Bangladesh

নিষেধাজ্ঞায় সংকট বাড়বে গার্মেন্টস ও বিমানে

কোনো কারণে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে গার্মেন্টস শিল্প এবং সবেমাত্র ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এমনটাই আশঙ্কা করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। গার্মেন্টে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কথা বলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরাও প্রভাব কমানোর বিষয়ে ভাবছেন। এতদিন আলোচনার বাইরে ছিল বিমান। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি বৈঠকের কারণে তা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বিমান বহরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি উড়োজাহাজই সবচেয়ে বেশি। নিষেধাজ্ঞা এলে এর স্পেয়ার পার্টস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটের অধিকারের মতো জন-গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনীতিকরা দ্বিধা-বিভক্ত। দেশে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ঘাটতির প্রশ্ন জোরালো।

এ নিয়ে কথা হচ্ছে দেশ-বিদেশে। শ্রম অধিকারও ক্রমশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খাতওয়ারি নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে একটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পূর্বাভাস দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠিয়েছে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। গোপনীয়তা বজায় রেখে পাঠানো দূতাবাসের সেই কমিউনিকেশন কীভাবে ফাঁস হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের তরফে সেই বার্তার সত্যতা কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শুরুতর অভিযোগ এনে ২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা শিথিলের অনুরোধ জানিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে দু’বছর ধরে দেনদরবার চলছে। সরকার টু সরকার নেগোসিয়েশনে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্প্রতি আইনি লড়াই শুরু করেছে ঢাকা। অপ্রত্যাশিত সেই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে দেশে গুম-খুন অনেকটাই কমেছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনের কাছে দাবি করছেন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা। তারা এ-ও জানান, কেবল র‌্যাব নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান ম্যাকানিজম আগের চেয়ে এখন অনেক কার্যকর হয়েছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো নিষেধাজ্ঞার খড়্‌গ সুদূরপ্রসারি। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসে তার লিংকে থাকা আরও অনেক কিছুকেই টাচ্‌ করে। যেমন ব্যক্তি হলে পরিবারের সদস্য এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের সেই ঘানি টানতে হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠান হলে তার ফরওয়ার্ড লিংকিং এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকিং দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ ওই শিল্পের বিনিয়োগ, কাঁচামালের আমদানি এবং প্রস্তুতকৃত মালামালের বাজারজাতকরণ সিস্টেম ব্লক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে স্বতন্ত্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। ওই নীতি এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সুনির্দিষ্টভাবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করা হলেও ভিসা নীতির আওতায় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে পেশাজীবী পর্যায়ে বাংলাদেশের বিভিন্নজনের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা বাতিল এবং অনেকের ভিসা’র আবেদনই আটকে গেছে।

যে কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বিমান: বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরের ৮০ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল জানিয়ে ওই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত সত্ত্বেও গত ৫ই ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন দূত পিটার হাস্‌। পূর্বনির্ধারিত ওই বৈঠকে উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সাপ্লাই নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু খবর বেরিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের এয়ারবাসকে ঠেকিয়ে বাংলাদেশের আরও বেশি বোয়িং বিক্রি করতে চায়। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র মানবজমিনকে জানায়, সেই বৈঠকে বোয়িংয়ের তৈরি উড়োজাহাজ বিক্রি নিয়ে কথা হয়েছে সত্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তরফে উড়োজাহাজ বিক্রির নতুন কোনো প্রস্তাব আসেনি। বরং বাংলাদেশের বিমানবহরে থাকা ২১টি উড়োজাহাজের ১৬টি বোয়িংয়ের সরবরাহ করা বিধায় তার স্পেয়ার পার্টসসহ অন্য সাপোর্ট কীভাবে নির্বিঘ্ন রাখা যায় তা নিয়ে বেশি কথা হয়েছে। বৈঠকে আকাশপথের নিরাপত্তা, ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে পিটার হাস্‌-এর সঙ্গে বোয়িং কোম্পানির একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একজন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। 

বেবিচক সূত্র জানায়, বেবিচক চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রদূতের মধ্যকার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আকাশপথের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও বেবিচকের ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণে নেয়া উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়। সূত্র মতে, সেখানে উদ্বেগজনক অন্য ইস্যু নিয়েও প্রাসঙ্গিকভাবে কথা হয়। যার ফলে ওই খাত সংশ্লিষ্টরা ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পূর্বাভাসের মিল খোঁজার চেষ্টা করছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বোয়িং কেনার প্রস্তাব আগে থেকেই ছিল। সেটি নিয়ে মার্কিন দূতের সঙ্গে বৈঠকে প্রাসঙ্গিক আলোচনা হয়। বৈঠকে বোয়িং কেনার বিষয়ে বিমানের কাছে পূর্বে সাবমিট করা প্রপোজাল স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত। জবাবে এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের যে উচ্চাভিলাষী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নের জন্য বোয়িংয়ের কাছে আছে সেরা মূল্যে সর্বোত্তম পণ্য। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে বিমান বোয়িংয়ের প্রস্তাবকে নিবিড়ভাবে মূল্যায়ন করবে এবং তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠক প্রসঙ্গে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে বিমানের নিউ ইয়র্ক রুট ও নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উড়োজাহাজ কেনার বিষয়টি যেহেতু বেবিচকের আওতায় নয়, তাই বোয়িংয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি। 

উল্লেখ্য, বেবিচককে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)। মূলত ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে এটি করে এফএএ। এফএএ’র ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র না থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে বিমানের জন্য বোয়িং থেকে দশটি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি হয়। সেই ১০টি উড়োজাহাজ বাংলাদেশের বহরে এরইমধ্যে যুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে চীনের কাছে বিক্রি না হওয়া আরও দুটি ড্রিমলাইনার বাংলাদেশের কাছে বাজারের চেয়ে কমমূল্যে বিক্রি করে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং। ওই দুটি ড্রিমলাইনার কেনার কথা ছিল চীনের হেইনান এয়ারলাইন্স-এর। কিন্তু বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সেই বিক্রিতে বাধা পড়ে। বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে বোয়িংয়ের সর্বাধুনিক মডেলের ছয়টি ৭৮৭-৮০০ ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজ এবং চারটি ৭৭৭-৩০০ মডেলের। বোয়িংয়ের আরও রয়েছে ৭৩৭-৮০০ মডেলের ছয়টি উড়োজাহাজ। বিমানের বাকি পাঁচটি ছোট উড়োজাহাজ হলো- কানাডার তৈরি ড্যাশ-৮ মডেলের। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-৯ এবং ৭৮৭-১০ উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব রয়েছে।

মিশ্র বহরে বিমানের লাভ না ক্ষতি? সমপ্রতি বিমানের জন্য নতুন প্রজন্মের এক ঝাঁক উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং না ফ্রান্সের এয়ারবাস থেকে কেনা হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে সরগরম আলোচনা। এক দশক ধরে বিমানের বহরে প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বোয়িংয়ের। কিন্তু এশিয়ান টাইগার হিসেবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে বোয়িং বাজার হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই বাজার দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে বোয়িংয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্সের এয়ারবাস। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে আসেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। 

সফর শেষে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে তিনি জানান, এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে প্রথমবারের মতো সরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্মরণ করা যায়, চলতি বছরের ৩রা মে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বোর্ড ব্যাপক ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এটি হবে কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের পর। সেটি মূল্যায়নে বিমান দুটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলো কাজ করছে। কিন্তু তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি পরিকল্পনায় থাকা উড়োজাহাজগুলো এয়ারবাসেরই হবে নাকি বোয়িংয়ের। উল্লেখ্য, বিমানের বহরে ফ্রান্সের  তৈরি এয়ারবাস সংযোজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন। 

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের কথা স্মরণ করে বলেন যে, তারা আগামী দিনে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করবেন। বোয়িংয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড শুল্ট এবং অন্যান্য সিনিয়র এক্সিকিউটিভরা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ সরকার আরও ১০টি উড়োজাহাজ ক্রয়ের চিন্তা করছে। এটি যদি এয়ারবাসের হয় তাহলে বাংলাদেশ বিমানের খরচ অনেক বাড়বে। খুচরা যন্ত্রাংশ, টুলিং, ইঞ্জিন এবং পাইলট প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কারণে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে হবে। দুই সেট পাইলট, ক্রু এবং ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন হবে। এমন মিশ্র বহর বিমানের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করা ড. আবদুল মোমেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন এ ধরনের ক্রয়ের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা উচিত, কারণ বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে বিমানের মতো ছোট বহরের ক্ষতি হতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor