International

নেতানিয়াহুর বর্বরতা চলছেই, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১৪১, ৪৬ হাজার কোম্পানি বন্ধ পতনের মুখে ইসরাইল

ইসিরাইলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে একটি ‘পতনশীল সরকার’ হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটির হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম মা’রিভ। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, গাজায় আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ইসরাইলের অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়েছে এবং অধিকৃত অঞ্চলে (গাজায়) ৪৬ হাজার ইসরাইলি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। আল মায়াদিনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ইসরাইলের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি কোফেস বিডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক (সিইও) ইওয়েল আমির গত বুধবার মা’রিভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ শুরু থেকে অধিকৃত অঞ্চলে ৭৭ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৫ হাজার ছিল ছোট আকারের; যেগুলো সর্বোচ্চ পাঁচজন কর্মচারী দিয়ে পরিচালিত হত। এমনকি চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৬০ হাজার ইসরাইলি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কোফেস বিডিআই’র সিইও। ইসরাইলি সূত্রের বরাত দিয়ে মেহের নিউজ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধের ফলে দখলকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাত বিশেষ করে শিল্প, পর্যটন, কৃষি ও সেবা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অঞ্চলগুলোতে এখন বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসারে, ইসরাইলি কোম্পানিগুলো খুব কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রমের ঘাটতি, বিক্রয় হ্রাস, সুদের উচ্চ হার, পরিবহন ও কারিগরী সমস্যা, কাঁচামালের ঘাটতি এবং যুদ্ধকবলিত অঞ্চলে কৃষি জমিতে প্রবেশাধিকারের ঝুঁকি এবং সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অধিগ্রহন খরচ। এদিকে ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দখল করা ভূখণ্ডে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর রকেক ও ড্রোন হামলা স্থানীয় ব্যবসাকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারণ এসব হামলার কারণে হাজার হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে তাদের বসতি সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে লেবাননের সঙ্গে যে কোনো পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ইসরাইলের অর্থনীতিকে পতনের অতল গহ্বরে নিয়ে যাবে বলেও উদ্বেগও সৃষ্টি হয়েছে। মা’রিভের প্রতিবেদন অনুসারে, হিজবুল্লাহ সম্প্রতি তাদের হুদহুদ ড্রোনের সাহায্যে ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা ইসরাইলের জ্বালানি অবকাঠামো, যেমন- তেল শোধনাগার এবং গ্যাস ট্যাঙ্কগুলোতে যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে।

অন্যদিকে ইয়েমেনি সামরিক বাহিনী ও হুথিদের নৌ-অভিযানও ইসরাইলের অর্থনীতি ধ্বংসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসরাইলি সূত্র মতে, হুথিদের হামলার ফলে দেশটির প্রধান বন্দর ইলাতের রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী ফিলিস্তিনের অসহায় ও নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করেছে। অন্যদিকে গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো এবং লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে যে, তারা দখলদার ইসরাইলি সরকারের কাছ থেকে এসব অপরাধের মূল্য আদায় করবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৮৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

যার মধ্যে গত দু দিনেই হতাহত হয়েছেন চার শতাধিক। অপর এক খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বর্বর ইসরাইলিদের হামলায় আরও অর্ধশতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি মানুষ নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ৩০০ জন। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান হামলায় আরও ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ৩০০ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ধারাবাহিক এই হামলায় অন্তত ৮৮ হাজার ২৪৫ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৪১ জন নিহত এবং প্রায় ২০৮ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব জানালেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ কয়েক হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিন বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইলিদের আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের পাশাপাশি গাজার মানুষজন এখন চরম খাদ্য সংকটের মধ্যেও দিনানিপাত করছেন। মা’রিভ, আনাদোলু এজেন্সি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button