USA

পরমাণু বোমা মেরে ভিয়েতনামকে ধ্বংস করতে ফ্রান্সকে প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ১৯৫৪ সালের ৩০ এপ্রিল, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, ভিয়েতনামের ঘটনা বিবেচনা করে, ফরাসিদের কিছু পারমাণবিক বোমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ভিয়েতনামের সম্পদ ও জনগণের উপর উপনিবেশ ও আধিপত্য বজায় রাখতে হতাশ ফরাসিরা তখন বিশেষ সহায়তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিনগুলো থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোচীনে যুদ্ধে জড়িত ছিল এবং ১৯৫০ সাল থেকে ফরাসি যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল। এ ক্ষেত্রে লজিস্টিক সমর্থন দিয়েছিল আমেরিকা। শত শত বিমান, ট্যাংক, যানবাহন এবং হাজার হাজার টন গোলাবারুদ ফরাসিদের দেওয়া হয়েছিল এবং আমেরিকান উপদেষ্টারা ফরাসি আক্রমণ ও গণহত্যার বিষয়ে পূর্ণ অবহিত ছিল।

ভিয়েতনামে আগ্রাসনে চিত্র

১৯৫৪ সাল নাগাদ, ফ্রান্সের যুদ্ধ ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ মার্কিন সরকার এবং মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্মীরা পরিশোধ করেছিল।

ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা ভিয়েতনামি জনগণের প্রতিরোধের মুখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে তারা বারবার সরাসরি আমেরিকার পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯৫৪ সালের ২০ মার্চ সমালোচিত একটি সামরিক অভিযান চালানো হয় যা ‘অপারেশন ভ্যালচার’ বা ‘শকুন অভিযান’ নামে পরিচিত। ওই অভিযানে ৬০ থেকে ৯৮ ইউএস এয়ার ফোর্স বি-২৯ বোমারু বিমান এবং ১০০ টিরও বেশি নৌ এসকর্ট বিমান থেকে ভিয়েতনামের বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য ব্যাপক বোমা হামলা চালানো হয়।

এই অভিযান সংক্রান্ত রিপোর্টগুলো ছিল বিস্ময়কর। জানা যায় যে অপারেশন ভ্যালচারের অংশ হিসাবে, ভিয়েতনামের জনগণের উপর তিনটি পারমাণবিক বোমা ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে, তৎকালীন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জেস বিদেউ দাবি করেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালস প্যারিসে ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিলে একটি বৈঠকের সময় তাকে একপাশে টেনে নিয়েছিলেন এবং ভিয়েতনামের কাজ শেষ করতে ফ্রান্সকে দুটি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জেস বিদেউ বলেছেন, তবে তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন যে এর কারণ ছিল যে সেই সময়ে ভিয়েতনামি যোদ্ধারা ফরাসি সদর দফতরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল এবং পরমাণু বোমা ফরাসিদেরও ধ্বংস করতে পারত।

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডালসও পরে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়ার কথা শক্তভাবে অস্বীকার করেন। তবে এটা সত্য যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য তা ফরাসিদের দেওয়ার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে আলোচনা হয়েছিল।

২৯ এপ্রিলে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ চার ঘন্টার জন্য এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে এবং ৩০ এপ্রিল, তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ‘আমরা তাদের (ফ্রান্সকে) কিছু পরমাণু বোমাও দিতে পারি।’

আইজেনহাওয়ার অবশ্য মিত্র বা কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া সরাসরি ভিয়েতনামে হস্তক্ষেপ করতে চাননি।

এরপর মে মাসে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এবং ফরাসিরা বুঝতে পারল পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে কোন লাভ হবে না। কেননা যুদ্ধে এরই মধ্যে ২০০০ ফরাসি সৈন্য নিহত হয় এবং দশ হাজারেরও বেশি লোক আহত হওয়ায় ফ্রান্স কার্যত পরাজিত হয়েছিল যা আমেরিকারও চোখ এড়াতে পারেনি।

ফ্রান্সের পরাজয়ের পর, আমেরিকা নিজেই অন্য পরিকল্পনা নিয়ে এই অঞ্চলে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ভিয়েতনামি এবং অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করে। কিন্তু এরপরও আমেরিকা শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজিত হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d