Science & Tech

পরপর দুইবার ব্যর্থতার মুখে স্পেসএক্সের স্টারশিপ

ইলন মাস্কের স্পেসএক্স আবারও তাদের স্টারশিপ রকেটের আপার স্টেজ হারিয়েছে। বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পর স্টারশিপের দ্বিতীয় ধাপটি আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়। যদিও সুপার হেভি বুস্টার সফলভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে স্টারশিপের মূল অংশ মহাকাশে টিকে থাকতে পারেনি।  

লঞ্চের কয়েক মিনিট পরই বুস্টার আলাদা হয়ে যায়। এরপর লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, আপার স্টেজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এলোমেলোভাবে ঘুরতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ বাহামার আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।  

স্পেসএক্সের মুখপাত্র ড্যান হুওট বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে পারি, স্টারশিপের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। দুঃখজনকভাবে, আগের পরীক্ষার সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল।জানুয়ারির পরীক্ষাতেও স্টারশিপের আপার স্টেজ ক্যারিবিয়ান সাগরের ওপর বিস্ফোরিত হয়েছিল।  

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় প্রভাব

স্টারশিপের এই ব্যর্থতা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমাতেও তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ‘ডেব্রি রেসপন্স এরিয়া’ চালু করে। ফলে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া ও মিয়ামির বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত ফ্লাইট কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত রাখা হয়।  এফএএ জানিয়েছে, স্পেসএক্সকে অবশ্যই একটি তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে, এরপরই তারা নতুন করে উৎক্ষেপণের অনুমতি পাবে।  

স্পেসএক্সের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

 মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখে। তাদের ‘ফেল ফাস্ট, শিখ ফাস্ট’ নীতির কারণেই তারা আজকের দিনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ লঞ্চ সেবাদাতা হয়ে উঠেছে। তবে মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে কিছু মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে তার ভূমিকা এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ওপর তার প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  

স্টারশিপ: মহাকাশ অভিযানের নতুন দিগন্ত

টেক্সাসের বোকা চিকা থেকে উৎক্ষেপণ করা স্টারশিপ রকেটটি ১২৩ মিটার (৪০৩ ফুট) লম্বা, যা স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়েও প্রায় ১০০ ফুট উঁচু। এটি সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য হওয়ার কথা, এবং মাস্কের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপনের মূল ভূমিকা পালন করবে।  নাসাও এই স্টারশিপের একটি সংশোধিত সংস্করণকে চাঁদে অবতরণের জন্য ব্যবহার করতে চায়। আর্টেমিস প্রকল্পের আওতায় এই দশকের মধ্যেই নাসার নভোচারীদের চাঁদে ফের পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।  তবে এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে স্টারশিপকে অবশ্যই নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং মহাকাশে জ্বালানি পুনরায় ভরার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।  

রাজনৈতিক বিতর্কের ছায়া

বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মাস্ক এফএএ’র বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিয়মকানুন আরোপের অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু এখন, ট্রাম্প প্রশাসনে তার উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা হিসেবে থাকা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এক স্পেসএক্স প্রকৌশলী এফএএ সদর দপ্তরে গিয়ে কর্মীদের সতর্ক করেন, তারা যদি স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু না করেন, তবে তাদের চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।  এদিকে, টেলিকম জায়ান্ট ভেরাইজন বর্তমানে এফএএ’র নেটওয়ার্ক উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে। তবে স্পেসএক্সের হস্তক্ষেপে এই চুক্তি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্পেসএক্স অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, ‘সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো অসত্য।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto