Hot

পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ

বিএএসএ নেতাদের আবেদন বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে পেশ করা হবে -জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব * বিএএসএ’র তরফ থেকে পদোন্নতি, শূন্যপদ পূরণের দাবি

প্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। সচিব ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ৮টি সংস্থাপ্রধানের পদ শূন্য। দুটি অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) নেই। কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতিরিক্ত সচিব সংকট আছে। খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের একটি পদ শূন্য। অপরদিকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চিতদের রিভিউ করার কথা থাকলেও শিগ্গিরই তা হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব এবং ৩০তম ব্যাচের উপসচিব হিসাবে পদোন্নতি অদৃশ্য কারণে ঝুলে আছে। এসব কারণে প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে। পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় এসব ঝুলে আছে-এমন মন্তব্য খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) একটি প্রতিনিধিদল ১৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করে বলেছে, মঞ্জুরীকৃত পদ ২১২টি, প্রেষণ পদ ৩৮০টি-সহ ৫৯২ জন অতিরিক্ত সচিবের স্থলে বর্তমানে কর্মরত ৩৪৪ জন। অর্থাৎ, অতিরিক্ত সচিব নেই ২২৮ জন। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১৫০ জন অবসরে যাবেন। তাহলে প্রশাসনে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব থাকবেন ১৯৪ জন। এত কম সংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে প্রশাসন চলবে কীভাবে। প্রশাসনে যুগ্মসচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ১৫৫টি, কর্মরত আছেন ১ হাজার ৩৮ জন। অর্থাৎ, শূন্য রয়েছে ১১৭টি যুগ্মসচিবের পদ। উপসচিবের অনুমোদিত পদ ২ হাজার ৫০০টি, কর্মরত ১ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ, শূন্য রয়েছে ১ হাজার পদ। নেতারা দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে পদগুলো পূরণের অনুরোধ জানান।

এসব বিষয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনের সভাপতি, মহাসচিবসহ কমিটির নেতারা ঈদুল আজহার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রশাসনে কর্মকর্তা সংকট, ঝুলে থাকা পদোন্নতি এবং প্রশাসনের টপ টু বটম ফ্যাসিবাদের দোসরদের সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন। এরপর দুই সপ্তাহের বেশি চলে গেছে। কিন্তু এখনো শূন্যপদ পূরণে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএএসএ নেতারা এসেছেন। আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে তারা সার্ভিস সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা তাদের কথা শুনেছি। তাদের বক্তব্য সরকারের কাছে পেশ করব। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের।

জানতে চাইলে বিএএসএ মহাসচিব মো. শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রথমে জনপ্রশাসন সচিব এবং পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করে ক্যাডারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। শূন্যপদ পূরণে পদোন্নতি, ঝুলে থাকা পদোন্নতি নিষ্পত্তি এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করা ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তাদের বিষয়ে কথা হয়েছে। স্বৈরাচারের শাসনামলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে কথা বলেছি। কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের পদ শূন্য রয়েছে, ওইসব বিষয়ে কথা বলেছি।

সূত্র জানায় বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়রম্যান (সচিব), বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব), জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব), জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে চলছে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাজ। উল্লেখ্য, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার অনুমোদিত পদ ৭৮টি। কর্মরত কর্মকর্তা আছেন ৬৯টি পদে। নয়টি পদ শূন্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিও ঝুলে আছে দীর্ঘসময় ধরে। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জোর দাবিয়েছে বিএএসএ। অধিকসংখ্যক অতিরিক্ত সচিব পদ শূন্য থাকায় পরবর্তী আরও দুই ব্যাচের পদোন্নতি একসঙ্গে করা যায় কি না, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দুই ব্যাচ অর্থাৎ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২১ ও ২২তম ব্যাচের একসঙ্গে পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিষয়টি এমন হতে পারে-এক বছরে দুই ব্যাচকে পদোন্নতি বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু একসঙ্গে নয়। ৬ মাস আগে-পরে হতে পারে।

এদিকে জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের পদটি দীর্ঘদিন ফাঁকা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনসহ একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের পদ শূন্য রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) পদটি ফাঁকা অনেকদিন। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের (নবসৃষ্ট) অতিরিক্ত সচিবের একটি পদ শূন্য রয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের পদোন্নতিও ঝুলে রয়েছে প্রায় দেড় বছর। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চিতদের এক মাসের মধ্যে রিভিউ করার কথা বলা হলেও তা শিগ্গিরই হচ্ছে না। এতে তাদের মধ্যে একধরনের মনোবেদনা রয়েছে। এসব কারণে প্রশাসনে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto