ন্যাটো সদস্যদের সামরিক বাজেট জিডিপির ৫ শতাংশ চান ট্রাম্প
ট্রাম্প তাঁর নতুন পররাষ্ট্রনীতি গঠনের কাজ করছেন। সেখানে ইউরোপ ও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে তাঁর সরকারের নীতিমালা কী হবে— তা গঠন করা হচ্ছে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই চাওয়া— দেশগুলোকে তাঁর টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছেন বলেও তাঁর সহযোগীরা।
চলতি মাসে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র-বিষয়ক শীর্ষ সহযোগীদের সঙ্গে ইউরোপের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এক আলোচনা হয়, সেখানে ট্রাম্পের অভিপ্রায় তুলে ধরেন তারা।
ওই আলোচনার বিষয়ে অবহিতরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প তাঁর নতুন পররাষ্ট্রনীতি গঠনের কাজ করছেন। সেখানে ইউরোপ ও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে তাঁর সরকারের নীতিমালা কী হবে— তা গঠন করা হচ্ছে। আলোচনাটি ছিল তারই অংশ।
ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের উদ্বেগ কমানোও আলোচনার একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। কারণ, নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে— অতি দ্রুত কিয়েভকে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রাম্প মনে করেন, ইউরোপের প্রতিরক্ষার সিংহভাগ দায় ইউরোপীয় দেশগুলোরই নেওয়া উচিৎ, অথচ ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে এজন্য ব্যয় বেশি করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা মোটেও ন্যায্য নয়।
নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প তাই আরও বলেছিলেন, যথেষ্ট হারে প্রতিরক্ষা ব্যয় না বাড়ালে— যুক্তরাষ্ট্র তাদের অরক্ষিত রেখে চলে আসবে। ট্রাম্পের এসব কথায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার ঝড় ওঠে ইউরোপের রাজধানীগুলোতে।
ইউক্রেন যুদ্ধ বিপুল ব্যয়বহুল এক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। সিংহভাগ খরচ যেখানে ওঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তবে সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে, এই ভার ওঠানো ইউরোপের পক্ষে কঠিন হবে। এই অবস্থায়, ট্রাম্প টিমের আশ্বাসে ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরেও ট্রাম্প কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এসব সহযোগীরা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে যা নিশ্চিত করেন তিনজন কর্মকর্তা, যাদেরকে এই আলোচনা সম্পর্কে তাঁদের দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে।
তাঁরা বলেছেন, বর্তমানে প্রতিরক্ষা বাবদ জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করছে ইউরোপের ন্যাটো সদস্য দেশগুলো। যদিও ৩২ সদস্যের জোটের মধ্যে কেবল ২৩টি দেশই এই শর্ত পূরণ করতে পারছে। তবে ট্রাম্প চান, এটা তারা দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে অন্তত ৫ শতাংশ করুক।
ওই কর্মকর্তাদের একজন বলেন, জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশ হারে ব্যয়ের প্রস্তাবে ট্রাম্প শেষপর্যন্ত রাজী হতে পারেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। ইউরোপের উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সাথে বাণিজ্য সুবিধা নেওয়াকেও তিনি পরে যুক্ত করতে পারেন।
আগামী বছরের জুনের মধ্য প্রতিরক্ষা ব্যয় ৩ শতাংশে উন্নীত করতে এরমধ্যেই আলোচনা করছে ন্যাটো সদস্যরা; তবে এজন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে অর্থনৈতিক গতিমন্থরতার মধ্যে অনেক দেশই হিমশিম খাবে।