Trending

পটপরিবর্তনে বদলে গেছে চিত্র, কমেছে অনিয়ম

হয়রানিমুক্ত সেবায় খুশি রোগীরা * দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবুও ছদ্মবেশে চলে তৎপরতা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সারা দেশের রোগীদের শেষ ভরসাস্থল। এখানে কোনো রোগী এলে ভর্তি না করে ফেরানোর নজির নেই। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই হাসপাতালে।

রোগীর ভিড়কে কেন্দ্র করে ঢামেক এলাকায় গড়ে উঠেছিল রোগী ভাগানো, আইসিইউ বাণিজ্য, টেস্ট ও রক্তবাণিজ্য, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধচক্র। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় চেষ্টা চালিয়েও বন্ধ করতে পারেনি তাদের অপতৎপরতা। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালটে গেছে এই হাসপাতালের চিত্র।

অনেকটা হয়রানিমুক্ত সেবা পেয়ে এখন খুশি এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘণ্টা সরেজমিন দেখা গেছে হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নের চিত্র। তবে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা, সিট না পাওয়া, ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নেওয়াসহ অনিয়মের জঞ্জাল একেবারে পরিষ্কার হয়নি।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে বসে আছেন বরিশালের তফসের হাওলাদার (৭৫)। বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিয়ে তিনদিন আগে ভর্তি হয়েছিলেন এখানে। সঙ্গে তার ছেলের বউ জেসমিন আক্তার।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগেও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে এখানে এসেছি। পদে পদে হয়রানি হতে হয়েছে। কিন্তু এবার শ্বশুরকে নিয়ে এসে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। দালালের উপদ্রব অনেকটাই কম। চিকিৎসকরা যেসব ওষুধ লিখে দিয়েছেন এর দুয়েকটা বাইরে থেকে কিনেছি। অধিকাংশ ওষুধই হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার এই হাসপাতালের সেবার মানে আমরা অনেকটাই খুশি।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পায়ে আঘাত পেয়ে এ হাসপাতালে আসেন যাত্রাবাড়ির আমজাদ হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি ওটিতে। সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর রাখা হয় অবজারভেশনে। একজন চিকিৎসক জানান, অবস্থার উন্নতি হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

হাসপাতালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন কিশোরগঞ্জের বিনতি রাণী (৫০)। পাকস্থলীর সমস্যার কারণে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার একটি অপারেশন লাগবে। সিরিয়াল দিয়ে এসেছেন গত ৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এখনো অপারেশনের তারিখ পাচ্ছেন না।

বিনতি রাণীর ছেলে উৎপল দাস যুগান্তরকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মায়ের চিকিৎসা করাতে এসেছি। অপারেশনটা দ্রুত করাতে পারলে ফিরে যেতে পারতাম বাড়িতে। শুধু বিনতি রাণীই নন, অপারেশনের সিরিয়ালের জন্য অনেক রোগীই অপেক্ষমান থাকেন ১৫ দিন থেকে অন্তত এক মাস পর্যন্ত।

এছাড়া রয়েছে সিট সংকট। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী আসায় অনেককেই মেঝেতে কিংবা বারান্দায় শুইয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আর হাসপাতালে কেবিন পাওয়া এখনো অনেকটা সোনার হরিণের মতো। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের রেন্ট কালেক্টরের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কেবিনের জন্য লোকজনের ভিড়। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আসা সোহাগ হোসেন ঢামেকের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

তার স্বজন সেলিম বলেন, ২৮ আগস্ট ভর্তি হওয়ার পর থেকেই কেবিন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখনো কোনো কেবিন পাচ্ছি না।

এমন সময় তার পাশে দাঁড়ানো রবিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উনিতো সিট পেয়েছেন। আমিতো কোনো সিটও ব্যবস্থা করতে পারিনি। আমার রোগীকে হাসপাতালের বারান্দায় রেখেছি। চেষ্টা করছি, একটা কেবিন পাওয়া যায় কিনা।

তিনি জানান, তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামের যাত্রাপুরে। তার শ্যালক মোস্তফা ছয়তলা একটি ভবন থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে তার চিকিৎসা চলছে এই হাসপাতালে।

ঢামেক হাসপাতালের ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, সিটের পাশাপাশি মেঝেতে ও বারান্দায় পাটি বিছিয়ে শুয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। কেউ কেউ সিঁড়িতেও সারিবদ্ধভাবে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে দালালের তৎপরতা আগের চেয়ে কমে এসেছে। সূত্র জানায়, ২৬০০ ব্যাডের এই হাসপাতালে রোগী থাকে তিন থেকে চার হাজার। যাদের চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এক রোগীর স্বজন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি গেটে গেটে ট্যাপ মেরেও রাখে, তবুও এর ফাঁক গলিয়ে ভেতরে দালাল ঢুকবে। কারণ কারও গায়ে তো দালাল লেখা নেই। যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে চিনতে পারে না। বিগত সময়ে যুগান্তরে একাধিক সরেজমিন রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। ওইসময় এমনো দেখা গেছে, ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের রুমে সকাল সন্ধ্যা অফিস করছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকের লোকজন রোগীদের ব্লাড সেম্পলসহ বিভিন্ন টেস্টের সেম্পল নিয়ে যাচ্ছেন।

তবে মঙ্গলবার এই ধরনের চিত্র চোখে পড়েনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগে বিজিবির জওয়ানদের বসে ডিউটি করতে দেখা গেছে। ভেতরে ঘুরে ঘুরে ডিউটি করতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর টহল টিমকেও। আর মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল, দালাল হইতে সাবধান। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আপনারা কোনো লেনদেন করবেন না।

ঢামেকের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখনো রিপ্রেজেন্টেটিভ ও দালালরা ভেতরে ঢুকে। তবে তারা খুব সাবধানতার সঙ্গে কাজ করে। সম্প্রতি রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় আন্দোলনে নামেন চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে এ হাসপাতালে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। দেওয়া হয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদেরও ডিউটির দায়িত্ব। এরপর থেকে হাসপাতালের চিত্র অনেকটাই পালটে গেছে।

বুধবার বিকালে মোবাইল ফোনে কথা হয় ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে হাসপাতালে বিভিন্ন কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা ডাক্তারদের রুমে ঢুকে বসে থাকত। এতে চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটত। আমরা রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছি। তারপরও দূরে মোটরসাইকেল রেখে কেউ কেউ ঢুকছে। তাদেরকে শনাক্ত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, হাসপাতাল চত্বরে এলোমেলোভাবে অ্যাম্বুলেন্স রেখে একটি বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করা হতো। এখন থেকে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ভিতরে রাখা হয়, বাকিগুলো বাইরে রাখার নির্দেশ দিয়েছি। হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে থাকে, তা বাধ্যতামূলকভাবে হাসপাতালেই করতে হবে বলে চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছি।

হাসপাতালের বহিরাগতদের (স্পেশাল) দিয়ে ডিউটি করানো হতো। তারা বিনা পয়সায় কাজ করতেন। ফলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে তারা টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতেন। আমরা ওইসব লোকজনকে বের করে দিয়েছি। হাসপাতালে অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ, জরুরি বিভাগের সামনে রোগীর স্বজনদের বসার ব্যবস্থা করা, টিকেট ব্যবস্থায় ডিজিটাল কার্যক্রম জোরদারসহ বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এসব বাস্তবায়ন করা গেলে হাসপাতালের পরিবেশ আরও পরিচ্ছন্ন হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor