Bangladesh

নির্বাচন শেষে ‘নমনীয়’ সরকার, কবে মুক্তি বিএনপি নেতাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে রাজনীতিতে ‘নতুন মেরূকরণ’-এর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন বর্জনকারী রাজপথে আন্দোলনে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতি ‘কিছুটা নমনীয়’ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নাশকতার মামলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়ার ‘গতি’ও আপাতত কমেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে নাশকতার অভিযোগে কারাবন্দি বিএনপির শীর্ষ নেতারা শিগগির জামিন পেতে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না দেখালে চলতি সপ্তাহে মুক্তি পেতে পারেন। তারা জামিন পেলে একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অন্য কারাবন্দি নেতাকর্মীরও জামিন পাওয়ার পথ খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন দলীয় আইনজীবী ও নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘কৌশলী অবস্থান’ নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোও। এ মুহূর্তে আন্দোলনের বড় ধরনের নতুন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে নেতাকর্মী কারামুক্ত করাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।  

অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধী দলের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের এখন নমনীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হিসেবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন দমন করতে বিএনপির নেতাকর্মীকে গণহারে গ্রেপ্তার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগ সরকারের ইশারায় চলে বলেই নির্বাচনের আগে গণহারে গ্রেপ্তার ও সাজা দিয়েছে। এখন আবার সরকারের ইঙ্গিতেই তা বন্ধ করে জামিন দেওয়ার পথে হাঁটছে। অথচ জামিনযোগ্য এসব মামলায় আদালত নির্বাচনের আগেও তাদের জামিনে মুক্তি দিতে পারতেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনকে ‘একতরফা ও ডামি নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে বর্জন করলেও রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই আপাতত আন্দোলনের বড় ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে না দলটি। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী কর্মকৌশল নির্ধারণে দল ও সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। প্রতিদিনই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি মিটিং করছেন দল ও সমমনা নেতাদের সঙ্গে। 

সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করছেন তারা। আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণে সমন্বয়ে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ভুলত্রুটির বিষয়ও উল্লেখ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। সার্বিকভাবে জনগণকে ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে পারাসহ দেশি-বিদেশিদের কাছে নির্বাচন ‘অগ্রহণযোগ্য ও একতরফা’ প্রমাণিত করতে পারাই আন্দোলনের সফলতা বলে মনে করেন নেতারা।

সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আপাতত সবার আগে দলের নেতাকর্মীকে কারামুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নতুন করে আন্দোলন করতে হলে নেতাকর্মীকে মুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

কারাগার থেকে নেতাকর্মীর মুক্তির ব্যাপারে সার্বিকভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় দলীয় নেতা ও আইনজীবীদের। অবশ্য আগে একই নির্দেশনা দেওয়া হলেও দলের সংশ্লিষ্ট শাখার নেতারা গ্রেপ্তার নেতাদের পাশে দাঁড়াননি। যথাযথ আইনি ও আর্থিক সহায়তা না দেওয়ায় অনেক নেতাকর্মীর পরিবার ধারদেনা করে আইনি লড়াই চালাচ্ছে। ‘আইনি সহায়তা সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা হয়নি। তুলনামূলক জুনিয়র আইনজীবীরা কারাবন্দি নেতাকর্মীকে সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা দিলেও সিনিয়র আইনজীবীদের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডের নজরে আসায় গত সপ্তাহে দলীয় নেতা ও আইনজীবীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আবারও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। তবে সমাবেশ পণ্ড এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও পুলিশ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দলটির ওপর শুরু হয় ‘ক্র্যাকডাউন’। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১ হাজার ১৭৫ নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে। গণহারে ২৭ হাজার ৪৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করায় সারাদেশের কারাগারগুলোতেও জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে একজনের জায়গায় দুই-তিনজনকে রাখা হয়েছে। এর পরও আদালতে বারবার জামিন আবেদন করলে নামঞ্জুর হয়ে যায়। 

জামিন না পাওয়ায় গত আড়াই মাসের বেশি কারাগারে ও আদালতের বান্দায় দিনাতিপাত করেন বিএনপির হাজারও নেতাকর্মী। বিএনপিকে ছাড়াই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান করে হরতাল-অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচন প্রতিহত করেনি বিএনপি। এমনকি নির্বাচনের পর এখনও কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি তারা। 

এ প্রেক্ষাপটে সরকারও ‘কঠোর অবস্থান’ থেকে কিছুটা সরে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নতুন করে বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ রেখেছে। আদালতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাগুলোতে জামিন মঞ্জুর শুরু হয়েছে। তবে সব মামলায় এখনও জামিনে মুক্ত হননি কোনো শীর্ষ নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের কারাবন্দি করেছে। যেসব নাশকতার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, এগুলোর কোনোটির সঙ্গে তারা জড়িত নন। খালি মাঠে একতরফা ও ডামি নির্বাচন সম্পন্ন করতেই তারা বিএনপির জনপ্রিয় ও সক্রিয় নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করেছে। অবিলম্বে বিএনপি মহাসচিবসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি। 

অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। মামলার বিচার কার্যক্রমে সরকার হস্তক্ষেপ করছে না। বিএনপি নেতাদের ক্ষেত্রেও না। 

চলতি সপ্তাহে জামিন হতে পারে ফখরুল ও খসরুর

চলতি সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আরেকটি মামলায় জামিন শুনানি হবে। রাজধানীর পল্টন মডেল থানার নাশকতার আরেক মামলায় গত ১৭ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তাহমিনা হক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১ মামলার মধ্যে ১০টিতে জামিন পেলেন তিনি। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় জামিন পেলেই কারামুক্ত হতে পারবেন দলটির মহাসচিব। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ৯ মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। একই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল হত্যাসহ পল্টন ও রমনা থানায় দুই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গত ১৭ জানুয়ারি জামিন দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম তাহমিনা হক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন রমনা ও পল্টন মডেল থানার পৃথক চার মামলায় তাঁর ঢাকার আদালতে গ্রেপ্তার ও জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি। শুনানির জন্য আগামীকাল রোববার দিন ধার্য রয়েছে। শুনানিতে জামিন মঞ্জুর হতে পারে বলে আশাবাদী আইনজীবীরা।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল শুক্রবার বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছিল। এসব মামলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে বিএনপি মহাসচিবসহ কারাবন্দি সব নেতাই জামিন পাওয়ার হকদার।
২৮ অক্টোবরের নাশকতার অভিযোগেও মামলায় গ্রেপ্তারকৃত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস কারাগারে রয়েছেন। অবশ্য ১৬ বছর আগে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় রায়ের নির্ধারিত তারিখ ২৪ জানুয়ারি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও ১০টি নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের মামলা রয়েছে।

কারাবন্দি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীরও ২১ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক যুগ আগে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় তাদের এ সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ সাজাপ্রাপ্ত। তবে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।

২০১৫ সালের নাশকতার মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অপর ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে নাশকতার ৩৩ মামলার সবক’টিতে আগাম জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

এ ছাড়াও নাশকতার মামলায় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন– ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খান দুদু, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান (সাজাপ্রাপ্ত) ও হাবিবুর রহমান হাবিব; মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। মামলার আসামি হয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আত্মগোপনে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পুরোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে আছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।

২০১৮ সালের অক্টোবরে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২৫ জনের দুই বছরের সাজার আদেশ দেন আদালত। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার মামলায় সোহেলসহ ১৪ জনকে দেড় বছর করে সাজা দেন আদালত।  

বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, সরকার নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্যই নিয়মবহির্ভূত ও অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পরিকল্পিতভাবে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ওপর রাতের বেলায় যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে, নয়াপল্টনে দিনের বেলায় তা ঘটিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীর জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।  

ঢাকা মহানগর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, জামিন দেওয়া ও না দেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার আসামি হয়েছেন। এফআইআরে তাদের নাম রয়েছে। সুতরাং বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে রাজনৈতিক বা হয়রানিমূলক বলা যাবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d