নীতিশ-নাইডুকে পাশে বসিয়ে বৈঠক, ‘লিখিত অঙ্গীকার’ নিলেন মোদি, মোদিই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
- নীতিশ-নাইডুর এনডিএ জোট ছাড়ার গুঞ্জন
- তাদের প্রতি বিশেষ মনযোগ মোদির
- ‘লিখিত অঙ্গীকার’ নিয়েছে বিজেপি
আগামী শনিবার নতুন সরকার গঠন করবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট। বুধবার (০৫ জুন) বিকালে সর্বসম্মতিক্রমে টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নরেন্দ্র মোদিকে জোটের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। এদিন এনডিএর শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মোদি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বুধবার (০৫ জুন) নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোদি ছাড়াও বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা উপস্থিত ছিলেন।
বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রবাবু নাইডুর দিকে বিশেষ মনযোগ রেখেছিলেন মোদি। বৈঠকের সময় মোদির পাশেই ছিলেন দুই নেতা।
জল্পনা চলছে, নাইডু ও নীতিশের সঙ্গে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে, যাতে ২৩২টি আসনে জেতা এই জোট সরকার গঠন করতে পারে। এ নিয়ে সন্দেহ কাটিয়ে উঠতেই নাইডু ও নীতিশের দলের কাছ থেকে ‘লিখিত অঙ্গীকারনামা’ নিয়েছে বিজেপি।
সরকার গঠন হলে শনিবার শপথ নেবেন মোদি
গেরুয়া শিবির জানিয়েছে, দুটি কারণে নাইডু এবং নীতিশের প্রতি বিশেষ মনযোগী বিজেপির হাইকমান্ড। প্রথমত ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল হতাশাজনক। দ্বিতীয়ত নীতিশ ও নাইডু জোট ছাড়ছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের লোকসভায় মোট আসন ৫৪৩টি। কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে ন্যূনতম ২৭২টি আসন নিশ্চিত করতে হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে জয়ী হয় ২৮২টি আসনে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি পায় ৩০৩ আসন। ফলে গত দুইবার সরকার টিকিয়ে রাখতে শরিকদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। লোকসভায় বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন। আর শরিক দলগুলো পেয়েছে ৫৩টি আসন। তাই এককভাবে সরকার গঠন না করতে পারলেও জোট সরকার গঠনে বাধা নেই বিজেপির।
এদিকে মঙ্গলবার (০৪ জুন) নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরপরই গুঞ্জন উঠে নীতিশ ও নাইডু এনডিএ ছেড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোটে যোগ দিচ্ছেন। জোটের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দুজনের যে অতীত রেকর্ড, তাতে এমন গুঞ্জন উঠলে তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ দল-বদলের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে এনডিএ জোটে থাকলেও পরে বিহারের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল আরজেডির সঙ্গে জোট করেন নীতিশ। আরজেডি একটি বিজেপি বিরোধী দল। তাদের সঙ্গে জোটের সুবাদে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইনডিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন নীতিশ। জোটের মুখপাত্র হিসেবেও মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই এনডিএতে ফিরে যান।
অপরদিকে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নাইডু বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ জোটশরিক হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতির অভিযোগে গত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে বেশ হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাকে কারাগারেও যেতে হয়। ফলে বিজেপিকে চাপে ফেলতে তিনি ইনডিয়া জোটে যোগ দিতে পারেন এমন গুঞ্জন উঠেছিল।
আর এসব গুঞ্জন আমলে নিয়েই দুই নেতাকে কাছে টেনেছেন মোদি। বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, দলের হাইকমান্ডের এখন প্রধান লক্ষ্য এনডিএ জোট অক্ষত রাখা। বিহারে নীতিশের দল জেডিইউ এবারের লোকসভায় ১২টি আসনে জিতেছে। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশে নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টি জিতেছে ১৬টি আসন।