Bangladesh

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ, অনিশ্চয়তা বাড়ছে রাজনীতিতে 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ ছাড় দিতে রাজি নয়। ফলে আলোচনা বা সমঝোতার সম্ভাবনা কার্যত থাকছে না।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী এবং অনমনীয় অবস্থানের কারণে দেশে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে অনড় রয়েছে বিএনপি। তারা রাজপথেই চূড়ান্ত ফয়সালা করার কথা বলছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রশ্নে সংবিধানের বিদ্যমান ব্যবস্থার বাইরে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করাই দলটির চূড়ান্ত লক্ষ্য।

দুই পক্ষই যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা কার্যত আর থাকছে না; বরং অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এমন আলোচনা দুই দলের নেতাদের মধ্যেই রয়েছে।

১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে মাঠ ছেড়ে দিতে চায় না। এবার নির্বাচন থেকে বাইরে থাকলে বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে—এমন চিন্তা দলটির নেতাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আগামী নির্বাচনকে দেখছে ভিন্নভাবে। তারা মনে করছে, নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে কার্যত একটা সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে দুই দলই নিজ নিজ অবস্থানে অটল থেকে পরিস্থিতি তাদের মতো করে সামলাতে চাইছে। 

আগামী ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে ভোট হলে নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ফলে বিএনপি অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল দেখতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের চাওয়া, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করে মানুষকে নির্বাচনমুখী করা। দুই পক্ষই এখন রাজপথে মুখোমুখি অবস্থার দিকে এগোচ্ছে। 

এক দফা নিয়ে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য

বিএনপি ও তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারী দলগুলো ২৭ জুলাই ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। গত শনিবার ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করার মাত্র চার দিন পরই মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে তারা। এই কর্মসূচি ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশে লোক জমায়েতের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে সরকার। এমনকি এবার মহাসমাবেশের অনুমতির প্রশ্নেও জটিলতা তৈরি করা হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাধা উপেক্ষা করেই মহাসমাবেশ করতে চান তাঁরা। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য সারা দেশের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত।

রাজপথে বিরোধী দলকে একতরফাভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া হবে—এমন অবস্থানে আওয়ামী লীগও নেই। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শুরু থেকেই পাল্টা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলও। বিএনপির এক দফা ঘোষণা ক্ষমতাসীনদের আরও ক্ষুব্ধ করেছে। এবারও বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি থাকবে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁরা বলছেন, মহাসমাবেশের পর আরও কর্মসূচি ঘোষণা করে বিরোধী পক্ষ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি তাঁদেরও রয়েছে।

এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা এবং নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিতে ৬ আগস্ট ঢাকায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বিশেষ বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই সভায় উপজেলা বা থানা পর্যায়ের নেতাদেরও ডাকা হয়েছে। এই সভার মাধ্যমে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে রাজপথে নামার কথা বলছেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলন মোকাবিলা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি—দুটোই রয়েছে আমাদের।’

‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে’

ঘেরাও, পদযাত্রা ও বড় সমাবেশের মতো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু মাঠে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে, সেই চিন্তাও রয়েছে দলটিতে। এখন মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বাধা এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে, দলটি সেই আশঙ্কাও করছে। 

মহাসমাবেশের (২৭ জুলাই) পর জুলাই মাসের একেবারে শেষের দিকে দুই দিনের অবস্থান বা পদযাত্রার মতো কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিতে আলোচনা রয়েছে। শোকের মাস আগস্টে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রাখতে বিএনপি মানুষকে সম্পৃক্ত করার কিছু কর্মসূচি রাখবে। আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও—এ ধরনের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলটিতে। তবে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কী পরিস্থিতি হয়, তার ওপরও নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে দলটি। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনেও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বা যেসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা করার সুযোগ থাকে, এ ধরনের কর্মসূচি না দেওয়ার চেষ্টা থাকবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি বলেন, সরকারের একগুঁয়েমির কারণে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি এক দফা দাবিতে মাঠে নেমে সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে যত চাপই আসুক না কেন, সরকারের পদত্যাগের প্রশ্নে কোনো আলোচনা হওয়া সম্ভব নয়। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে এক দফা নিয়ে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। 

এই মুহূর্তে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। তবে তাঁর মতে, রাজনীতি হয়তো অনিশ্চয়তার দিকেই এগোচ্ছে।

১৪–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন

‘আলোচনার সম্ভাবনা কম’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিএনপির এক দফা দাবি যদি আওয়ামী লীগ মেনে নেয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে তাদের পরাজয় হবে, এমন ধারণা তৈরি হতে পারে। ফলে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না। 

এক দফা দাবি তুলে বিএনপি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার পরিকল্পনা করেছে—এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যেতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।

 যদিও নির্বাচন নিয়ে এবার ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকেরাও বেশ তৎপর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়বে। আর দেশের ভেতরে বিরোধী দলগুলো চাপ বাড়াতে পারলে আন্দোলন একটা পরিণতির দিকে যেতে পারে।

প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে মাঠ ছেড়ে দিতে চায় না। এবার নির্বাচন থেকে বাইরে থাকলে বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে—এমন চিন্তা দলটির নেতাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আগামী নির্বাচনকে দেখছে ভিন্নভাবে। তারা মনে করছে, নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মাধ্যমে কার্যত একটা সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে দুই দলই নিজ নিজ অবস্থানে অটল থেকে পরিস্থিতি তাদের মতো করে সামলাতে চাইছে। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, রাজপথে গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে তাঁরা এক দফা দাবি আদায় করতে চান। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ দেখি না।’

তবে বিরোধী দলের আন্দোলন ও বিদেশিদের তৎপরতা—কোনোটাকেই চাপ হিসেবে আমলে নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৪–দলীয় জোট। এই জোটের নেতারা বলছেন, যথাসময়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেবে সরকার।

১৪–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে আলোচনা বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। তবে তাঁর মতে, রাজনীতি হয়তো অনিশ্চয়তার দিকেই এগোচ্ছে।

Show More

One Comment

  1. Thank you for every other great article. The place
    else could anyone get that type of information in such
    an ideal means of writing? I have a presentation next week, and I’m at
    the search for such information.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor