Bangladesh

নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি: রুই-কাতলার পৌষ মাস, চুনোপুঁটির সর্বনাশ!

ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি বিষয়ে অনেক খবর ছাপা হয় কাগজে। যেমন মঙ্গলবারের কাগজে রয়েছে কয়েকটি খবর। কয়েকটি কাগজের খবরের শিরোনাম : ‘বেশি দামে ডলার বিক্রি, ব্যাখ্যা তলব’, ‘রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, ‘প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে ডলারের দামের পার্থক্য কমাতে হবে’, ‘রপ্তানি বেড়েছে তবে প্রবৃদ্ধির হার কম’। আবার সচিত্র খবর রয়েছে কিছু। ‘কৃষাণ-কৃষাণীরা আমন ধান রোপণ করছে’। আবার ‘কৃষাণ আউশ ধান ঘরে তুলছে’। দেখা যাচ্ছে, এক কৃষাণী মাঠে খাবার পরিবেশন করছে চাষিদের মধ্যে, পরিবারের মধ্যে।

এ সবই একদিনের খবর। দুদিন আগে খবর হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। হুন্ডিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা বাহুল্য, এসবই মোটামুটি বড় খবর। প্রতিটি বিষয়ের ওপর লেখা যায়, লেখা দরকারও।

তবে শুরু করতে চাই ভিন্ন একটি খবর দিয়ে। সেই খবরটির শিরোনাম : ‘এনজিওর ঋণ গলার ফাঁস’। রায়পুরে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পাঁচজনের আত্মহত্যা। এ খবর পাঠ করে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। ঋণী-কৃষকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের কাহিনি পড়ি এবং বহু পড়েছি। এনজিওরা ঋণ দিয়ে বেশি সুদ আদায় করে। টাকা আদায়ের জন্য প্রবল চাপ প্রয়োগ করে। কৃষকদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে। কৃষকরা এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অন্য এনজিওর ঋণ পরিশোধ করে। দিন দিন গ্রামের কৃষকদের ঋণ বাড়ছে, ঋণের বোঝা বাড়ছে। এ ঋণের অনেক খবর দুদিন পরপরই শুনি।

কৃষকরা ধানের দাম পায় না, এখন পাটের দাম পাচ্ছে না। সারের অভাব, বীজের অভাব। কৃষি উপাদানের দাম বেশি। এমন খবর নতুন কিছু নয়। কিন্তু ৩ সেপ্টেম্বরের খবরটি খুবই মর্মান্তিক এবং এটি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। দেখা যাচ্ছে, পাঁচজন কৃষক এনজিওদের প্রবল চাপে আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চা দোকানি সানা উল্লাহ (৬৫)। এই বৃদ্ধ ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জানা যাচ্ছে, অর্থাভাবে সংসার চালাতে না পেরে তিনি ‘এসো গড়ি উন্নয়ন’, ‘প্রজন্ম ও রিক’, আশাসহ ১৪টি এনজিও থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। খবরটিতে বলা হয়েছে, এনজিওকর্মীরা বলছেন, প্রদত্ত ঋণের টাকা আদায় করতে না পারলে এনজিওগুলো তাদের বেতন থেকে তা কেটে নেয়। এ কারণে তারা বাকি কৃষকদের সব সময় চাপের মধ্যে রাখেন।

এখানেই প্রশ্ন, কৃষকরা কোন দিকে যাবেন? বাণিজ্যিক ব্যাংকে যাবেন, না এনজিওর কাছে যাবেন? নাকি গ্রামীণ মহাজনদের কাছে যাবেন? যেতে তাদের হবেই। কারণ ঋণ তাদের প্রয়োজন এবং তা যথেষ্ট পরিমাণে, যথাসময়ে, কম আনুষ্ঠানিকতায়। কৃষকরা কৃষি উপাদান ক্রয় করে, সংসার চালিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করেন। কিন্তু প্রাক-উৎপাদন পর্যায়ে কিংবা উৎপাদনোত্তর পর্যায়ে কখনো পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা পান না। এর জন্য নানা সূত্র থেকে তাদের ধার-কর্জ করতে হয়।

এক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে তারা হেনস্তার শিকার হন। তারা সময়মতো, পরিমাণমতো ঋণ পান না। ‘ঘুস’ দিতে হয়। দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। তাও সই। কিন্তু এক্ষেত্রে মুশকিল হচ্ছে, যদি তারা সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের টাকা ফেরত দিতে অপারগ হন, তাহলে তাদের কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নেওয়া হয়, জেলে পাঠানো হয়। এ খবর প্রায়ই আমরা পড়ি। অপরদিকে, এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কখনো কখনো আত্মহত্যা করতে হয়। আবার স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে জমি লিখে দিতে হয়।

সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কৃষকের কোমরে দড়ি বাঁধার ব্যবস্থা করে একটি আইনের মাধ্যমে। এর নাম ‘পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট’। কঠিন আইন। সরকারি কোনো দেনা বকেয়া থাকলে তা আদায়ে এ আইন প্রয়োগ করা যায় এবং হরেদরে তা করাও হচ্ছে। অথচ ব্যাংকের বড় বড় ঋণগ্রহীতা ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে কত সুবিধা দেওয়া হয়! ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়, নতুন নতুন কিস্তির ব্যবস্থা হয়, ঋণ পুনঃতফশিল করা হয়-একবার, দুবার, বহুবার। তাতেও না হলে ঋণ পুনঃগঠন (রিস্ট্রাকচারিং) করা হয়। এতে থাকে সুদ মওকুফ, কম সুদ চার্জ, দীর্ঘতর সময় ঋণ পরিশোধের সুযোগ, মরেটোরিয়াম ইত্যাদি।

বলাই বাহুল্য, বড় ঋণগ্রহীতারা আমাদের আদরের সন্তান। খেলাপি হলে তো তারা হয়ে যান ‘পোষ্যপুত্র’। তাদের শত দোষ মাফ হয়ে যায়। না পারলে তারা উচ্চতর আদালতে যান। গিয়ে ‘স্টে অর্ডার’ করার। ব্যাস খালাস। কিন্তু বিপরীতে কৃষকদের ক্ষেত্রে কোমরে দড়ি। আর এনজিওর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গলায় ফাঁস নিতে হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় নয় কি? যারা উৎপাদক, যারা শ্রম দিয়ে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ব্যর্থতায় ফাঁসি অথবা কোমরে দড়ি আর ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ক্ষেত্রে থাকে পুরস্কার! কত ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এমন অবিবেচক দেশ আর কোথায় পাওয়া যাবে? না, পাওয়া যাবে না। তবে এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।

এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব অনেক। অতি সত্বর তাদের এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার। সত্যিকার ঘটনা কী? কার দোষে, কী দোষে পাঁচজন কৃষক আত্মহত্যা করলেন? অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। আর সারা দেশে ‘এনজিওরা’ যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তার ওপরও জরিপ করা হোক। এনজিওদের বাড়াবাড়িতে যাতে কারও প্রাণ না যায়, তার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

কৃষকদের ওপর এখানে বর্ণিত অত্যাচার, তাদের আত্মহত্যার ঘটনা রোধ করা দরকার অনেক কারণে। একটি কাগজের খবরে দেখা যাচ্ছে, দিন দিন খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে। খবরটি শিরোনাম হচ্ছে : ‘খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির গতি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে না’। খবরের ভেতরে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রায় প্রতিটি খাদ্যশস্যের উৎপাদনে গড় প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। এসব খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল শস্য, বেগুন, কুমড়া, মটরশুঁটি, লালশাক, তেল শস্য, কলা, পেয়ারা, আম, আনারস ও কাঁঠাল। সর্বমোট ১৫টি খাদ্যশস্য। প্রতিটি খাদ্য আমাদের জীবন ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শর্করার চাহিদা মেটানো, পুষ্টির চাহিদা মেটানো-এই উভয় ক্ষেত্রেই এই ১৫টি খাদ্যশস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ এগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি না পেয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এগুলোর প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক নয়। এই ১৫টি খাদ্যশস্যের মধ্যে শুধু চালের কথাই ধরি। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে আমাদের টার্গেট ছিল চালের আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। কিন্তু তা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট খবরটিতে বলা হয়েছে। চাল এখনো আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। গমের কথা বাদই দিলাম। কারণ গম আমদানির পরিমাণ অনেক। অথচ চাল ও গমের উৎপাদনে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ঠিক আছে, টাকা থাকলে এসব আমদানি করে খাওয়া যাবে। এখানে প্রশ্ন দুটি : প্রথমত, টাকা থাকতে হবে। টাকা মানে ডলার থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে চাল-গম উদ্বৃত্ত থাকতে হবে। এবারই চাল ও গমের সরবরাহ সংকট দেখা যাচ্ছে। ভারত, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে চাল-গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি প্রায় অনিশ্চিত। সারা বিশ্ব এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছে চাল ও গমের সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছি। খবর বলছে, তা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের পুরো চাহিদা তো এতে মিটবে না। বাকি চাল, গম কোত্থেকে আসবে এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন। সবার উপরে প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমাণ চাল-গম আমদানির জন্য ডলার লাগবে। এ পরিমাণ ডলার আছে কি? দৃশ্যত আমাদের ডলার সংকট দিন দিন বাড়ছে।

আমাদের ডলারের জোগান আসে রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং ঋণ ও সাহায্য থেকে। খবরে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি আগের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন চাকরি নিয়ে। কিন্তু সেই অনুপাতে আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে না। বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ অথবা বিদেশি বিনিয়োগে রয়েছে স্থবিরতা। এ সংকট কাটাতে আমরা আমদানি বাণিজ্যে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছি। আমদানি ব্যয় হ্রাস করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। পরিমাণগতভাবে আমদানি হ্রাস, ‘ওভার ইনভয়েসিং’ হ্রাস ইত্যাদি করছি আমরা।

ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে, এমনকি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ সময়ের মধ্যে আমদানির পরিমাণ ২৫-৩০ শতাংশ কমেছে। স্বস্তির খবর দৃশ্যত। কিন্তু এতে আমাদের শিল্প-ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বড় বড় শিল্প তাদের কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছে না। তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। কাঁচামালের অভাবে পড়েছে অনেক শিল্প। ভোগ্যপণ্যের আমদানি হ্রাসে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। এর মধ্যে খাদ্যশস্যের দাম একটি বড় বিষয়। দেখা যাচ্ছে, এ সময় দরকার বেশি বেশি হারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। তা হচ্ছে না। এসব খবর ভালো নয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d