Bangladesh

নি র্বা চ ন ই স্যু: বিএনপি জামায়াত দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে এক সময়ের রাজনৈতিক দুই মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব আরও প্রকাশ্যে এসেছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে চাপ দিয়ে আসলেও জামায়াত এগোচ্ছে ভিন্ন কৌশলে। দলটি প্রয়োজনীয় ও অতি জরুরি সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন চায়। এজন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায় সরকারকে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়েও জামায়াত বিএনপি’র বিপরীত অবস্থানে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচন চায় না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে জামায়াত। এ ছাড়া সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে আসন নির্ধারণের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে দলটি। বিএনপি এই ব্যবস্থার বিপক্ষে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে গত রোববার বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান বিএনপি নেতারা। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে ইসি কাজ করছে বলে বিএনপি নেতাদের জানানো হয়। বৈঠকের চারদিন পর জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।  বৈঠকে প্রয়োজনীয় জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে তারা নির্বাচন চান। এ ছাড়া জনগণের আকাঙ্ক্ষা হলো  জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে স্থানীয় নির্বাচন। জামায়াত এই আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে। 

ওদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, যত দ্রুত নির্বাচন ততই রাজনীতি সহজ হবে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল হয়ে আসবে। ইসি’র সঙ্গে সাক্ষাতে জামায়াত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফখরুল বলেন, এটা (সংখ্যানুপাতিক ভোট) আমরা পুরোপুরি বিরোধী, একেবারে জোরালোভাবে বিরোধী। আনুপাতিকভাবে নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করবো না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না। এরকম ভোটের প্রশ্নই উঠতে পারে না। 

স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতের অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান, এটাতেও আমরা একেবারেই একমত নই। এটা তো সমস্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু না। 

জাতীয় নির্বাচন কেন এখন জরুরি তার ব্যাখ্যাও দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, নির্বাচনটা হওয়ার প্রধানত দুইটা কারণ। একটি হচ্ছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা আরেকটা হলো সুশাসন চালু করা। এখন তো সুশাসনের খুব সমস্যা হচ্ছে, এটি কার্যকর করলেই তখন দেখবেন অর্থনীতি ভালো হয়ে আসবে। একটা নির্বাচিত সরকার না হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তো।

জরুরি সংস্কারের পর ভোট চায় জামায়াত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জরুরি সংস্কারের পর ভোট, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু এবং আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।  বৈঠক শেষে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এই তথ্য জানিয়ে বলেন, নো ইলেকশন উইদাউট রিফর্মস। অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত সেগুলোর সংস্কার করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। পূর্বের ৩টি নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিতে পারেনি, আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে; দুই হাজার ছাত্র-জনতার জীবন এবং ৩০ হাজার আহত ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে। এ জন্য আমরা বলেছি শুধু নির্বাচনপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে যেসব সংস্কার প্রয়োজন- করতে হবে, আমরা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের সংস্কারের কথা বলিনি। এখানে অনেকে ভুল বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি জানান, সংস্কার করতে গেলে সময় লাগে, এটা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করা। সেজন্য যে সংস্কারটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন, তার জন্য যতটুকু সময় যৌক্তিক প্রয়োজন, জমায়াতে ইসলামী সে সময় দিতে প্রস্তুত। কোনো দিন, মাস, ক্ষণ বেঁধে দেয়নি জামায়াত।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হোক। আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন এবং সম্মান ব্যক্ত করছি। তিনি বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা জামায়াত ইসলামীর আছে। আমরা প্রার্থী প্রস্তুত করে ফেলেছি। প্রাথমিকভাবে প্রার্থীও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর); আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হারের নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছি। বিশ্বের ৬০টি দেশে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পেশী শক্তির প্রভাবমুক্ত রেখে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই পদ্ধতিটি উপযোগী। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ৯১ (এ) অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবিও করা হযেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন আইনে কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ কঠিন শর্ত পূরণ করে (নিবন্ধন করা) রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এ আইনটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা বাতিল করতে হবে। দল ও রাজনীতি করার অধিকার সবার।

মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, প্রকাশনা ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট জসিমউদ্দিন সরকার, মজলিশে শূরার সদস্য এডভোকেট ইউসূফ আলী, মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট কামাল উদ্দিন। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d