Bangladesh

‘নিশ্চয়তা’ নিয়ে অনিশ্চয়তা: ভোটের আগেই ‘বিজয় নিশ্চিত’ চায় অংশ নেয়া দলগুলো জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নীরবতা রহস্য‘

‘খাঁচার ভিতর বন্দি পাখি, পারে না আকাশে উড়তে/খাঁচার ভিতর বন্দি পাখি, পারে নাকো বাসা গড়তে/খাঁচার ভিতর বন্দি পাখি, খাঁচায় কাটায় জীবন/খাঁচার বাইরে আসে তখন, যখন হয় তার মরণ’ (লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী)। পশ্চিমবঙ্গের এই ছড়াকারের ছড়ার মতোই অবস্থা হয়েছে এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দীলিপ বড়ুয়াদের রাজনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের খাঁচায় বন্দি থেকে এমপি, মন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন। এতে করে খাঁচায় বন্দি পাখির ‘মুক্ত আকাশে উড়া’ ভুলে যাওয়ার মতো তারা নিজেদের শক্তিতে এমপি হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি নিজ দলের নিজস্বতা, স্বকীয়তা খুইয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুকম্পার ওপর নির্ভর করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করছেন। এতে করে আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক মহলকে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ দেখানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। অবস্থা যেন কবি বন্দে আলী মিয়ার কবিতার পংক্তি ‘খোকা চায় পাখি/পাখি চায় বন’-এর মতো। জাতীয় পার্টি, ইনু, মেননরা কবিতার ‘খোকার পাখি চাওয়া’র মতোই চাচ্ছেন ভোটের আগেই বিজয়ের নিশ্চয়তা। আর ‘পাখির বন চাওয়া’র মতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রচারণা, উৎসব ও উত্তাপ। দুই পক্ষের দুই ধরনের চাওয়ায় আসন ভাগাভাগি ও সমঝোতা গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে গেছে। এমপি হওয়ার লোভে জনগণের ভোটের অধিকারের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনে গিয়ে এমপি হওয়ার নিশ্চয়তা এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। এখন নির্বাচন অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা বহুল অংশে ধ্বংস হয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক শাসনের সঙ্গে কোনোভাইবেই সংযুক্ত নয়। গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা হয়, একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে। এখন হচ্ছে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন। এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামতের প্রতিফলিত ঘটে না, কারো জন্যেই কল্যাণ বয়ে আনে না।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনের ওপর কড়া নজর রাখছে। এ জন্যই আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ দেখাতে সমঝোতা করে ভোটের মাঠে নৌকা এবং লাঙ্গল; উভয় প্রতীকের প্রার্থীরা তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলুক। কিছু সংসদীয় আসনে লাঙ্গলকে জেতানো হবে। তবে ক্ষমতাসীনদের এই কৌশলে একমত হতে পারছে না ‘আওয়ামী লীগের নাচের পুতুল’ খ্যাত জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকরা। দলটির কোনো গণভিত্তি নেই। ফলে ভোটের আগেই বিজয়ের বিষয়ে ‘আগাম নিশ্চয়তা’ চাচ্ছে। দলটির নেতারা চাচ্ছেন, যেসব আসন ‘লাঙ্গলকে ছাড়’ হবে, সেখানে নৌকার প্রার্থী থাকবেন না। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর দুই দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দু’দলই নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন। সুত্রের দাবি, আওয়ামী লীগের কাছে প্রথমে জাতীয় পার্টি একশ’ আসন প্রত্যাশা করে তালিকা তৈরি করে। পরে সেটা কাটছাট করে প্রথমে ৭৫ এবং পরে ৬০-এ নামিয়ে আনা হয়। এ তালিকা দেয়া হলে তা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কয়টি আসন দেওয়া হবে, তা না বললেও তারা জাতীয় পার্টির তালিকা এবং নির্বাচনী কৌশল-সংক্রান্ত প্রস্তাবের কাগজ নিয়েছেন। জাপার একাধিক সূত্র স্বীকার করেছে, ভোটের লড়াইয়ে নামার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলছে টানাপড়েন। এখন জাতীয় পার্টি চায় ৪০টি আসন; এবং এই দাবিতে তারা অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি দল আওয়ামী লীগ ২০/২৫টি আসনে ছাড় দিতে চায় জাপাকে। কিন্তু জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ৪০ আসন থেকে ছাড় দিতে নারাজ। এর ব্যত্যয় হলে প্রয়োজনে জাপা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে এমন অভাস দিয়েছেন। দীর্ঘ এক মাস ধরে জি এম কাদেরের নীরবতাকে অনেকেই ‘রহস্যজনক’ মন্তব্য করেছেন। গতকাল বনানী কর্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদেরের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগে ওবায়দুল কাদের ও দু’-তিনজন কিন্তু কথা বলছেন। এবিষয়ে সভাপতি (শেখ হাসিনা) কথা বলছেন বলে আমার জানা নেই। ঠিক জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে সিদ্ধান্ত ছিল জাতীয় পার্টির মুখপাত্র চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব। চেয়ারম্যান যেহেতু নাম্বার ওয়ান ব্যক্তি, মহাসচিব থাকতে ওনার খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলার দরকার নেই। আর আমি যাই বলছি সেটা আমার দলের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের কনসার্ন নিয়ে বলছি। এখানে অন্যকোনো উদ্দেশ্য বা ভুল বোঝার কোনো অবকাশ নেই।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয় জানি না। আসন ভাগাভাগির আলোচনাও হয়নি। রাজনৈতিক আলোচনা করেছি। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। আমাদের কথা জানিয়ে দিয়ে আসছি। এখন তারা প্রয়োজনে আমাদের ডাকবে; না ডাকলে না ডাকবে। আমরা নির্ধারিত আসনের নিশ্চয়তা পেলে এবার ৩০০ আসনেই খেলতে চাই।

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে দেখা যায়, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে পরজীবী রাজনীতির কারণে এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি কার্যত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিগত উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটি চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পারে না। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, জাপা প্রার্থীরা শুধুমাত্র সেইসব আসনে জয়লাভ করেছেন যেসব আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে দলটির নেতারা বুঝে গেছেন এককভাবে ভোট করে লাঙ্গলের প্রার্থীরা কেউ জামানত রক্ষা করতে পারবেন না। আবার আওয়ামী লীগ যদি আসন ছেড়ে দেয় এবং ওই সব আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সেগুলো আসনেও লাঙ্গল বিজয়ী হতে পারবে না। সে কারণ ভোটের আগে কমপক্ষে ২৫ আসনের বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা চাচ্ছে। জাপার একটি সূত্রের দাবি দলটির এই চাওয়া পূরণ না হলে নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণাও দেয়া হতে পারে।

এদিকে যারা আওয়ামী লীগের মুখাপেক্ষি হয়ে রাজনীতি করে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন সেই ১৪ দলীয় জোটের নেতারাও এখন পর্যন্ত আসনের নিশ্চয়তা পাননি। আবার যারা লোভে পড়ে আন্দোলনের মাঠ থেকে পল্টি দিয়ে নির্বাচনে গেছেন এবং নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের আসনেও এখনো সমঝোতা হয়নি। এমপি হওয়ার লোভে রাজনৈতিক ইমেজ খোয়ালেও ওই সব নেতার আসনে কোথাও নৌকার প্রার্থী কোথাও আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

এমপি হওয়ার লোভে নির্বাচনে গিয়ে একুল-ওকুল দু’কুল হারাতে বসেছেন অনেক সুবিধাবাদী নেতা। তাদের একজন হচ্ছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিম। তিনি চারটি আসনের মনোনয়নপত্র ক্রয় করে যে আসনে প্রার্থী হয়েছেন সেই কক্সবাজার-১ আসনে নৌকার প্রার্থী সালাহউদ্দীন আহমদ নৌকা পেয়েছেন। এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসনে নৌকার প্রার্থী নসরুল ইসলাম খান আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃর্ণমূল বিএনপির শমসের মোবিন চৌধুরী। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃর্ণমূল বিএনপির অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী রয়ে গেছেন বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজি। তৃর্ণমূল বিএনপির সহ-সভাপতি অন্তরা হুদা প্রার্থী হয়েছেন মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে। ওই আসেন নৌকার প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়াও বিকল্প ধারার মাহি বি চৌধুরী প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সানজিদা খাতুন। ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের লাঙ্গলের প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। ঢাকা-১৮ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী হয়েছেন জি এম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদের। সেখানে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমানের এমপি হাবিব হাসান।

কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর আসন মোটামুটি নিশ্চত। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী। মহাবিপদে পড়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি ফেনী-১ আসন থেকে গত দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। এবার ওই আসনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। জাসদের আরেক নেতা রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সেখানে নৌকার প্রার্থী রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসন থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এ দু’টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার আসন রাজশাহী-২। সেখানে আওয়ামী লীগ রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে প্রার্থী করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি মোস্তফা লুৎফুল্লাহর সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হয়েছেন ফিরোজ আহমেদ স্বপন। জাতীয় পার্টির (জেপি) একমাত্র এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সেখানে নৌকার প্রার্থী দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ‘নাচের পুতুল’ খ্যাত জাতীয় পার্টি এবং পরজীবী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জেপি), হঠাৎ এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া কল্যান পার্টি, তৃর্ণমূল বিএনপির নেতাদের অবস্থা হয়েছে মাধুরী চ্যাটার্জীর জনপ্রিয় গান ‘নিজেরে হারায়ে খুঁজি/তোমারই নয়ন মাঝে/ চাহিতে পারিনি কিছু/চাহিয়া মরি যে লাজে/নিজেরে হারায়ে খুঁজি’।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d