Hot

পরের বেলা ভাত জুটবে কিনা জানে না ৩৪ লাখ মানুষ

খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য। একবেলা খাবারের শেষে পরের বেলার চালের জোগান নেই– দেশে এ রকম পরিবারের হার ২ শতাংশ। আটা মজুত থাকে না ৬০ শতাংশ পরিবারে। নিত্যপণ্যের মধ্যে ডালের সংস্থান নেই ১৯ শতাংশ পরিবারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পরিবারের সংখ্যা এখন ৪ কোটি ১০ লাখ। সংস্থার জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে দেশের ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ জন মানুষের একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলার চালের জোগান নেই।

খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ নামে এ প্রতিবেদন গত শুক্রবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, খাদ্য এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ দেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে বড় উদ্বেগের বিষয়। এতে আরও বলা হয়, ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে জর্জরিত জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে কোনো দেশ অর্থনীতির ভিত গড়তে পারে না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হতে চাইলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে ব্যাপক পরিমাণে কার্যকর বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

জানতে চাইলে বিবিএসের সংশ্লিষ্ট জরিপের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, মজুত বলতে পরিবারের কতটুকু খাদ্য আছে, তা দিয়ে কীভাবে চলতে পারে– তা বোঝানো হয়েছে। সরাসরি প্রশ্নের জবাব থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুত নিয়ে একাধিক সংস্থার কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে পরিবার পর্যায়ে খাদ্য পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা দেশে এটিই প্রথম। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত এ ধরনের জরিপও এটিই প্রথম। এ কারণে খাদ্য গ্রহণের এ নাজুক পরিস্থিতির প্রবণতা আগের তুলনায় বাড়ল, না কমলো– তা তুলনা করা যাচ্ছে না।

জরিপে নিত্যপণ্য হিসেবে প্রধান খাদ্য চাল, আটা ও মসুর ডালের মজুত জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২ শতাংশ পরিবারে জীবিকা নির্বাহের জন্য চালের কোনো মজুত নেই। অর্থাৎ আগামী বেলার খাবার অনিশ্চিত এসব পরিবারের। সিটি করপোরেশনের বাইরের চিত্র আরও খারাপ। গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চল মিলে ২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে চালের কোনো মজুত নেই। 

প্রায় ৬৯ শতাংশ খানাপ্রধান বলেছেন, কেনার মাধ্যমে তারা চালের মজুত করে থাকেন। বাকিরা নিজস্ব উৎপাদন এবং সরকারি সংস্থা থেকে চাল পেয়ে থাকেন। 

আটার ক্ষেত্রে মজুত আরও কম। ৬০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে আটার মজুত নেই। মজুত থাকে না গ্রামের ৬৮ শতাংশ পরিবারের। যেসব পরিবারে পণ্যটির মজুত থাকে, তাদেরও চলে সাড়ে ৯ দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান খাদ্য হিসেবে চালের ওপর নির্ভরতার কারণে আটার মজুত এত কম হয়ে থাকতে পারে। একইভাবে মসুর ডালের মজুত নেই ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে। 

জরিপ প্রতিবেদনে তথ্য সংগ্রহের প্রশ্নমালা এবং উত্তর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারপ্রধানের কাছে জরিপকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কর্মীদের প্রশ্ন ছিল, গত ১২ মাসে এমন হয়েছিল কিনা, যখন আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য টাকা বা অন্য কোনো সম্পদের অভাবে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাবার থাকবে না– এমন দুশ্চিন্তা হয়েছিল। খাবার কেনার মতো টাকার অভাবে পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যকে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে কিনা, ক্ষুধা লাগার পরও খাবার কেনার টাকার অভাবে মাসে বা দুই মাসে অন্তত একবেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে কিনা? এসব প্রশ্নের জবাবের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। 

জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত বছরের ১৫ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জাতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক নীতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যানভিত্তিক উপাত্ত প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। মাঠ পর্যায়ে মোট ২৯ হাজার ৭৬০ খানা বা পরিবার থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button