Hot

নির্বাচন এলে সবাই বেপরোয়া হয়, শক্ত থাকার নির্দেশ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে হবে। যেহেতু নির্বাচন আসছে; নানা সমস্যা হবে, নানা চাপ আসবে। সবাই বেপরোয়া হয়ে যাবে। পুলিশকে সেখানে শক্ত থাকতে হবে। আইনের ভেতরে থাকতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

গতকাল সোমবার পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকে তিনি কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দেন। এতে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম তাঁর বক্তব্যে বাহিনীকে সেবামুখী করতে এবং পুরোপুরি সঠিক ধারায় ফেরাতে স্বাধীন কমিশনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীন অথবা স্বশাসিত কমিশন এই সময়ে গঠন করতে না পারলে পুলিশ তার পুরোনো নেতিবাচক চরিত্রে ফিরে যাবে। 

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ বাহিনী পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, দাবি ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ ধরনের বৈঠক এই প্রথম। এতে যে কোনো প্রভাবের বাইরে থেকে চাপমুক্ত হয়ে নির্ভয়ে কাজ করার বার্তা পেল পুলিশের মাঠ প্রশাসন। বৈঠকের পর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যরা উজ্জীবিত হবেন। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় রয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা এ ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন মেনে পুলিশকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক ডজনের বেশি পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তাদের কাছে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ন্যায়ভাবে কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। নির্বাচনের মাঠে যে ঘটনা ঘটে, সেগুলো পুলিশকে ধৈর্য, সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ছাত্রদের দল কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ না দেখিয়ে কাজ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশকে মাথা উঁচু করে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সমাজের শক্তিশালীরা যাতে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা কিংবা অযথা হয়রানি করতে না পারে, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নারীর সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। নারীরা যেন সবখানে নিরাপদে থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নারী-শিশু যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে পুলিশকে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে দেশে উন্নয়ন সম্ভব হয় না। পুলিশকে অবহেলা করে, পাশ কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে গণতন্ত্র, অধিকার সবই অর্থহীন হয়ে পড়বে। পুলিশ মানে আইন ও শৃঙ্খলা। সরকার যা কিছুই করতে চাক না কেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। পুলিশ সম্মুখ সারির মানুষ। জনগণের আস্থার জায়গা। পরাজিত শক্তির সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে পুলিশকে সেই আস্থা আইনের মধ্যে থেকে অর্জন করতে হবে।

৫ আগস্ট-পরবর্তী বাহিনী পুনর্গঠনে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যা, দাবির বিষয় বৈঠকে তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশে সংস্কার ও পুলিশ কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তারা। একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, থানায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যানবাহন জরুরি প্রয়োজন। ৫ আগস্টের আগে-পরে পুলিশের বহু যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া নানা সমস্যা তুলে ধরে বলা হয়, সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে সমাধান প্রয়োজন।

পুলিশের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, সবাইকে নিয়ে একেকটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে যত টিম রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম পুলিশ। অতীতে পুলিশ খারাপ মানুষের প্রভাবের শিকার হয়েছে। পুলিশের যে বদনাম হয়েছে, নতুন বাংলাদেশে আইন প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত এক জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথভাবে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি। যানবাহন ও অবকাঠামোগত সংকট, অপরাধের তদন্ত ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। এসব কারণে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’

বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। পুলিশ সুপার ও এর ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক হয়। বিভিন্ন মহানগর কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ক্রাইম বিভাগের সদস্যসহ ১২৭ কর্মকর্তা এই বিশেষ বৈঠকে যোগ দেন।

আইজিপি বৈঠকে বলেছেন, পুলিশ কমিশন ভারতে আছে, পাকিস্তানে আছে, শ্রীলঙ্কায় আছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্যই পুলিশ কমিশন দরকার। পুলিশ সংস্কার কমিশনে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে আসেনি। এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না। অথচ ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি সবচেয়ে জরুরি।
 
আমরা দুনিয়ার মাঠের খেলোয়াড়
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ দুনিয়ার মাঠে খেলার খেলোয়াড়; ছোট মাঠের না। স্বপ্নের, সাধের বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে দলবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে হবে। টিমওয়ার্ক জরুরি এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে তার মধ্যে পুলিশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর করণীয় প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অতীত নিয়ে কান্নাকাটি করার দরকার নেই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং তা করে দেখাব। এটা মুখে বলার দরকার নেই। কারণ, পুলিশের ইমেজ হলো যে তারা খারাপটাই আগে দেখে, খারাপটা আগে করে। আমরা ভালোটা আগে দেখব; ভালোটা আগে করব।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটি কাঠামো। এই কাঠামোর কাছে অনেক শক্তি, যদি আমরা সেই শক্তিকে ঠিক দিকে প্রসারিত করি। এটা একটা টিম ওয়ার্ক। এক উপদেষ্টা হুকুম দিয়ে দিল, আর তোমরা করে ফেললে– এ রকম না। সবাই মিলে একটা টিমের মতো খেলতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিমগুলো তোমরা– পুলিশ বাহিনী।’ তিনি বলেন, ‘যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা যেন আইনের সরকার হয়। আইন ভেঙে যে আসবে, সেই সরকার কোনোদিন আইন রাখতে পারবে না। কারণ তার ভাঙারই অভ্যাস। কাজেই এই সুযোগটা এমনভাবে কাজে লাগাতে হবে, ভবিষ্যতের সরকার যেন আইন মানার সরকার হয়। সেটারও দায়িত্ব তোমাদের হাতে, যেহেতু নির্বাচন তোমাদের (পুলিশ) হাত দিয়ে হবে। কারও কথা মানার দরকার নেই। আইন যা বলে, তুমি আইনের ভেতরে থাকো। আমাদের শুধু ভয় হলো, আবার যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যাই। ছাত্ররা আমাদের রক্ষা করেছে। আবার যেন আমরা সেই গর্তে ঢুকে না যাই। আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে সব যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।’

অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে বেশি সময় নেই জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা ৭ মাস পার করে এসেছি। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই এর মধ্যেই আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, যা যা সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো করতে হবে। কারও জন্য অপেক্ষায় থাকলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। সংস্কার কাজ করে সেটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ হবে আশ্রয়দাতা। এই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে। যাতে মানুষ দেখে বলে, শুধু পুলিশ বাহিনী না, নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। দেখলে যেন মনে হয়, এই পুলিশ নতুন বাংলাদেশের পুলিশ।

নতুন বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ কথাটা আমরা বলি, কারণ পুরোনো বাংলাদেশ একটা অন্ধকার যুগ। ভয়ংকর একটা যুগ। সেই ভয়ংকর একটা দিন থেকে সুন্দর ঝলমলে একটা দিনে আসতে চাই। পুলিশ বাহিনীর সমস্যা হচ্ছে, ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি হুকুম পেয়েছে, কাজ করেছে। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে তোমাদের ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনবরত যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। এটা যেন মনে থাকে। এই যুদ্ধাবস্থা থেকে আমাদের জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। লোকে সুযোগ গ্রহণ করে, যারা পরাজিত শক্তি তারা সুযোগ গ্রহণ করে একটা কিছু উস্কে দেবে, গোলমাল পাকিয়ে দেবে। এটা প্রথমেই আসবে পুলিশের নজরে। তার (পরাজিত শক্তি) চেষ্টাই হবে গোলযোগ পাকিয়ে দেওয়া। কারণ সে তো সম্মুখযুদ্ধে আসতে পারছে না। এখানেও সম্মুখে থাকবে পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নজরে রাখা, খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তার মানে এই নয়, কাউকে সন্দেহের বশে কারাগারে নেওয়া। এই যুদ্ধাবস্থা ক্রমাগত ঘনীভূত হবে। কালো মেঘ থেকে ঘূর্ণিঝড় হতে থাকবে। আমরা সতর্ক থাকলে এটা বৃদ্ধির সুযোগ নেই। নিত্যনতুন অপপ্রচার হবে। অপপ্রচারের একটা কারখানা আছে। তোমাদেরও দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেবে। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের পর অনেকেই বলা শুরু করল, রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে যাবে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের তো ডেটাবেজ ইউএনএইচসিআরের কাছে আছে। বায়োমেট্রিক যাচাই করলেই বুঝে যাবে, এটা তো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। কারণ এই দুটি ডেটাবেজ কানেকটেড হয়ে যাবে। তাহলে সেখানে আর সেই সুযোগ থাকবে না। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষই ঠিক করবে কাজটা। কাজেই এখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার নেই, যেহেতু প্রযুক্তি আমাদের সাহায্য করছে। তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে স্টারলিঙ্ক চালু হয়ে যাবে। তখন দেখবে, ইন্টারনেটের গতি কেমন। এত দ্রুত গতির ইন্টারনেট আগে ছিল না। এতে সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
 
চাপমুক্ত হয়ে নির্ভয়ে পুলিশিং করার বার্তা
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুই পর্বে এ বৈঠক হয়। প্রথমে পুলিশ সদস্যের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেন। সেখানে বক্তব্য দেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় চিড় ধরেছিল।  এর ফলে পুলিশি ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের অসন্তোষ বেড়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা অনেকবার উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছে।

আইজিপি বলেন, অপরাধীরা এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। তা ছাড়া আন্দোলনে পরাজিত শক্তির ইন্ধনেও নানা ধরনের অপরাধ হচ্ছে। যেসব পুলিশ সদস্য ফ্যাসিবাদী সরকারের হয়ে দমনপীড়ন, গুম, হত্যা ইত্যাদিতে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত ১৩৬ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ ও রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম। আহসান হাবীব হাটহাজারী থানার উদাহরণ টেনে বলেন, ওই থানা এলাকায় ৪ লাখ মানুষের বাস। এখন সেখানে পুলিশের দুটি গাড়ি আছে, সেগুলোতেও সমস্যা। অনেক সময় গাড়ি সংকট দেখা দিলে ওসিরা বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে গাড়ি নিতেন। এভাবে গাড়ি নিলে পুলিশকে ছোট হতে হয়। গাড়ি সংকট দূর করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, এখন ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখনই যদি পুলিশ কমিশন গঠন করা না হয়, তাহলে কোনোদিনই হবে না। পুলিশ কমিশন গঠন সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দাবি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানুষ সংস্কারের কথা বলছে; আর পুলিশ বাহিনী নিজেরাই নিজেদের সংস্কারের কথা তুলে ধরছে। কিন্তু পুলিশের সংস্কারের কথা কেউ সেভাবে শুনছে না।

দ্বিতীয় পর্বে কয়েকজন উপদেষ্টা পুলিশের সমস্যার কথা কর্মকর্তাদের কাছে আলাদাভাবে শুনতে চান। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবেশ উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশে বলেন, কেউ পরিবেশের ক্ষতি করলে এটি যে অপরাধ– সেটি পুলিশকে বুঝতে হবে। যারা পরিবেশদূষণে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।

রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলাম বলেন, পুলিশে নারীর সংখ্যা অনেক কম। প্রতিটি থানায় জনবলের ২০ শতাংশ নারী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। পদায়নের ক্ষেত্রে অনেক নারীকে দূরদূরান্তে পদায়ন করা হয়। তারা যাতে পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। নারী ট্রাফিক পুলিশের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুম, বিশ্রামাগার নেই। এ ছাড়া পুলিশের আবাসন সংকটের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বিকেলে পুলিশ সদরদপ্তরে ৬৪ জেলার এসপি এবং রেঞ্জ ডিআইজি ও মহানগর কমিশনারদের নিয়ে আইজি বাহারুল আলম বৈঠক করেন। ৬৪ জেলার এসপি এবং মাঠ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ধরনের বৈঠক এটিই প্রথম। বৈঠকে বিভিন্ন কর্মকর্তা মাঠের চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও আগামী দিনের করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন। আইজিপি বলেন, চাপমুক্ত থেকে কাজ করার এখনই সময়। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা ভালো কাজ করবেন, তিনি তাদের পাশে থাকবেন। বৈঠকে এক জেলার এসপি বলেন, এসআই এবং এএসআইদের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে সরকারকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরেক এসপি বলেন, থানায় রিকুইজিশন করে যাতে পুলিশকে গাড়ি ব্যবহার করতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সাধারণ গাড়ি মাঠে দেখলে মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়ে না। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা এপিবিএন ও র‍্যাবের মতো ফ্রেশ রেশন ব্যবস্থা চালুর কথা বলেন। বরিশাল রেঞ্জের আওতাধীন এক জেলার এসপি তাঁর জেলার জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, যে জনবল দরকার, তার চেয়ে ৩০০ জন কম আছে।

বৈঠকে সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে কোর পুলিশিং করার পরামর্শ দেন নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা। নতুন নতুন নামে কেউ কেউ চাঁদাবাজি করছে– এ বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই তুলে ধরেন। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা বলেন, কেউ চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor