Bangladesh

নির্বাচন কমিশন: পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল হচ্ছে না

  • ইসি মনে করছে, পুলিশ ও প্রশাসনে এখন বড় ধরনের রদবদল করতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
  • তবে নির্বাচনকালে কোথাও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া বা রদবদল করার বিষয়টি কমিশন দেখবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে রদবদল আনতে কোনো উদ্যোগ নেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের আগে মাঠপর্যায়ে পুলিশ ও জনপ্রশাসনে সরকার যেভাবে নিয়োগ দিয়েছিল, সেটা ঠিক রেখেই নির্বাচন করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

ইসি মনে করছে, পুলিশ ও প্রশাসনে এখন বড় ধরনের রদবদল করতে গেলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তবে নির্বাচনকালে কোথাও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া বা রদবদল করার বিষয়টি কমিশন দেখবে। এখন পর্যন্ত এটাই নির্বাচন কমিশনের অবস্থান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। এর মধ্যে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে তাঁরাই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় থাকছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার আগে–পরে বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। সে সময় তাঁদের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়নি। বর্তমান কমিশনও শুরুতে বিষয়টি আমলে নিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেখানে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ১৪টি চ্যালেঞ্জ বা বাধা চিহ্নিত করেছিল। এর দ্বিতীয়টি ছিল ‘নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন।’

অবশ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে ইসি কী করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে গত জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘কর্মপরিকল্পনায় আপনারা বলেছিলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন একটি চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেবেন?’ জবাবে সিইসি বলেছিলেন, ‘অপেক্ষা করুন এবং দেখুন’। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে গত বুধবার। গত চার দিনে এ বিষয়ে ইসির কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিস্থিতি, তাতে পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল আনা হলেই–বা কতটুকু কী হবে? প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে পরিস্থিতি এক রকম হতো।

এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত মাঠ প্রশাসনে রদবদলের বিষয়ে কেউ কোনো দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে করেনি। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে তখন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

ইসি তাদের কর্মপরিকল্পনায় এবার যত দূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইসির নিজেদের কোনো কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়নি। ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৫৬ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। এটি নিয়ে ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে গত জুন-জুলাইয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল করে সরকার। গত জুলাই মাসে ৫ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার রদবদল এবং ৩০টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৬৯ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়। অন্তত ৭০টি উপজেলায় ইউএনও বদল করা হয়। তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করেছিল, সরকার নির্বাচন সামনে রেখে পছন্দমতো মাঠ প্রশাসন সাজাচ্ছে।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ইসি সচিব, জনপ্রশাসন ও পুলিশের ৯২ জন কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল তখনকার বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে তখন ইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নির্বাচন সামনে রেখে ইসি পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল আনার উদ্যোগ নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের কারও বিরুদ্ধে যদি তথ্য–প্রমাণসসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে সেখানে রদবদল করা হবে।

সরকার সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন করতে চায়, এমন অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে সব সময় বিরোধী দলের অভিযোগ থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হতে হবে এবং তথ্য–প্রমাণ থাকতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে এই আদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় যেকোনো দায়িত্ব পালন বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। সরকারের সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কমিশনকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা দেবে। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে যেভাবে প্রয়োজন মনে করবেন, সে ধরনের নির্দেশাবলি জারি করতে পারবেন। আর সংবিধানে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’

ইসি তাদের কর্মপরিকল্পনায় এবার যত দূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইসির নিজেদের কোনো কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংবিধান ও আইনে দেওয়া এই ক্ষমতাবলে ইসি ইচ্ছা করলে পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করার উদ্যোগ নিতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলে ইসি সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন করতে চায়, এমন একটি বার্তা থাকত। অবশ্য দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ দুটি (২০১৪ ও ২০১৮) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসিকে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে ইসি সচিব, জনপ্রশাসন ও পুলিশের ৯২ জন কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল তখনকার বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে তখন ইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তখনকার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তাঁর মৃত্যুর আগে লেখা নির্বাচনামা/নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো বইয়ে লিখেছিলেন, ‘সামগ্রিক পর্যালোচনায় আমার কাছে মনে হয়েছে, নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে।’

অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের নির্বাচনগুলোর আগে দলীয় সরকারের সাজানো প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়।

দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাওয়া এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে আছে। এই প্রেক্ষাপটে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিস্থিতি, তাতে পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল আনা হলেই–বা কতটুকু কী হবে? প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে পরিস্থিতি এক রকম হতো।’ তবে তিনি এ–ও বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে পুলিশ বা মাঠ প্রশাসনে রদবদল প্রয়োজন, তাহলে তারা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তারা নির্দেশনা দিতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তাঁর মৃত্যুর আগে লেখা নির্বাচনামা/নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো বইয়ে লিখেছিলেন, ‘সামগ্রিক পর্যালোচনায় আমার কাছে মনে হয়েছে, নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d