা বক্তব্য দেন। তাদের দুই একজন ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বা বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নেতাদের অবশ্য উভয়মুখি চাপের কথা বলেন। এই অবস্থায় নির্বাচনে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার শঙ্কার কথাও বলেন তিনি। একদিন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে জিএম কাদেরের সাক্ষাৎ নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন জাতীয় পার্টি নানা কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। 

এমন অবস্থায় আগামী দুই একদিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকে বসছে। এ বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। তার আগে দলের নেতাদের কাছ থেকে আলাদাভাবে মতামত নেয়া হচ্ছে। 

সূত্রমতে একজন সিনিয়র নেতা দলের নেতাদের মতামত সংগ্রহ করার কাজ করছেন। প্রায় ২০ জন নেতার মতামত নেয়া হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। তাদের দুই একজন ছাড়া বাকি সবাই বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। 

গতকাল দলটির বনানীর কার্যালয়ে কথা হয় সম্ভাব্য একজন প্রার্থীর সঙ্গে। জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক দুর্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এককভাবে নির্বাচন করলে ১২ থেকে ১৫টার বেশি আসন হয়তো পাবো না। কিন্তু জোট বাধলে হয়তো বেশি আসন পাবো। 

তিনি বলেন, তৃণমূল নেতারা নির্বাচন বিরোধী, কারণ তারা যোগ্য সম্মানটুকু পাচ্ছেন না। অনেকেই হয়রানির শিকারও হয়েছেন। এটা আমাদের কমবেশি জানা। মঙ্গলবার তো তারা খোলাসা করেই জানান দিলেন। নির্বাচনে গেলে তৃণমূলের ক্ষোভ বাড়তে পারে উল্লেখ করে এই নেতা বলেন, আমরা চাই দলের অবস্থান আরও শক্তিশালী হোক। বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন তো হতে পারে।

দলীয় একজন এমপি জানান, নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে যেমন মত আছে, নির্বাচনের যাওয়ার ক্ষেত্রেও চাপ আছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে পার্টি চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্রের দাবি নির্বাচনে গেলে জাতীয় পার্টি কি সুবিধা পাবে তা নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনাও হচ্ছে। 

দলীয় অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন নিয়ে এবার ভেবে চিন্তে পা ফেলবে জাতীয় পার্টি। আমি আবারো বলছি এখনো নির্বাচনে যাবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা নির্বাচনে যাবো নাকি যাবো না তা নিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবো। তিনি বলেন, আমরা সংলাপের কথা আগে থেকেই বলে আসছি। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে একটা নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হোক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে এমন নানা বিষয়ে কথা চালাচালি হয়েই থাকে। দলের যেমন প্রস্তুতি থাকে তেমন ব্যক্তি প্রস্তুতিও থাকে। এটা নতুন কিছু না। আমরা চেয়ারম্যানের কাঁধে দায়িত্ব দিয়েছি তিনিই দলের জন্য সবার জন্য যা ভালো হয় তা সিদ্ধান্ত জানাবেন। 

মঙ্গলবারের কার্যনির্বাহী সভায় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, এখনো নির্বাচনে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এই অবস্থায় নির্বাচনে গেলে আমাদের উপর স্যাংশন আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারি আমাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে। সকলের মতামতের প্রতিফলন নাও হতে পারে। আপনারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আপসে একমত না। এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন করলে কী হবে? আমাদের দলের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আর নির্বাচনে গেলে? সরকার যদি পরবর্তীতে সমস্যায় পড়ে আমাদের কী হবে? আমাদের কিন্তু দলকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সমস্যা হলে আমাদের মাথাতেও আঘাত আসবে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d