Hot

নেতার উচ্চাভিলাষ দলের বিনাশ

‘নির্বাচনের ডামাডোলে আমরা আসল কাজ থেকে দূরে সরে গিয়েছি বলে একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমার মনে হয়’ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এক কর্মীর ফেসবুক স্ট্যাটাস এটি। প্রায় দুই দশক ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা দলটি এবার দুটি আসনে ছাড় পেয়ে একটি আসনে জয় পেয়েছে।

দলটির এই কর্মীর স্ট্যাটাস বলে দিচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টির করণীয় থেকে তারা দূরে সরে গেছে। এমন উপলব্ধি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের অন্য শরিকদের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের অন্যতম দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু পরাজিত হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে।

জোটবদ্ধ রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের শরিক ছোট দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা তলানিতে পৌঁছেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ভঙ্গুর অবস্থা আরও বেশি ফুটে উঠেছে। শুধু সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বলই হয়নি, ছোট দলের বড় নেতাদের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গত দেড় দশকে দলগুলোর কয়েকজন নেতা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হলেও দলে ভাঙন কাবু করে ফেলেছে তাদের।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত নেতারা দরকষাকষি করেও খুব একটা সুবিধা পাননি। মাত্র ছয়টি আসনের বেশি ছাড় পেয়েছে তিনটি দল। তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির দুই নেতা ছাড় পেয়ে জয় পেয়েছেন শুধু সভাপতি রাশেদ খান মেনন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। একাদশ সংসদ তিনজন সদস্য ছিল দলটির। দশম সংসদে ছিল পাঁচজন।

জাসদ তিনটি আসনে ছাড় পেলেও জিতেছেন শুধু রেজাউল করিম তানসেন। জাসদ সভাপতি ছাড়াও হেরেছেন তার দলের আরেক নেতা। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও এবার জিততে পারেননি। তারা হেরেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। ভোটের আগেই জোটের নেতারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহার চাইলেও রাজি হয়নি ক্ষমতাসীন দলটি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০০৮, ’১৪ ও ’১৮ সালের টানা তিনটি নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও নিজেদের মাঠের শক্তির চেয়ে ১৪ দলের শরিকরা বেশি সুবিধা পেয়েছে।

রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণে দলগুলো তাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়নি।

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলগুলোর নেতারা ছাড় পাওয়া আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।

জোটের শরিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয়। এরপর থেকে জোটবদ্ধ আন্দোলন ও নির্বাচন করে আসছে দলগুলো।

জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তার নেতৃত্বাধীন দলটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পেরেছেন চারজন। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সবগুলোতেই দলটির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনী প্রতীক চাকা নিয়ে দিলীপ বড়ুয়া চারটি জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন তিনি।

১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত পার্টির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দিলীপ বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এখনো সেই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশে ৩৪টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও ২৬টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। কিন্তু দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই নাজুক। ২০১৪ সালে দলটি ভেঙে সাইদ আহমদের নেতৃত্বে একাংশ বিএনপি জোটে যোগ দেয়।

জানতে চাইলে দিলীপ বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৪-দলীয় জোটে আসার পর আমার দলের অবস্থা এগিয়েছে নাকি পিছিয়েছে সেটার মূল্যায়ন এখনো আমরা করিনি। আমরা শিগগিরই বসে মূল্যায়ন করব।’

দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশাহিদ আহমেদ বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে আমরা ঐক্য করেছিলাম। মন্ত্রিত্বের কারণে দলের হয়তো কিছু কর্মী-সমর্থক বেড়েছে। কিন্তু দলের রাজনৈতিক মান বাড়েনি।’

১৪-দলীয় জোটে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), কমিউনিস্ট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ছাড়া বাকি সবগুলোরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে।

তথ্য বলছে, ২০১২ সালে মহাজোটের সরকারে মন্ত্রিত্ব পান জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর রাশেদ খান মেনন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও তথ্যমন্ত্রী হন ইনু। বাদ পড়েন দিলীপ বড়ুয়া। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে সরকারে আর জোটসঙ্গীদের রাখেনি আওয়ামী লীগ। একাদশ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ১৩টি আসনে, দশম জাতীয় সংসদে ১১টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়।

জোটের ১৪টি দলের মধ্যে অন্তত ৫টি দলে ভাঙন ধরেছে এ সময়ে। এগুলো হলো ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল ও ন্যাপ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪-দলীয় জোটে আসার পর ওয়ার্কার্স পার্টি তিনবার ভেঙেছে। ১৯৯২ সালে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সাম্যবাদী দল ও ওয়ার্কার্স পার্টির সমন্বয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ১৯৯৪ সালে টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে জাতীয় গণফ্রন্ট নামে আলাদা দল গঠন করে। ২০০৪ সালে সাইফুল হকের নেতৃত্বে একটি অংশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করে। দলটি এখন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। আর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন ও সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দলের পলিটব্যুরোর আরেক সদস্য হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠিত) নামে আলাদা দল গঠন করা হয়। রনো পরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিবি) যোগ দেন। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়েন বিমল বিশ্বাস। ওই বছর মেননের নেতৃত্বে থাকা ওয়ার্কার্স পার্টির দশম কংগ্রেস বর্জন করে কয়েকজন নেতা যশোরে ১১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করেন। ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী)’ নামের এই দলটি বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সঙ্গে একীভূত হয়।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবার ২৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দলটির পলিটব্যুরোর সদস্য নূর আহমেদ বকুল বলেন, ‘৫৭ জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে। সব কমিটিরই মেয়াদ রয়েছে।’

জোটে যোগ দেওয়ার আগে জাসদও ভেঙেছে। ২০১৬ সালে শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, প্রয়াত মাঈনুদ্দীন খান বাদলসহ জাসদের ছয় এমপির চার এমপি মিলে নতুন দল বাংলাদেশ জাসদ গড়ে তোলেন।

জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে তা নিয়েই আমরা এগোচ্ছে। চেষ্টা করছি দলীয় কার্যক্রম আরও সক্রিয় করতে।’

দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন দাবি করেন, ‘৭৮টি সাংগঠনিক জেলা থাকলেও সারা দেশের ৬০টি জেলায় সম্মেলন হয়েছিল ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে। গত চার বছরে নতুন করে আট-নয়টি জেলার সম্মেলন হয়েছে।’

প্রতিষ্ঠার পর অন্তত সাতবার ভেঙেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। তবে ১৪ দলে যোগ দেওয়ার পর ভেঙেছে একবার। মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে জোটে যোগ দেয় দলটি। তার মৃত্যুর পর ২০২১ সালে ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় ন্যাপ। আইভী আহমেদের নেতৃত্বাধীন অংশটি ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আছে। এনামূল হকের নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামে আরেকটি দলও সক্রিয়।

আইভী আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় শীর্ষ নেতারা অসুস্থ থাকা দলীয় কার্যক্রম তেমন হয়নি। আড়াই বছর আগে দায়িত্ব নিয়ে সক্রিয় করার চেষ্টা করছি।’

বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে এক দফা ভেঙেছিল গণতন্ত্রী পার্টি। তিনি পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৪ দলে যোগ দেওয়ার আগে তৎকালীন সভাপতি আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা ভাঙন হলেও আবার ঐক্যবদ্ধ হয় দলটি। এবার তারা ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী বলেন, ‘৫১টি জেলার কার্যক্রম রয়েছে। তবে কী অবস্থায় আছে তা জেনে জানাতে হবে।’

তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এবার আসন ছাড় পাননি। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জোটে যোগ দেওয়ার পর না ভাঙলেও ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রথম মহাসচিব এমএ আউয়ালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আউয়াল পরের বছর ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করেন। গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এর মধ্যে গত বছর অক্টোবরে দলটির সভাপতি জাকির হোসেন মারা গেছেন। অন্যদিকে গণ-আজাদী লীগে কার্যক্রম অনেকটাই ঘরোয়া রাজনীতিকেন্দ্রিক।

এরশাদের জাতীয় পার্টি ভেঙে আলাদা হওয়া জেপিও সাংগঠনিকভাবে আর শক্তিশালী নয়। পিরোজপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। এবারের নির্বাচনে তিনি আর জিততে পারেননি। দলটি এবার ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ছোট ও নামসর্বস্ব এই দলগুলো বেশিরভাগই সুবিধাবাদী।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘১৪-দলীয় জোটে দুয়েকটি ছাড়া অনেকেরই জনভিত্তি আগে থেকেই শক্তিশালী ছিল না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor