পদত্যাগ করলেন হুথি-বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী, ইয়েমেনে অস্থিরতার নতুন মোড়

মার্কিন হামলা তীব্র হওয়ার মধ্যেই ইয়েমেনে হুথি-বিরোধী জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আওয়াদ বিন মুবারক পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (৩ মে) তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সরকারি সংস্থাগুলোর সংস্কারে ব্যর্থতা এবং জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে এই পদত্যাগ এলো। এটি দেশটির চলমান সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আহমেদ বিন মুবারক ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে এবং মন্ত্রিসভার প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
আহমেদ সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কাঠামোগত সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন, যা তার দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতির অভিযোগ এবং সরকারি সেবার অবনতির কারণে তার প্রতি চাপ বেড়েছে।
ইয়েমেনের ‘অস্থায়ী রাজধানী’ অ্যাডেনে অবস্থিত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিন মুবারকের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে অর্থমন্ত্রী সালেম সালেহ সালেম বিন ব্রেককে নিয়োগ দেওয়া হবে। সূত্রটি আরও বলেছে, ‘তিনি (বিন ব্রেক) সরকারের মধ্যে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার জন্য সুনাম অর্জন করেছেন।’
চলমান সংকট
ইয়েমেন ২০১৪ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত, যখন ইরান-সমর্থিত হুথিরা রাজধানী সানা দখল করে এবং ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত’ সরকারকে সৌদি আরবে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়। এই সংঘাত দেশটির অর্থনীতি এবং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। মুদ্রাস্ফীতি, দুর্নীতি এবং সরকারি সেবার অভাবের কারণে সাধারণ ইয়েমেনিরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।
সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। জনগণ সরকারের কাছে জবাবদিহিতা এবং উন্নত জীবনযাত্রার দাবি জানিয়েছে।
বিন মুবারকের পদত্যাগ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা জোরদার করেছে। ১৫ মার্চ থেকে মার্কিন হামলায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধশাতাধিক আফ্রিকান অভিবাসী রয়েছে। এই হামলাগুলো ইয়েমেনের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বিন মুবারকের পদত্যাগ হুথি-বিরোধী জোটের ভঙ্গুরতাকে আরও প্রকাশ্যে এনেছে। প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই পদত্যাগ সরকারের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে প্রকট করেছে।
দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পদত্যাগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ সরকারের ব্যর্থতার প্রতীক হিসেবে এটিকে দেখছেন, আবার কেউ কেউ নতুন নেতৃত্বের আশা প্রকাশ করেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘তথাকথিত বৈধ ইয়েমেনি সরকারের’ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিগত অক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন।