Bangladesh

নৌকার ‘চক্ষুশূল’ স্বতন্ত্র

নির্বাচনের শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ জুগিয়ে আসছিল সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর অন্যতম কৌশল হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নামানো হয় মাঠে। তবে নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহ্য করতে পারছেন না সরকারদলীয় প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার পরও সহিংসতার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার পরিসংখ্যানেও মিলেছে এর সত্যতা। গেল ১০ দিনে ৩৩ জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও নির্বাচনী অফিসে ১১৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।  

গত ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর থেকেই সহিংসতার খবর আসতে শুরু করে। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী অপহরণের চেষ্টা ও সরাসরি প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পেরেছেন, সেখানেই হামলার ঘটনা বেশি হচ্ছে। যশোর-১ আসনে নৌকার প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী যশোর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মোটা দাগে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতার খুব বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে খুব বেশি অভিযোগও কমিশন পায়নি বলে তিনি জানান। 

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ৩০০ আসনের এই নির্বাচনে ২২১ আসনে ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি আসনে নৌকার সঙ্গে সমানতালে লড়াই চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৫ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হবে প্রচার। ৭ জানুয়ারি রোববার সকাল ৮টায় শুরু হবে ভোট গ্রহণ।

ইসি এবার প্রথমবারের মতো ৩০০ আসনেই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে। ইসির আইন শাখার তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ কমিটি ৫২০টি ঘটনার তদন্ত করেছে। এতে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই এমপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা, দুই এমপিকে অর্থদণ্ড দেওয়াসহ অনেককেই সতর্ক করা হয়েছে। আচরণবিধির লঙ্ঘন ঠেকাতে প্রার্থিতা বাতিলের হুমকিও দিয়ে আসছিলেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার। 

এ ছাড়া ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আবদুল হাই এমপির বিরুদ্ধে আবারও মামলার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢুকে ছবি ভাঙচুর ও পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এর আগে ইসির নির্দেশনায় ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আলাদা দুটি মামলা করেন শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তায়জুল ইসলাম। একটি মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার পাবনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মকবুল হোসেনের সমর্থক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ‘যারা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম’– মর্মে হুমকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে ইসি মামলার সিদ্ধান্ত নেয়।

সংঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে কমিশন শুরুতে নিজেরাই আইনের অনেক অপব্যাখ্যা বা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জানেন– বর্তমান কমিশন শক্ত পদক্ষেপ, অর্থাৎ প্রার্থিতা বাতিলের হুমকি দিলেও এমন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। তাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের নিজ দলের নেতাকর্মী হলেও ছাড় দিতে রাজি নন। এসব ঘটনা ঠেকানো না গেলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আরও কমে যাবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

জেলায় জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলা
বরিশাল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। গত রোববার রাতে মেহেন্দীগঞ্জের সাদেকপুরে এ ঘটনা ঘটে। তাঁর নির্বাচনী সমন্বয়ক মনির হোসেন চাপরাশী দাবি করেন, ড. শাম্মী আহমেদের সমর্থকরা ক্যাম্পটি ভাঙচুর করে। দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগের ড. শাম্মীর প্রার্থিতা। এ ছাড়া বরিশাল-৬ আসনের নেয়ামতি ইউনিয়নে গত বুধবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম চুন্নুর (ট্রাক) নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এর আগে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে তাঁর আরেকটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়। দুটি ঘটনার জন্য নৌকার প্রার্থী হাফিজ মল্লিকের সমর্থকদের দায়ী করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চুন্নু।

বগুড়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের সমর্থক রিজভী আহম্মেদকে ভেলুরপাড়া এলাকায় গত রোববার রাতে মারধর করা হয়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন। তিনি নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নানের অনুসারী। বগুড়া-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর কাহালু বাজারে ওই হামলায় তিনজন আহত হন। এর আগের দিন নন্দীগ্রামে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের অনুসারী বলে অভিযোগ করেছেন হিরো আলম।

সিরাজগঞ্জে গত ১০ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর সাতটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এনায়েতপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সমর্থক চান মিয়াকে মারধর করা হয়। বেলকুচির মুকুন্দগাতী কড়িতলায় মারধর করা হয় তাঁর আরেক সমর্থক ইমন শেখকে। ২৮ ডিসেম্বর মুকুন্দগাতী বাজারে তাঁর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়। পরদিন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের তাড়াশে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সুইটের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। গত ২৬ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের শাহজাদপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হালিমুল হক মিরুর সমর্থক কালু ফকিরকে মারধর করে নৌকার সমর্থকরা।

জয়পুরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ক্ষেতলালের ইটাখোলা বাজার ও ২৭ ডিসেম্বর আক্কেলপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। 

চট্টগ্রাম-১২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর কর্মীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর গাড়িবহরে গুলি করা হয়। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ১২টি গাড়ি ও সাতটি নির্বাচনী ক্যাম্প। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের সমর্থকদের মধ্যে অন্তত ১০টি হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয় কমপক্ষে ২০ জন। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে মুন্সিরহাট বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর কর্মীদের ওপর নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার কর্মীরা হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের জলদী উপজেলায় গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকরা। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের ওপর কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর খৈয়াছড়া এলাকায় গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। এতে দিল মোহাম্মদ অপু নামে তাঁর এক সমর্থক আহত হন। গত ২৭ ডিসেম্বর বালিয়াদি এলাকায় মো. রাকিব নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে পিটিয়ে আহত করে নৌকার সমর্থকরা। 

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গত ২৯ ডিসেম্বর তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী উশ্যেপ্রু মারমার সমর্থকদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও দুটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। 

কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ) আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল বশরের লিফলেট ও পোস্টার কেড়ে নিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেন জেলা পরিষদ সদস্য জাফর আহমদ। সোলতান মাহমুদ নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেক সমর্থককেও একই হুমকি দেওয়া হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর হাবিরছড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিটুর (ঈগল) সমর্থকদের ওপর চার দফা হামলা চালায় নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থকরা। এসব হামলায় অন্তত ২২ জন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় সাতটি গাড়ি ও ২০টি মাইক। এদিকে গত ২৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে হোমনার দৌলতপুরে কুমিল্লা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মজিদের (ট্রাক) সমর্থকদের ১৬টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। নৌকার প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরীর সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। 

ফরিদপুর-৩ আসনে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের কর্মী-সমর্থকরা নানা হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতির সম্মুখীন হচ্ছে। একই সঙ্গে ঈগল মার্কার ক্যাম্প অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গত ২৪ ডিসেম্বর গেরদায় ঈগলের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর এবং কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। এতে আহত হন দু’জন। তারা হলেন– অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক জুনায়েদ হোসেন ও শেখ খবির। স্থানীয় চেয়ারম্যান এমার হকের নেতৃত্বে ওই হামলার ঘটনায় আসামি তোফাজ্জল হোসেন সম্রাটকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এমার হক ও হাসিবুর রহমান জেমি। 

গত ২৬ ডিসেম্বর শহরের মামুদপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুর চালায় নৌকার সমর্থকরা। এ সময় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঈগল মার্কার ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান ঝনককে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। গুরুতর আহত ঝনক রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর বাইরে ঈশান গোপালপুরে ঈগল মার্কার ক্যাম্পে ৩ দফা হামলা, ভাঙচুর ও কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর ২০টি হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

গোপালগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাবির মিয়ার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে মুকসুদপুরের নওহাটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন সমর্থক আহত হয়। 

রাজবাড়ী-২ আসনে গত ৩০ ডিসেম্বর কালুখালীর গাংবথুনদিয়া গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হকের নির্বাচনী ক্যাম্পের কাছে ককটেল ফাটানো হয়। একই দিন নেয়ামতপুর মোড়ে তাঁর প্রচার মাইকের ভ্যানচালক মো. কলমকে মারধর করা হয়। 

শরীয়তপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী সুরেশ্বর মাজারে যাওয়ার সময় তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়। এতে চারজন আহত হয়। এ ছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর নড়িয়ার পাইকপাড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িবহরে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর বাঁশতলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার সময় ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন আহত হয়। 

খুলনা-৪ আসনে গত ৩০ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম মোর্তজা রশিদী দারার কর্মী মাহফুজুর রহমানকে পিটিয়ে নাক ফাটিয়ে দেয় নৌকার সমর্থকরা। মোর্তজা রশিদীর অভিযোগ, সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী আবদুস সালাম মুর্শেদীর নির্দেশেই এ হামলা হয়েছে। 

বাগেরহাট-৩ আসনে গত ২৬ ডিসেম্বর মোংলার চায়না মার্কেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদারের অফিস ও তাঁর কর্মীদের তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরদিন ইদ্রিস আলী এ ঘটনার জন্য নৌকার প্রার্থী হাবিবুন নাহারকে দায়ী করেন।

যশোর-৫ আসনে মনিরামপুরের ঝাঁপা উত্তরপাড়ায় গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর নির্বাচনী কার্যালয়ে নৌকার প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্যের কর্মী-সমর্থক ভাঙচুর চালায়। এতে আহত হয় ১৫ জন।

মেহেরপুরের মুজিবনগরের বাগোয়ান গ্রামে গত ৩০ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থীর সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর চার কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় পরদিন পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।

ঝিনাইদহ-২ আসনের বাসুদেবপুর বাজারে গত ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের তিন কর্মী আহত হয়। এ সময় দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া হরিণাকুণ্ডুর শাখারীদহ বাজারে গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিন সমর্থক আহত হয়। পরদিন সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী মহুলের নির্বাচনী অফিসে হামলা এবং ছয় সমর্থককে পিটিয়ে আহত করা হয়।

গাজীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলের পথসভায় একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। কালিয়াকৈরের বোয়ালি এলাকায় তাঁর পথসভায় নৌকার কর্মী-সমর্থকের হামলায় সাতজন আহত হয়। এ ছাড়া আটাবহ এলাকায় তাঁর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। গাজীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকের ওপর অন্তত ১০টি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুর-৩ আসনে নৌকার কর্মী-সমর্থক ১৫টি স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও মঞ্চ ভেঙে পুকুরে ফেলে। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লবের সমর্থকের বাড়িতে গুলিবর্ষণ ও চার দফা হামলায় ৯ জন আহত হয়। এ ছাড়া তাঁর প্রচার মাইক ও পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। 

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী এমপি আফজাল হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পালের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনায় তিন কর্মী আহত হয়। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

টাঙ্গাইল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। 

নরসিংদী-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকের ওপর গত সেমবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী সেলিম আহমেদের সমর্থকদের ওপর দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

ময়মনসিংহ-২ আসনে গত ২৯ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ারের কর্মীদের ওপর হামলা করে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের লোকজন। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্তত আট কর্মী আহত হয়। 

ময়মনসিংহ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোমনাথ সাহার তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও গত রোববার দুই কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। নৌকার সমর্থকরা এসব ঘটিয়েছে বলে সোমনাথ সাহার অভিযোগ। ময়মনসিংহ-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের সমর্থককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয় নৌকার প্রার্থীর লোকজন। গত ২০ ডিসেম্বর সুন্দাইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-১০ আসনে গত রোববার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন দীপুর গাড়িবহরে হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়। ময়মনসিংহ-১১ আসনে গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ ওয়াহেদের প্রচার ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়। ২৫ ডিসেম্বর পানিহাদী এলাকায় তাঁর প্রচার গাড়িতে হামলা ও কর্মীদের মারধর করা হয়।

নেত্রকোনা-১ আসনে গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে নৌকার প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রুহীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়। নেত্রকোনা-২ আসনে শহরের সাতপাই এলাকায় ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফ খান জয়ের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

জামালপুর-৪ আসনে গত ২৫ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি ডা. মুরাদ হাসানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও তাঁর সমর্থকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন কর্মী আহত হয়। জামালপুর-৫ আসনে গত ২৬ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনুর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা। গত ২৫ ডিসেম্বর শহরের বউবাজার এলাকায় তাঁর আরেকটি প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর করে নৌকার সমর্থকরা।

রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সমর্থক সোহেল রানাসহ ৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। রাজশাহী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি এনামুল হকের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ ডিসেম্বর দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় দু’পক্ষের ৯ জন আহত হয়। এ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর মাদারিগঞ্জ বাজারে দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে মারামারিতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। রাজশাহী-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের দুটি নির্বাচনী অফিসে ককটেল হামলা ও একটি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২৪ ডিসেম্বর বানেশ্বর অফিসে ককটেল হামলা হয়।

রংপুরের মিঠাপুকুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের সমর্থকের ওপর নৌকার সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। এতে আহত হয় অন্তত ১০ জন। গত ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে জায়গীরহাট বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।

সিলেটে গত রোববার বিকেলে কানাইঘাট বাজারে হামলার শিকার হন সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলীর সমর্থক আহমদ আল মাসুদ। নৌকার কর্মীরা তাঁর মোটরসাইকেল আটকিয়ে মারধর করে বলে জানিয়েছেন তাঁর নির্বাচনী প্রচার কমিটির সমন্বয়ক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী।

পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুল হক টুকু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাইয়িদের সমর্থকদের মধ্যে তিন দফা সংঘর্ষ ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

নাটোরের সিংড়ায় নৌকার প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের ৯ সমর্থক আহত হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাতপুকুরিয়া বাজারে গণসংযোগের সময় এ ঘটনা ঘটে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ শিবগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলামের তিনটি নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

নওগাঁর ছয়টি সংসদীয় আসনের সবক’টিতে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d