Bangladesh

নির্বাচন নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

♦ অদৃশ্য শক্তি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে : তারেক রহমান ♦ দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে শঙ্কা দূর করার তাগিদ সমমনাদের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ও সমমনা দলে। তাদের মতে নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো টালবাহানা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা হচ্ছে না কবে নাগাদ হবে মানুষের কাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচন। একবার বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর লক্ষ্য ধরেই নেওয়া হচ্ছে সব রকমের প্রস্তুতি। আবার বলা হচ্ছে, ২০২৬ সালের জুন পার হবে না।

অন্যদিকে উপদেষ্টারা একেকজন একেক কথা বলছেন। আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করছেন কেউ কেউ। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সংস্কারের দোহাই দিয়ে নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। জামায়াতে ইসলামীসহ আরও দু-একটি দলের ভূমিকাও অস্পষ্ট।

এ অবস্থায় নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। আবার নির্বাচন নিয়ে দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ। বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের সদস্য ও সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চলছে। এ বিষয়ে আট মাস আগেই আপনাদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম। কেননা বিএনপি, দেশ, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা অদৃশ্য প্রতিপক্ষ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আরও কিছু প্রতিপক্ষ যোগ দিচ্ছে। সেটা মোকাবিলা করার সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। তাই আমাদের সবকিছুই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলা করতে হবে।’

১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে তারা জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ চাইলেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বৈঠকে পরিষ্কারভাবে কিছুই বললেন না। তিনি জানালেন, ডিসেম্বর (২০২৫) থেকে জুনের (২০২৬) মধ্যেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের বিষয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়েও তিনি কিছু বলেননি। ওই বৈঠকের পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে সরকারের ভূমিকা রহস্যপূর্ণ মনে করছেন নেতৃবৃন্দ।

এদিকে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশিবিদেশি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না, তারাই মূলত নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা। তাঁরা বলেন, অনির্বাচিত সরকারের আমলেই যাঁরা ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছেন তাঁদের আর নির্বাচনের দরকার কী? নির্বাচন না হলেই তাঁদের জন্য ভালো। তাঁদের ক্ষমতার মজার মেয়াদ দীর্ঘায়িত হবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বরে না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এ কথাটাই আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুনের কথা। ভোট আগামী ডিসেম্বরে হবে, প্রধান উপদেষ্টা এটা বলার পরপরই আরেকজন বললেন ভোট জুনে হবে। সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা করবেন না। নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে এটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে? আবার কেউ কেউ ধমক দেয় “আমরা নির্বাচনে যাব না”। তবে এগুলো করে কোনো লাভ নেই। আমরা আশা করি খুব দ্রুত না হলেও নির্বাচনটা যথাসময়েই হবে, জনগণের প্রত্যাশার কাছাকাছি সময়েই হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না।’

দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শঙ্কা সবই আছে। আমরা ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। এতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তিনি আগে বলেছিলেন ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। বিষয়টি রোডম্যাপের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু তার দুই মাস পরেও বিষয়টি তিনি বা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি। এখন বলা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাঁদের এসব কথাবার্তাই সবার মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। তার পরও আমরা আশা করছি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিগগিরই বিষয়টি পরিষ্কার করে মানুষকে স্বস্তি দেবেন। আর এদিকে আমরা সমমনা ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর আমরা আমাদের কর্মকৌশল নির্ধারণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করছে।’ তিনি বলেন, ‘এ সরকার তো গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফসল। তার তো প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘সব গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনাদের সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু কনস্টিটিউশনালি বা আইনগতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। তার পরেও মানুষ আপনাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য। কাজেই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করুন। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো শেষ করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে দ্রুত একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন পারস্পরিক পরিপূরক বিধায় সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা অত্যাবশ্যক। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ প্রণয়নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব দল ও সমাজশক্তি তথা শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাপকভিত্তিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। প্রণীত জাতীয় সনদ নির্বাচনের আবশ্যিক শর্ত পূরণ করবে। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই জাতীয় রাজনীতি একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত হবে।’

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সময় নষ্ট করেছে। আমরা বলেছিলাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব বিষয়ে একমত হবেন সে বিষয়গুলো নিয়ে অর্ডিন্যান্স আকারে প্রকাশ ও কার্যকর করার জন্য। কিন্তু এ সরকার সেদিকে না গিয়ে নিজেদের পারফরম্যান্স “শো-অফ” করার কাজে সময় নষ্ট করে যাচ্ছে। নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমরা অনেক আগেই মতামত দিয়েছি। আমরা বলেছি ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে একটি রোডম্যাপ আকারে সেটি প্রকাশ করেন। যাতে জনমনে সৃষ্ট সব আশঙ্কা, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ দূর হয়। কিন্তু সরকার সেটা না করে একবার ডিসেম্বর, আরেকবার জুনে নির্বাচনের কথা বলে এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি করছে। অবিলম্বে এ ধোঁয়াশা দূর করতে হবে।’

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না করলে জুনেও সম্ভব হবে না। ডিসেম্বরের পর পর্যায়ক্রমে পবিত্র রমজান, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা। এরপর আমাদের দেশে প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগের শঙ্কা থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বলায় এ নিয়ে জনমনে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। উপরন্তু সরকারের একেক উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে একেকবার একেক কথা বলছেন। সরকারের উচিত নির্বাচন কবে হবে সে ব্যাপারে পরিষ্কার একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে জনমানসের শঙ্কা দূর করা।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto