পথে খায় পথেই ঘুমায়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে কোমল হাতে, ঘরে ফিরতে চায় না পথশিশুরা, ১২ শতাংশ মাদকাসক্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গেলেই যে কারোই নজর কাড়বে রায়হানা ও সোবানা নামের দুই বোনকে। না কোনো বিশেষ গুণ তাদের নেই তবু পথচারীদের নজর কাড়তে সক্ষম ১২ বছর এবং ৮ বছরের এই দুই বোন। বিশেষ করে সবুজাভ চোখের মনিতে বড় বোন রায়হানার কোমল হাসিতে মুগ্ধ হয় না এমন কোনো পথচারী পাওয়া ভার। মূলত, রাত ৯টার থেকে তাদের কাজ শুরু হয়। একটি প্লাস্টিকের ঝুড়িভর্তি করে পাঁচ টাকা দামের চকলেট নিয়ে টিএসসিতে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের কাছে চকলেট বিক্রি করে। পাঁচ টাকা দামের একেকটি চকলেট বিক্রি করছে আটটাকা করে। রাজু ভাস্কর্যের কাছে রায়হানা আর টিএসসির গেটের ভেতরেই ঝুড়ি নিয়ে চকলেট বিক্রি করে সোহানা। পাশেই ফুটপাতে তাদের মা রুখসানা বসে থাকেন।
এত রাতে মেয়েদের দিয়ে রাস্তায় চকলেট বিক্রি করাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টিএসসিতে তরুণ-তরুণীদের ভিড় সারাদিনই লেগে থাকে। তেমনি ভিড় থাকে বিভিন্ন ধরনের হকারেরও। ওই সময় কি আর কেউ চকলেট কিনবে? তাই এই রাতেরবেলায় মেয়েদের নিয়ে আসি। এখানে প্রায় সারা রাতই লোকজনের আনাগোনা থাকে। তবে রাত দুইটার পর দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যাই তেজগাঁওয়ের বস্তিতে। ওখানেই তাদের নিয়ে থাকেন।
সুন্দর ফুটফুটে দুই মেয়েকে দিয়ে এত রাতে চকলেট বিক্রি করাতে কষ্ট হয় না? জানতে চাইলে বলেন, কষ্ট হইলে কি হইব কন? মাইয়াগোর বাপ দুই বছর হইল আমারে ছাইড়া আরেকটা বিয়া করছে। আমার নিজের শরীরও তেমন ভালো না। মাইয়া দুইডাই ভরসা। হেরা যে চকলেট বিক্রি করে তা দিয়াই তিনজনে কোনো রকমে খাইয়া-পইড়া বাঁইচা রইছি।
তবে মগবাজার মোড়ে ভিক্ষা করা সিয়ামের গল্পটা একটু অন্য রকম। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বুল্লা গ্রামের ১০ বছরের সিয়ামকে একদিন তার বাবা স্কুলে যাওয়ার জন্য বকা দেওয়ায় জিদ করে প্রতিবেশী শফিক মিয়ার সঙ্গে লুকিয়ে ঢাকা চলে আসে। কয়দিন ফার্মগেটের একটি হোটেলে শফিক মিয়ার সঙ্গে হোটেলে বয়ের কাজ করলেও ভালো না লাগায় এখন রাস্তায় ভিক্ষা করছে। তবে আবারও হোটেলের কাজে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে জানিয়ে সিয়াম বলেন, মাইনসের দয়ার জীবন ভালো লাগতাছে না। আবারও কাজে যামু। কষ্ট হইলেও নিজের রোজগারের টাকায় জীবন কাটামু। বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে ইচ্ছে করে না জানতে চাইলে বলেন, না না! ওই বাড়িতে আরও ফিরমু না। ফিরা গিয়া কি করমু? বাপের হাতে মাইর খাইতে কার ভালো লাগে কন? তার চাইতে এই ভালো নিজে রুজগার করমু নিজেই খরচ করমু। কারও কোনো খবরদারি থাকবে না।
ঘরে ফিরতে চায় না ৬৪ শতাংশ পথশিশু:
শুধু সিয়াম নয় ঘরে ফিরতে চায় না অন্তত : ৬৪ শতাংশ পথ শিশু। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত ‘পথশিশু জরিপ-২০২২’ এর প্রেক্ষিতে জানা যায়, ফিরে যাওয়ার মতো পরিবার নেই ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশুর। জরিপ ফলাফলে বলা হয়, এই শিশুরা পারিবারিক ও সামাজিক বাঁধাসহ বিভিন্ন কারণে পথশিশু হতে বাধ্য হয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে পরিবারে জায়গা নেই ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুর। পরিবার গ্রহণ করে না ২১ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুকে। আর পরিবারই নেই ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশুর। পরিবারে প্রতিকূল পরিবেশ ১২ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর। সামঞ্জস্যপূর্ণ পাবিবারিক পরিবেশ নেই ১১ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশুর। নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ পথশিশু। আর পরিবারে কাজের চাপ রয়েছে ১১ শতাংশ পথশিশুর। আর ঘরে ফিরতে সামাজিক বাধা রয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর।
মাদকে আসক্ত ১২ শতাংশ পথশিশু:
তবে সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে এসব পথশিশুর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ ধূমপানের পাশাপাশি ১২ শতাংশ মাদক আসক্ত। যার সত্যতা মিলে রাজধানীর কাওরান বাজার মোড়, মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে, টিকাটুলির বস্তির আশপাশে, কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশে সরেজমিন ঘুরেই।
এক সন্ধ্যায় রাজধানীর কাওরানবাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশে গিয়ে দেখা যায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের একটি বড় জটলা। কাছে গিয়ে দেখা যায় একটি পলিথিনে ভাতের মাড়ের মতো তরল পদার্থ মুখে নিয়ে ফুঁ দিচ্ছে তারা। সবচেয়ে বড় আকরাম নামের ছেলেটি প্রতিবেদককে কাছে যেতে দেখেই পলিথিন লুকিয়ে ফেললেও সবার ছোট সুলেমানের কোনো হুঁশই নেই। মারাত্মক এই নেশাকে বিশেষজ্ঞদের ভাষায় যার নাম ড্যান্ডি তার নেশায় চোখই খুলতে পারছে না সে। একই রকম আরও কয়েকটি শিশুর দেখা মেলে মহাখালীর তিতুমীর কলেজের উল্টোপাশের সড়কেও। এই দলে রয়েছে একটি মেয়ে শিশুও। ড্যান্ডি নামের সস্তা এই নেশার যোগান কোথা থেকে পাও জানতে চাইলে মেয়েটি বলে, বাড়িঘর যে কোথায় তা তো জানিই না। কড়াইলের বস্তিতে একটা ঘরে থাকি। সারাদিন ভিক্ষা করি। রাইত হইলে গিয়া ঘুমাই। আমার মতো বয়সী বস্তিতেও যেসব মেয়ে আছে সবারই একটা পরিবার আছে। অথচ আমার কোনো পরিবার নেই। এই দুঃখ ভুলতেই এই ছেলেগুলার সঙ্গে থাইকা নেশা করি। দুঃখ ভোলার এর চাইতে সহজ উপায় তো আর নাই।
পরিবারে দারিদ্র্য এবং খাবারের অভাবেই মূলত পথশিশু হয়েছে তারা। এইসব পথশিশুর বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সব শিশুর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে ওঠা এবং নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা পথশিশুদের খাবার দিয়েছি, দোলনা দিয়েছি। কিন্তু তারা থাকতে চায় না। তার পরও সরকার পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে। বেসরকারি পর্যায়েও কাজ করছে অনেকে। কিন্তু পথশিশুরা তাদের ইচ্ছেমতো চলার স্বাধীনতা হারাতে চায় না। সে কারণে ঘরে ফিরতে চায় না অনেক শিশু।
বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়সে ওরা কর্মজীবী ॥ এই শিশুদের একটা বড় অংশ আবার ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়াও যুক্ত রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলার হাংরি বাইট নামের একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করে ১২ বছরের রিপন। মগবাজারেরই একটি এনজিও স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ালেখা করলেও করোনার সময় বাবার রোজগার কমে যাওয়ায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। তাই বাধ্য হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দিনমজুরিতে কাজ শুরু করে হাংরি বাইটে। প্রথমদিকে দিনে ৬০ টাকা করে পেলেও এখন প্রতিমাসে ৩ হাজার করে পাচ্ছে। খুব বেশি কাজ না থাকলেও গ্রাহকদের বার্গার, স্যান্ডউইচসহ অন্যান্য স্ন্যাক্স ওভেনে গরম করে সরবরাহ করতে হয়। একবার তো ওভেনের আঁচে আঙ্গুলে ছ্যাঁকা পর্যন্ত খেতে হয়েছে। তবে এখন সাবধান! হাতে গ্লাভস ছাড়া আর ওভেনে হাত দেয় না। স্কুল ছেড়ে কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে বলে, কি করমু কন? মাসে ৩ হাজার টেকা তো কম না। যখন বাবার হাতে টাকাটা তুলে দেই তখন সারা মাসের কষ্ট এক নিমিষে দূর হয়ে যায়। তবে খারাপও যে লাগে না তা না। যখন রেস্টুরেন্টে আমার বয়সী কাউকে দেখি বাবার হাত ধরে খেতে এসেছে বা কেউ যখন স্কুল ব্যাগ নিয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে যায় তখন আমারও খারাপ লাগে।
খারাপ লাগে ইস্কাটনের একটি বাসায় গৃহকর্মের কাজে নিয়োজিত ১০ বছরের শিশু রুমকিরও। যদিও বাড়ির মালিক ভালো মানুষ খুব বেশি কাজ করতে হয় না। কিন্তু সকাল বেলা যখন তাদের বড় মেয়েটাকে নিয়ে স্কুলে যান ম্যাডাম তখন তারও খুব স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। যতক্ষণ ম্যাডাম স্কুলে থাকবেন ততক্ষণ তাদের শিশু বাচ্চাটিকে দেখে রাখার জন্য তাকে রাখা হলেও সারাদিনই বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে শুধু খাওয়াতে নিয়ে যান ম্যাডাম। শিশুটিকে গোসল, পরিষ্কার করা, তেল মাখানোসহ সবকিছু রুমকিরই করতে হয়। মাঝখানে একদিন গোসল করাতে গিয়ে বাচ্চাটির কানে পানি ঢুকে গিয়েছিল। ম্যাডামের সে কি রাগ! খুব মেরেছেন। সারাদিন ঘরের এককোণে বসে কেঁদে কাটিয়েছে। আবার স্কুলে যেতে চায় জানিয়ে রুমকি বলে, বাবা মারা যাওয়ার পর ৪ বোনের সবাইকে মা বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করতে দিয়েছে। সে একটু ছোট তাই ছোট কাজে দিয়েছে।
শুধু রুমকি বা রিপনই নয় রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পথশিশুদের একটা বড় অংশই নিয়োজিত হচ্ছে শিশুশ্রমে। যে বয়সে একটি শিশুর বই হাতে নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে দুরন্ত শৈশব অতিবাহিত করার কথা, সে বয়সে তাকে ইটভাঁটি বা শিল্পকারখানায় মানবেতর শ্রম দিতে হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও ঘর থেকে বের হলেই দেখতে পাওয়া যায় শিশুশ্রমের করুণ চিত্র। হোটেল, মোটেল, লঞ্চ, বাস, ইটভাঁটি, পাথর ভাঙা, মোটর গ্যারেজ, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, কল-কারখানা, বাসাবাড়ি, মিষ্টি ও বিস্কুট ফ্যাক্টরি, তামাক শিল্প, চামড়া শিল্প, চা শিল্প, ভারি শিল্প ইত্যাদিতে প্রতিনিয়ত দেখা যায় শিশু শ্রমের নির্মম চিত্র।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের আইন থাকলেও দেশের কোন খাতে কত শিশুশ্রমিক কাজ করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসন কিভাবে তার ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে।
রাজধানীর বাংলামোটরে ট্রাস্ট বাইক নামের একটি মোটরসাইকেল মেরামতের দোকানে ইঞ্জিনিয়ারের সহকারী হিসেবে কাজ করা সাব্বির জানায়, মাঝে মাঝে এখানে কাজের জন্য আসা বাইকগুলোর টেস্ট ড্রাইভও তাকে করতে হয়।
উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের :
যা খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাতে জর্জরিত পরিবারের সন্তানরা দুবেলা দুমুঠো ভাত মুখে দেওয়ার জন্য নিরুপায় হয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো ‘অর্থনৈতিক দুরবস্থা’। শিশুর বয়সসীমা ও শিশুশ্রম নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হলেও শিশুশ্রমের মূলে রয়েছে দারিদ্র্য, এ শ্রম বন্ধ করতে হলে প্রথমে দারিদ্র্যকে নিরসন করতে হবে। এক্ষেত্রে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি। শিশুশ্রম এবং পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে গ্রাম ও শহরভিত্তিক পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভাবের কারণে যেসব শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত বা পথে-ঘাটে জীবন কাটাচ্ছে তাদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রয়োজনে শিশু ভাতা প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনের জন্য কোথায় কোথায় শিশুশ্রম হচ্ছে তা খুঁজে বের করা দরকার এবং গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। সর্বোপরি শিশুশ্রম এবং শিশুদের অধিকার সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ :
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২০ সালের মধ্যে বাজেটে শিশুদের জন্য অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু তিন বছর পার হলেও বাজেটে নেই শিশুদের জন্য বিশেষ সুখবর। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও শিশুরাই উপেক্ষিত বাজেটে। পরপর চার বছর শিশু বাজেট ঘোষণা করেনি সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছর পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর সবাই শিশু হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ শিশুর জন্য বাজেটের ২০ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এবারের বাজেটে শিশুদের জন্য বিশেষ সুখবর নেই। নারীর ন্যায় শিশুদের ভাতাভোগী, উপকারভোগী হিসেবে বেশি চিহ্নিত করা হয়েছে এবারের বাজেটে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এক লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান জানিয়ে বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয়, শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কর্মরত শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ আটটি খাতকে শিশুশ্রমমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এবারের বাজেটেও শিশুরা উপেক্ষিত রয়েছে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, শিশু বাজেট ঘোষণা করলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা তৈরি হয়। তা ছাড়া শিশুদের জন্য বাজেটটা আসলে মূল বাজেটে কি অবস্থায় আছে সেটা স্পষ্ট। আমরা সব সময় বলেছি, এটা করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা মূল বাজেট বিশ্লেষণে যা দেখছি, এবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাজেট খুব একটা বাড়েনি। একটা বড় চিন্তার জায়গা, স্কুলফিডিং প্রোগ্রাম উল্টো বন্ধ হয়ে গেছে। কোভিডের প্রভাবে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য কি করা হয়েছে তা অস্পষ্ট। তা ছাড়া অটোপাসের প্রভাবে অনেক শিশু মান ধরে রাখতে পারছে না। অনেকে পড়াশোনা ও ক্লাস পায়নি, বিশেষ করে সরকারি প্রাইমারিতে সুবিধাবঞ্চিত সমাজের শিশুরাই বেশি পড়ে। তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা উচিত। তাদের জন্য ও শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। তিনি বলেন, এসডিজির যে টার্গেট, সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা, সেক্ষেত্রে বরাদ্দ বড় আকারে কমে গেছে। এই ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়েকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।