Trending

নীরব ঘাতক শব্দদূষণ আড়াই গুণ বেশি শব্দ ঢাকার রাস্তায়

নীরব ঘাতক শব্দদূষণের ব্যাপক উপস্থিতি রাজধানী ঢাকা শহরে। ঢাকার বিভিন্ন সড়কের সংযোগস্থলে সরকার নির্ধারিত গ্রহণযোগ্য মাত্রার (মানমাত্রা) চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ পর্যন্ত বেশি শব্দ থাকছে। রাজধানীর নয়নাভিরাম এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসস্থান ও কর্মস্থল মিন্টো রোডে গড়ে সবচেয়ে কম শব্দ পাওয়া গেলেও তা-ও মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণ বেশি।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানীর শব্দদূষণের ওপরের চিত্র উঠে এসেছে।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি গবেষকদল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা শহরের ৭৭টি রাস্তার সংযোগস্থলে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে।

গবেষণায় শব্দের মাত্রা পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে জরিপের প্রতিটি স্থানের ১৫ মিনিটের উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া উপাত্তগুলো সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে শব্দের গড় মাত্রা বের করা হয়।

গবেষণা সম্পর্কে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার শব্দদূষণ কমছে না।

কেননা যানবাহনের হর্নসহ শব্দদূষণের উৎসগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে। বরং শব্দদূষণের সময়ের ব্যাপ্তি আগের তুলনায় বেড়েছে। আমাদের আগের গবেষণায় দেখেছি, ২০১৭ সালে ঢাকায় নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে দিনে শব্দ বেশি থাকত ১০ ঘণ্টাজুড়ে। ২০২৩-২৪ সালে এসে তা ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)। পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির জরিপেও শব্দদূষণের কমবেশি একই চিত্র উঠে আসে।

পরিজার জরিপে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত ‘নীরব এলাকা’তেই সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। যেমন, সচিবালয়ের সামনে দিনের বেলায় নির্ধারিত মাত্রার দ্বিগুণ শব্দ হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিজার সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস  সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নীরব এলাকা সচিবালয়কে দিয়েই ঢাকা শহরের শব্দদূষণের চিত্র বোঝা যায়।

সরকার ঘটা করে সচিবালয়ের সামনের এলাকাকে নীরব হিসেবে ঘোষণা করে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করল। অথচ সেখানেই সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ পেলাম আমাদের জরিপে।’ 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী শব্দদূষণে বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সেবার বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় রাজশাহী ছিল চতুর্থ অবস্থানে। এর আগে ২০১৬ সালে আট বিভাগীয় শহরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চালানো জরিপে দেখা গিয়েছিল ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের শব্দ মানমাত্রার দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

এলাকার ধরন বুঝে শ্রেণিবিভাগ

২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় বিভিন্ন এলাকাকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প  শ্রেণিতে ভাগ করে এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা এজাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত জায়গাকে ‘নীরব এলাকা’ বলা হয়েছে। এখানে যানবাহন চলাচলের সময় হর্ন বাজানো নিষেধ।

বিধিমালায় পরিবারসহ বসবাস করা এলাকাকে আবাসিক; ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও হাটবাজার থাকলে বাণিজ্যিক এবং একাধিক শিল্প ও কল-কারখানাসমৃদ্ধ এলাকাকে শিল্প এলাকা বলা হয়েছে। কোনো এলাকায় আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা সবগুলোর বৈশিষ্ট্য থাকলে তা মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচিত হবে।

গ্রহণযোগ্য মাত্রা যেখানে যেমন

বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় মানমাত্রা দিনে ও রাতে যথাক্রমে ৫৫ ও ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০ ডেসিবল; বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবল।

ক্যাপসের গবেষণার ফলাফল

ক্যাপসের গবেষণায় ৭৭টি রাস্তার সংযোগস্থলে শব্দের গড় মাত্রা পাওয়া গেছে ৯০.২৯ ডেসিবল। অর্থাৎ শহরের প্রতিনিধিত্বশীল সব জায়গাতেই শব্দের তীব্রতা মানমাত্রা ছাড়িয়েছে বড় ব্যবধানে।

রাস্তার সংযোগস্থলগুলোর মধ্যে বরাবর শব্দের সর্বোচ্চ মান পাওয়া গেছে পল্টন মোড়ে। দিনের বেলায় এখানে শব্দের গড় মাত্রা পাওয়া গেছে ১০৫.৩ ডেসিবল। পল্টন মোড়কে বাণিজ্যিক এলাকা ধরে দেখা গেছে, সেখানে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দেড়গুণ বেশি শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম শব্দ পাওয়া গেছে মিন্টো রোডে, ৮০.৫১  ডেসিবল। নীরব এলাকা বিবেচনায় রাতের বেলা এখানে শব্দ দুই গুণ বেশি।

ধারাবাহিকভাবে শব্দের সর্বোচ্চ মান পাওয়া সড়কগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর মোড়।  সেখানে রাতে শব্দের মাত্রা ছিল ১০১.৬৪ ডেসিবল। ১০০.৯৩ ডেসিবল শব্দ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়। এ ছাড়া মিরপুর-১ বাসস্ট্যান্ড, আজিমপুর মোড়, জিপিও মোড়, মালিবাগ রেলগেট, উত্তর বাড্ডা মোড়, আবুল হোটেল মোড় ও ফার্মগেট মোড়ে শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবলের কাছাকাছি ছিল।

অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে শব্দের সর্বনিম্ন মান পাওয়া সড়কগুলোর মধ্যে মিন্টো রোডের পরেই রয়েছে খামারবাড়ি  মোড়। এখানে দিনে ধারাবাহিকভাবে শব্দ পাওয়া গেছে গড়ে ৮১.৭৬ ডেসিবল। তৃতীয় স্থানে রয়েছে এজিবি কলোনি মোড়, যেখানে রাতে শব্দের মান পাওয়া গেছে ৮১.৯৪  ডেসিবল।

বিজয় সরণি, বাংলামোটর, ইসলামপুর, সেগুনবাগিচা, মগবাজার ও প্রেস ক্লাব-হাইকোর্ট মোড়ে শব্দের মাত্রা ৮০ ডেসিবলের ওপরে পাওয়া গেছে।

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শব্দ

জরিপকালীন সাউন্ড মিটার যন্ত্রে শব্দ সর্বোচ্চ ১২৭.৩০ ডেসিবল পর্যন্ত উঠেছিল। মৎস্য ভবন মোড়ে দিনের কোনো এক সময় এই মাত্রার শব্দ রেকর্ড করা হয়। অন্যদিকে সর্বনিম্ন ৫৪.৮ ডেসিবল শব্দ পাওয়া গেছে রাতের বেলায় এজিবি কলোনি মোড়ে।

হাসপাতালেরও রেহাই নেই

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীরব এলাকা। ক্যাপসের জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর সিটি কলেজ মোড় ও শিশু হাসপাতাল মোড়ে রাতে শব্দের গড় মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৯৭.৬৯ ডেসিবল ও ৮৫.৩৬ ডেসিবল, যা মানমাত্রার চেয়ে ২.৪ গুণ ও ২.১ গুণ বেশি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মোড়ে রাতে শব্দের গড় মাত্রা ছিল ৮৩.৪৭ ডেসিবল, যা মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ২.১ গুণ বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে ১.৭ গুণ বেশি শব্দ পাওয়া গেছে। দিনের বেলায় এখানে গড়ে ৮৩.৫৮ ডেসিবল শব্দ রেকর্ড হয়েছে।

শব্দদূষণের উৎস

জরিপের সময়ে যানবাহন থেকে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ক্যাপস। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই যানবাহনের হর্ন, ইঞ্জিন কিংবা ব্রেক চাপা থেকে শব্দদূষণ হয়। এ ছাড়া নির্মাণকাজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান, কলকারখানা, জেনারেটর ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি থেকেও শব্দদূষণ হয়ে থাকে। পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, শব্দদূষণের জন্য প্রধানত যানবাহনের হর্ন দায়ী।

শব্দদূষণের প্রভাব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জনস্বাস্থ্যের ওপর শব্দদূষণের বেশ কিছু বিরূপ প্রভাব চিহ্নিত করেছে।  এগুলো হলোর মধ্যে রয়েছে, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, কার্ডিওভাসকুলার (রক্ত সংবহনতন্ত্র) ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত, কাজের দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, নেতিবাচক সামাজিক আচরণ ও বিরক্তি।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘শব্দদূষণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে খুব কম কাজ হয়েছে। এটি যথাযথ ও বিশদভাবে নিরূপণের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা দরকার।’

সমাধান নিয়ে বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণ

ঢাকার শব্দদূষণের জন্য সরকারের ‘উদাসীনতা ও উন্নয়ন দর্শন’কে বড় করে দেখছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান।

আদিল মুহাম্মদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শব্দদূষণ যে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে তা আমাদের উন্নয়নের মনস্তত্ত্বে নেই। এখানে আইনের প্রয়োগ জরুরি। হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো বন্ধ করুন— বলার চেয়ে এর আমদানি বন্ধ করলেই তো উৎসই বিষয়টির সমাধান হয়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদারকি দরকার।’

২০১৭ সালে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসচেতনতার অভাব ও আইন প্রয়োগে শিথিলতাই শব্দদূষণের মূল কারণ।

অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গাড়িচালকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে প্রশিক্ষণ ও প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করছে। শব্দদূষণ নিয়ে সারা দেশে জরিপও চালানো হয়েছে। শিগগিরই এর ফল প্রকাশ করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি মো. আবদুস সোবহান মনে করেন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও কাজের ধরন যথেষ্ট ও যথাযথ নয়। তিনি বলেন, ‘শুধু প্রকল্প বা ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে কখনো এটা ঠিক করা যাবে না। শব্দদূষণ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আলাদা কোনো শাখা বা লোকবল নেই। এটা একটা বড় প্রশাসনিক ঘাটতি। ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশির ভাগ অভিযান চালায় মফস্বলে। শব্দদূষণ তো বেশি বড় শহরে বা ঢাকায়।’

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালাসহ আইনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়াও এখানে অনেক সংস্থা যুক্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এখানে অন্তত সাত-আটটি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা রয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto