নির্বাচন নিয়ে ছোট দলে অস্থিরতা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল গণফোরাম ও বিকল্পধারা বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়ছে। এরই মধ্যে পদত্যাগ ও শোকজ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে বহিষ্কার এবং গণহারে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন নেতাকর্মী। চাপে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিও।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের নেতাকর্মী জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সংখ্যাগরিষ্ঠরা। গত ২৫ নভেম্বর দলের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ৩৮ নেতার মধ্যে ২৮ জন নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। ছয় নেতা নির্বাচনে যেতে সম্মতি জানান। আর বাকি চার নেতা উভয় অংশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মধ্যবর্তী অবস্থান নেন। তবে এর এক দিন পরই সেখান থেকে পুরো ইউটার্ন নেন দলটির বর্তমান সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল। ওই দিন তিনি ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান দলের সিদ্ধান্ত অবগত করতে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমানে দলের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে যান। সেখানে গিয়ে মফিজ কামাল নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এতে ক্ষুব্ধ কামাল হোসেন তাঁকে ভর্ৎসনা করেন এবং জানিয়ে দেন, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে।
সূত্র জানায়, দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মফিজ কামালের নেতৃত্বে একটি অংশ নিজেদের মতো করে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। তাদের ওই সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে দলটিতে। এর অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার দলের কার্যালয়ে আবারও কেন্দ্রীয় কমিটির এক তলবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা ও মনোনয়ন জমা দেওয়ায় দলের সভাপতিকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে গতকালের সভায় ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত সবাই মানতে বাধ্য। এটাই দলের গঠনতন্ত্র। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে তাদের দলের সভাপতিরও সম্মতি ছিল বলে ওই দিন তিনি রেজুলেশনে সই করেছিলেন। তবে এক দিন পরই তিনি সেটা ভঙ্গ করে একক সিদ্ধান্তে নির্বাচনে গেছেন। এখন তিনি কাদের মনোনয়ন দিয়েছেন, কীভাবে নির্বাচনে যাচ্ছেন– তা কেউ জানেন না। এভাবে একটি দল চলতে পারে না বলে তাঁকে এক সপ্তাহ সময় দিয়ে নোটিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, নির্বাচন নিয়ে দল কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বলে সভাপতি হিসেবে একক সিদ্ধান্তে নির্বাচনে গেছি। গঠনতান্ত্রিকভাবে সঠিক আছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে, তিন নেতার দল বিকল্পধারা বাংলাদেশের দুই নেতা নির্বাচনে গেলেও আরেক নেতা প্রতিবাদে দল থেকেই পদত্যাগ করেছেন। দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে দলের কুলা প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনা না করে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রতিবাদে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক গতকাল পদত্যাগ করেছেন।
এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুজ্জোদা চৌধুরী বয়সজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ নেতা এখন আর দলে নেই। নতুন কমিটিও আর গঠন হয়নি।
ক্ষোভের বিষয়টি এড়িয়ে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, পরিবারের চাপ এবং পেশাগত কারণে তিনি এখন রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে পদত্যাগ করেছেন।