Hot

পঞ্চপাণ্ডবে ধ্বংস বিদ্যুৎ খাত

বিদ্যুৎ খাতে তাঁরা পরিচিত ছিলেন পঞ্চপাণ্ডব নামে। এই পাঁচজনই ছিলেন বিদ্যুৎ খাতের অর্থ লেনদেনের মূল নিয়ন্ত্রক। প্রকল্প গ্রহণ, কারো পদায়ন বা বিদ্যুত্সংক্রান্ত কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন তাঁরা। তাঁদের হাতেই চলত দেশের বিদ্যুৎ খাত।

তাঁরা লুটেছেন বিপুল অর্থ। পঞ্চপাণ্ডবের গডফাদার ছিলেন তিনজন। গডফাদারদের কমিশন দিতেন বলে তাঁদের অপকর্মের জবাব দিতে হতো না। এককথায় তাঁরা ছিলেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।

বিদ্যুৎ খাতে এই পঞ্চপাণ্ডব ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক এবং সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সামিট গ্রুপের আজিজ খান ও এস আলম। এই পাঁচজনই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সর্বনাশের হোতা। বিদ্যুৎ খাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সব কিছু করা হয়েছে তাঁদের লুটপাটের নীতিকে মুখ্য রেখে। বিদ্যুতে যেখানেই তাঁরা লুটপাটের সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই তাঁরা চেটেপুটে খেয়েছেন।

বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পূর্ণতার ঢোল বাজিয়ে আসলে বিদ্যুৎ খাতের বারোটা বাজিয়েছেন তাঁরা।

অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, পঞ্চপাণ্ডবের তিনজন গডফাদারকে কমিশন দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে নির্বিচারে লুণ্ঠন করতে পেরেছিল পতিত স্বৈরাচার সরকার। এই তিনজন মাফিয়া হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিন গডফাদার ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অপত্য ছত্রচ্ছায়ায়। বিদ্যুৎ খাতের এই লুণ্ঠনের চিত্র বড় ভয়ংকর ও বড় সর্বনাশা। এখন পর্যন্ত তার পুরো কাহিনি বা ইতিহাস কেউ উদ্ধার করতে পারেনি। তবে যেসব হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তা শুধু দেশের স্বার্থবিরোধীই নয়, রীতিমতো আতঙ্কও ছড়ায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রথমত কুইক রেন্টাল, দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ খাতে ভারতনির্ভরতা, তৃতীয়ত উৎপাদন ও বিতরণ, চতুর্থত রূপপুর কেলেঙ্কারি এবং পঞ্চমত এলএনজি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে লুণ্ঠন করা হয়েছে।

দুর্নীতি-১ : কুইক রেন্টাল : প্রায় সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তার বেশির ভাগই কোনো কাজে লাগেনি। সরকারি হিসাবে উৎপাদনক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, তার যথাযথ হিসাবও ছিল না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে।

প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় করা হয়েছে দুই হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় (১ ডলার প্রায় ১২১ টাকা ধরলে) বাংলাদেশি মুদ্রায় তার পরিমাণ তিন লাখ ৪২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। একই সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুট করা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল অর্থ নিয়ে গেছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশির ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা বা তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। ক্যাপাসিটি চার্জ লুণ্ঠনের আবিষ্কারক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন আমলা আবুল কালাম আজাদ। কুইক রেন্টাল মানেই ‘কুইক মানি’। এই আবিষ্কারের মাধ্যমেই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হন আবুল কালাম আজাদ। ফলে একসময় তাঁর ওপর তুষ্ট হয়ে তাঁকে বিদ্যুৎসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর সাগ্রহেই দায়মুক্তির আইন করা হয়। অর্থাৎ কোনো ধরনের লুটপাটের বিচার না করার সুযোগ তৈরি করা হয়। জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদকে কমিশন দিলেই মিলত কুইক রেন্টালের অনুমতি। আওয়ামী লীগের বড় নেতা, পাতি নেতা অনুগত ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন কুইক রেন্টালের লাইন্সেস। এমনকি আসবাব নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অটবির মতো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ওমর ফারুক চৌধুরী, আলাউদ্দিন নাছিম চৌধুরী, প্রয়াত আসলাম উল হকসহ ৬৩ জন নেতাকর্মী কুইক রেন্টাল স্থাপনের অনুমতি পান। অনুমতি পেয়েই কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাঁরা কাগজ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কমপক্ষে চারবার হাত বদল করা হয়েছে। একই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্রি হয়েছে একাধিকবার। যেমন—আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে দেওয়া একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইন্সেস পাঁচ কোটি টাকায় বিক্রি করেন আসলাম হকের কাছে। আসলাম হক আবার এটি বিক্রি করেন সিকদার গ্রুপের কাছে। নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু পান দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ ছাড়া শরীয়তপুরের সাবেক এমপি নাহিম রাজ্জাক, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাই আবদুস সালাম, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি তানভীর হাসান (ছোট মনির), সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমান, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এমপি এনামূল হক একটি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পান। কুইক রেন্টালের নামে চিরস্থায়ী লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয় আইন করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চলুক আর না চলুক, সরকারকে নিয়মিত দিতে হবে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’। এই লুটপাটের অর্থ তিন ভাগ করা হয়েছে। বড় অংশ নিয়েছেন তিন গডফাদার। তারপর পঞ্চপাণ্ডব আর বাকিটা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ আইনের কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৮৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ১৪ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে সরকার প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব যোগ করলে তা এক লাখ কোটি টাকার বেশিই হবে।

তথ্য মতে, ওই সময়ে সরকার পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম সামিটকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দেয় প্রায় ১০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশ। সামিটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। জয়ের কারণে বিদ্যুৎ খাতে ‘ডন’ হয়ে উঠেছিল সামিট গ্রুপ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক কম্পানি এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল। এই কম্পানিকে দেওয়া হয়েছে সাত হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল আসলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করেছে। এগ্রিকোর লুট করা বেশির ভাগ অর্থ পেতেন ববি। এগ্রিকোর বাংলাদেশে ছায়া এজেন্ট ছিলেন এস আলম। সাত হাজার ৫২৩ কোটি টাকা পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে চীনা কম্পানি এরদা পাওয়ার হোল্ডিংস। এরদা পাওয়ারের বাংলাদেশে অঘোষিত এজেন্ট ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। চতুর্থ স্থানে থাকা দেশি কম্পানি ইউনাইটেড গ্রুপকে দেওয়া হয় ছয় হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। পঞ্চম স্থানে থাকা রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডকে (আরপিসিএল) দেওয়া হয় পাঁচ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বাংলা ক্যাট গ্রুপ নিয়েছিল পাঁচ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। মাত্র তিন বছর আগে উৎপাদন শুরু হওয়া বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে গড়ে ওঠা পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পেয়েছে চার হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অন্য একটি গ্রুপকে চার হাজার ৫২৫ কোটি টাকা এবং খুলনা পাওয়ার কম্পানিকে (কেপিসিএল) চার হাজার ৫৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কম্পানির ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিট গ্রুপের কাছে এবং ৩৫ শতাংশ ইউনাইটেড গ্রুপের কাছে। বাকি ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। ফলে খুলনা পাওয়ারের ক্যাপাসিটি চার্জের বড় অংশই গেছে সামিট ও ইউনাইটেডের কাছে।

দুর্নীতি-২ : বিদ্যুৎ খাতে ভারতনির্ভরতা : আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে স্বনির্ভরতার বদলে ভারতনির্ভরতা ছিল লক্ষণীয়। আদানি ও রিলায়েন্সের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রধান কারণ ছিল গডফাদারদের কমিশন। আর এই কমিশনের টাকা পেতেন শেখ রেহানা। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে গিয়ে ৯ বছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। ওই বছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রায় ৫০১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি বাড়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে দাঁড়ায় ৯২২ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যুৎ আমদানি কিছুটা বাড়ে, সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জও। ওই অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয় এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি আরো বাড়ানোর চুক্তি হয়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ একলাফে বেড়ে এক হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর মিলিয়ে আমদানির বিপরীতে চার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়।

দুর্নীতি-৩ : উৎপাদন ও বিতরণে লুটপাট : বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছে। মিটার কেনাকাটা করা হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য সারা দেশে বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের নামে বাড়তি টাকায় প্রকল্প নেওয়া হয়। এগুলোর সঠিক তথ্যও নেই। ২০ কূপের খননকাজ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানি গাজপ্রমকে দেওয়া হয় প্রতিটি দুই কোটি ডলারের বেশি দামে। কিন্তু বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এটি এক কোটি ডলারে করতে পারত। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে সরকারের নির্দেশে গঠিত দুর্নীতির শ্বেতপত্রে। এই প্রতিবেদন বলছে, একই গোষ্ঠীর বিভিন্ন কম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতার নামে দরপত্র ডেকে কাজ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে সাবকন্ট্রাক্ট হিসেবে। এই লুটপাটের টাকার বেশির ভাগ নিতেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। বিপুর কিছু অর্থ ব্যয় হতো ববির সিআরআই পরিচালনার জন্য।

দুর্নীতি-৪ : রূপপুর কেলেঙ্কারি : অভিযোগ পাওয়া গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কাজে সহায়তা করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। গত ১৭ আগস্ট গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাশিয়ান রোসাটমের কাছ থেকে সোভিয়েত আমলের পারমাণবিক চুল্লি কিনতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ ব্যয় ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার ব্যাংকে রক্ষিত বিভিন্ন রাশিয়ান স্ল্যাশ ফান্ড থেকে এই পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তরে শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। এতে মধ্যস্থতা করেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় ও টিউলিপ সিদ্দিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় তা বহুগুণ বেশি। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় রোসাটম। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পান টিউলিপ, শেখ রেহানা এবং পরিবারের কয়েকজন।

২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকালে সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ। ওই সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনি।

২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামের ভুয়া কম্পানি চালু করেন টিউলিপ, তাঁর মা শেখ রেহানা এবং চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও ‘জুমানা ইনভেস্টমেন্ট’ নামের একটি কম্পানি রয়েছে তাঁদের।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প বলছে, এই কম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা। কম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামের একটি চিটিং ফান্ড কম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।

দুর্নীতি-৫ : এলএনজি কেলেঙ্কারি : গ্যাসসংকটে সরকার দীর্ঘদিন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখলেও বিশেষ বিবেচনায় শিল্পে কিছু সংযোগ দেওয়া হয়। সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী ছিলেন এসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিপ্রধান। এই কমিটির বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জ্বালানির নানা কার্যক্রম নিয়ে সাবেক এই উপদেষ্টার সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মতবিরোধ ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।

বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এক ভাতিজা এবং কেরানীগঞ্জের শাহীন চেয়ারম্যান মিলে গড়ে তুলেছিলেন একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কম্পানির সঙ্গে জোট করে কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। এমনই একটি প্রকল্প হলো ডিপিডিসি, পিডিবি, ডেসকো, আরইবি ও নেসকোর অ্যাডভান্স মিটারিং, মিটার স্থাপন, বিলিং প্রকল্প ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটিসংক্রান্ত প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।

একইভাবে পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল নামের কম্পানি বিদেশি দুটি কম্পানির সঙ্গে একটি এলপিজি প্রকল্পের কাজ পায়। এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ আছে, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী কামরুজ্জামান চৌধুরী সম্পর্কে বিপুর মামা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d