Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

পথহারা অর্থনীতি তাকিয়ে তারকাদের দিকে

দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে এখন স্বনামধন্য চার অর্থনীতিবিদ আর এক সফল ব্যবসায়ী। বলতে গেলে তাঁরাই দেশের অর্থনীতির তারকা। সবার শীর্ষে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে সারা বিশ্ব যাঁকে একনামে চেনে। দক্ষতা, যোগ্যতায় আর অন্য সবারই রয়েছে কৃতিত্বময় অতীত।

জন-আকাঙ্ক্ষায় ভর করে ক্ষমতায় আসা এই তাঁদের হাতেই দেশের একটি সুন্দর অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পাহাড়সম প্রত্যাশা। বিশেষ করে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। সবারই প্রত্যাশা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে দেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন তাঁরা। শুরু থেকেই তাঁদের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের কমতি নেই।

তবে তথ্য-উপাত্ত বলছে, নীতি-কৌশল ও অগ্রাধিকার বাছাইয়ে কোথাও ছন্দঃপতন হয়েছে, যার ফলে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। নানা সংকটের মুখে পড়েছে শিল্প। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। ছাড়িয়ে গেছে দুই অঙ্কের ঘর।

থমকে আছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সেরা অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীর যে টিম দেশ গঠনের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের এখন অগ্রাধিকার ঠিক করে, ছন্দঃপতনের কারণ চিহ্নিত করে অর্থনীতি পুনর্গঠনে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে কমিটি করে সব বাধা দূর করে সচল করতে হবে প্রবৃদ্ধির চাকা। গত কিছুদিন ধরে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা যায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, দারিদ্র্য বিমোচন আর নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বব্যাপী যাঁর খ্যাতি। সর্বশেষ ‘থ্রি জিরো’ নীতির প্রবক্তা হিসেবেও সর্বত্র সমাদৃত তিনি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলে ছাত্ররা ডেকে এনে প্রধান উপদেষ্টা করে দেশ গঠনে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁকে। তিনিও দুই মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনায় সহকর্মী হিসেবে নিয়েছেন সেরা তিনজন অর্থনীতিবিদকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর।

তথ্য-উপাত্ত আর তাঁদের কর্মজীবনের রেকর্ড বলছে, নিজ নিজ পেশাগত স্থানে তাঁরা সবাই ইতিবাচক ভাবমূর্তি আর গুণগত কাজে সেরা ছিলেন। উপদেষ্টা হিসেবে একজন সফল উদ্যোক্তাকেও বেছে নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি সেখ বশির উদ্দিন, দেশসেরা একটি ব্যাবসায়িক গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে যিনি এখন সামলাচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিসহ সব কিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশ। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর-মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, শিল্পগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। আর শিল্প টিকে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো সমস্যা হবে না।’

নিট পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন ‘দেশের ইকোনমিক সেক্টরে একঝাঁক দক্ষ লোকের সমাবেশ রয়েছে। এখানে একটা বড় ঘাটতি হচ্ছে ইফেকটিভনেসের। ডায়ালগের একটা ঘাটতি। লোকজনকে আস্থায় নেওয়ার একটা ঘাটতি রয়েছে। তাঁরা তো পলিসি মেকার। কিন্তু মাঠে যারা খেলছে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসা দরকার। তাদের গাইড করা, সমস্যাগুলো আইডেন্টিফাই করা দরকার। সেটা কিন্তু হচ্ছে না। এই যে নজিরবিহীনভাবে ভ্যাট বাড়ানো হলো; আজকে একটা বাড়াচ্ছে, আবার একটাতে কমাচ্ছে। এটা করার আগে সবার সঙ্গে পরামর্শ করে সময় নিয়ে করা উচিত ছিল। যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী তাঁদের নিয়ে বসতে পারতেন। সবাই তো আর খারাপ না। সবাই তো আর আগের সরকারের লোক না।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চিত্র

দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নীতিনির্ধারক হিসেবে তাঁদের ব্যক্তি ইমেজ প্রশ্নাতীত। তাঁরা ভালো কিছু করে দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারবেন—এই প্রত্যাশাই সবার। গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স আহরণ, রিজার্ভ মজুদ আর পাচারের প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লোপাটকারীদের ধরতেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।

এর পরও দেশের ব্যবসায়ী-রপ্তানিকারকরা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ছন্দঃপতন দেখছেন। তাঁরা জানান, ভালো চলছে না সার্বিক অর্থনীতি। তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি নেই। উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসার প্রসার থেকে শুরু করে নতুন বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি তাঁদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। ব্যাংক খাতে অনিয়ম আর কয়েকটি ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার মতো খবর ও অপপ্রচারে বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ছড়িয়েছে আতঙ্ক-আস্থাহীনতা। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। আয় না বাড়লেও বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থান নেই। অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই ৭১ শতাংশ কমেছে বলে খবর হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ থেকে দুই লাখ বেড়ে ২৬ লাখ ছাড়িয়েছে। ঋণ খেলাপের দায়ে অনেক বড় বড় শিল্প-কারখানা চালু না রেখে বন্ধ করায় চাকরি হারিয়েছেন কয়েক লাখ কর্মী। একের পর এক বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা।

আগের সরকারের সময় ডলার সাশ্রয়ে আমদানি কড়াকড়ি ও শুল্ক বাড়ানোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতেও। এই সরকার কিছুটা সহজ করলেও আমদানিপ্রবাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ফলে প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। বাড়ছে দাম। এর প্রভাবে স্থানীয় সাপ্লাই চেইনে সংকটের পাশাপাশি সামনে রপ্তানি পণ্যের সাপ্লাই চেইনেও সংকটের ঝুঁকি দেখছেন উদ্যোক্তারা। সামনে রমজান। তথ্য-উপাত্ত বলছে, কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি-মজুদও ঝুঁকিমুক্ত নয়। ভোজ্যতেলের আরেক দফা দাম বাড়ানোর আবেদন করেছেন আমদানিকারকরা। রোজা ঘিরে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে কি না আছে সেই ঝুঁকিও। এর সঙ্গে নতুন করে ডলারের দর বাড়ায় আমদানি পণ্যের খরচ বাড়ছে। এটিও অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা।

কয়েক মাস ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রপ্তানি বাজারেও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস শিল্পাঞ্চলে হামলা-মামলা, শ্রমিক বিক্ষোভ ও কারখানা বন্ধের ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান অর্ডার বাতিল করে প্রতিবেশী দেশসহ অন্য দেশে স্থানান্তর করেছে। পোশাক মালিকরা জানান, গত কয়েক মাসে কমবেশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্ডার বাতিল, স্থগিত বা অন্য দেশে চলে গেছে। তাঁদের আস্থা এখনো ফেরেনি। এভাবে চললে সামনে রপ্তানি বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থাহীনতা, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং আমদানি পণ্যে খরচ বাড়ায় ব্যবসায় মন্দা চলছে। প্রকল্পেও গতি নেই। বরং প্রকল্প বাস্তবায়ন আগের চেয়েও কম। তহবিলসংকটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। এর ফলে সরকার ঠিকমতো রাজস্ব পাচ্ছে না। রাজস্ব আয়ে হতাশাজনক অবস্থা চলছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের ছয় মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল রাজস্ব ঘাটতির ফলে সরকারের তহবিল ও বাজেট বাস্তবায়নেও টান পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সরকার টাকা ছাপাবে না বলেলও প্রায় ২২ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাপতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে মরিয়া সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের ফাঁদে পড়েছে। সংস্থাটির ঋণের শর্ত মানতে গিয়ে নির্বিচারে ভ্যাট-ট্যাক্স ও শুল্ক বাড়িয়ে চলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সাধারণ মানুষ যখন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমিশিম খাচ্ছে, জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম সামলাতে পারছে না, তখন নতুন করে ১২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি করের বোঝা পড়ছে তাদের ঘাড়ে। যদিও সমালোচনার মুখে কয়েকটি পণ্যের ভ্যাট আগের স্তরে বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু এর পরও ভোক্তার ওপর করের বোঝা বাড়ছে। ভ্যাট আরোপ নিয়ে সারা দেশে শোরগোল উঠেছে। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা স্টেকহোল্ডাররা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া এবং জিনিসপত্রের দাম ঘোষণা দিয়ে বাড়াবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সময় এটি নয়। এতে শিল্প রুগণ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রতিনিধিরা সম্প্রতি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে রুগণ ব্যবসা গোটানোর নীতিমালা চেয়ে আবেদন করেছেন।

দেশের প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই এই টাকা ফেরাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে, চিঠি চালাচালিও হয়। কিন্তু এর দৃশ্যমান সাফল্য খুব একটা নেই। এখনো পাচারের কোনো টাকাই ফেরত আসেনি। বিশ্লেষকরা দাবি করেন, সরকার এই বিপুল অঙ্কের একটি অংশ ফিরিয়ে আনতে পারলেই অর্থনীতিতে তহবিলসংকট হবে না। সরকারকে আইএমএফের কাছে হাত পাততে হবে না। এমনকি আইএমএফের শর্ত মেনে করের বোঝা চাপিয়ে জনগণের জীবনযাত্রাকেও দুর্বিষহ করতে হবে না।

বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন, আইএমএফের ঋণের শর্ত মানলে দেশি শিল্প টিকবে না। তারা শিল্প ধ্বংস করে দেশকে আমদানিনির্ভর করতে চায়। এই ফাঁদে পা দিলে দেশের অর্থনীতি আরো নাজুক হবে। সংস্থাটি শুধু যে করের বোঝা চাপানোর কৌশল নিয়েছে তাই নয়, বরং ঋণ খেলাপের ক্ষেত্রেও তিন মাস কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপি করার নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। আগে ছয় মাস সময় দেওয়া হতো। এতে একজন উদ্যোক্তা এখন তিন মাসেই খেলাপি হয়ে পড়ছেন। ফলে খেলাপির পরিমাণ রাতারাতি বেড়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তিন মাসেই ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। সরকার উদ্যোক্তাদের বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ ইউটিলিটি সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বছরের পর বছর। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কারখানা করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না তাঁরা। অথচ ব্যাংক তিন মাস গেলেই তাঁদের ঋণখেলাপির খাতায় নাম লেখাচ্ছে।

দেশ গ্যাসসংকটে ভুগছে। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যেই গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন। ব্যবসা মন্দার মধ্যে নতুন করে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে অনেকে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন। বড় বড় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা সভা-সমাবেশে তাঁদের কঠিন সংকটের কথা একাধারে বলে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, তাঁরা সব সংকটের মধ্যেও শিল্প টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন। অথচ সরকারের ভেতরেরই একটি স্বার্থান্বেষী চক্র পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে, সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ করতে ভুল নীতি-কৌশল করে শিল্প বন্ধের আয়োজন করছে। তাঁদের মতে, কেউ যদি দোষী হয়, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে শিল্প-কারখানা যাতে বন্ধ না হয়। এতে ভুল বার্তা যায়। বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ কর্মহীন হয়। প্রকৃত উদ্যোক্তারাও ঋণখেলাপি হন। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও বড় অঙ্কের আমানতের টাকা ফেরত না পেয়ে দুর্বল ব্যাংকে পরিণত হয়। উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ১০টি বড় শিল্প গ্রুপকে যেভাবে টার্গেট করা হয়েছে, এসব শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা বলেন, যাঁরা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, শিল্প চালু থাকুক।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একমাত্র সহজ ও নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের জায়গা পুঁজিবাজার। এটিও এখন পতনে পতনে খাদের কিনারে। শেষ সম্বল হারিয়ে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। এই বাজার নিয়ে কারা খেলছে, আগের মাস্টারমাইন্ড আর বর্তমানের খেলোয়াড়—কারো বিরুদ্ধেই কোনো কার্যকর পদেক্ষপে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বাজারে আস্থা ফিরছে না।

অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সরকার কী করতে পারে

দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা চান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাঁদের দীর্ঘ কর্মজীবনের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও পেশাদারির সবটুকু দিয়ে ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করবেন এবং তা বাস্তবায়নে জোর দেবেন। বিশেষ করে অর্থনীতি বাঁচাতে তাঁরা শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করতে পারেন, যে কমিটি দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করবে। সময়ে সময়ে এই কমিটি বসে যা অগ্রাধিকার তা বাস্তবায়ন করবে।

একই সঙ্গে প্রয়োজন দেশের স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় আইএমএফের ঋণের শর্তে যতটা পারা যায় ‘না’ বলা, সব খাতে নির্বিচারে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলা, শিল্পবিরোধী হলে তা বাদ দেওয়া, রাজস্বনীতি অন্তত পাঁচ বছরের জন্য করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান যে এতে শিল্পের ক্ষতি হবে না, ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনা, উৎপাদন খাত চাঙ্গা করতে পদক্ষেপ নেওয়া, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের আস্থায় নেওয়া, সব ধরনের ইউটিলিটি যথাসময়ে দেওয়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটানো, শিল্পকে তার গতিতে চলতে দেওয়া, খেলাপি না হতে ঋণের কিস্তি শোধে ছয় মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া, ডলারের দরকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ করার ব্যবস্থা নেওয়া, আমদানি আরো সহজলভ্য করা, পাচারের প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন করা, অনিয়মের ঋণ ঠেকানো, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, ব্যবসায়ীদের ধরপাকড়, মামলা-হামলার ভয়ভীতি বন্ধ করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গঠনে কাজ করা। শিল্প-কালখানায় অবাধে চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া, নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া এবং সরকারি সব সেবাকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে কার্যকর পদেক্ষপ নেওয়ারও দাবি জানান ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto