পর্বতারোহণ ও অক্সিজেনের অভাবের সাথে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সম্পর্ক
উচ্চতায় হাঁটা বা পর্বতারোহণ পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে। এই গবেষণা প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ন্যাচার রিভিউস ইউরোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন অক্সিজেনের মাত্রা ‘টেস্টিস হাইপোক্সিয়া’ নামে পরিচিত, পুরুষদের শুক্রাণুর গুণগত মান ও প্রজনন স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট), ভেরিকোসিল (শ্রোণি অঞ্চলের শিরা ফোলাভাব) ইত্যাদি কারণে টেস্টিসে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়ার প্রজনন জীববিজ্ঞানী ড. টেসা লর্ড বলেন, ভেরিকোসিল একটি সাধারণ সমস্যা যা বন্ধ্যাত্বে ভুগতে থাকা পুরুষদের প্রায় ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, উচ্চতায় হাঁটা বা পর্বতারোহণের মতো কার্যকলাপ টেস্টিস হাইপোক্সিয়ার কারণ হতে পারে। যদিও এর প্রভাব সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয়, কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠে ফিরে আসার পরও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি একটি সাধারণ সমস্যা, যেখানে ঘুমের সময় গলার পেশিগুলো শ্বাসনালী সংকুচিত করে, ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই অবস্থার ঝুঁকি স্থূলতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. লর্ড আরও বলেন, টেস্টিস হাইপোক্সিয়া শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান হ্রাসের পাশাপাশি হরমোন উৎপাদন ও জিনের কার্যক্রমেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি এই সমস্যাগুলি ভবিষ্যতে সন্তানদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়া, গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী টেস্টিস হাইপোক্সিয়ার প্রভাব ও এর কারণে সন্তানদের ভ্রূণ বিকাশ এবং প্রজনন সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. লর্ড বলেন, পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা গত ৫০ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এর কারণ খুঁজতে হলে টেস্টিস হাইপোক্সিয়ার ভূমিকা বুঝতে হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, এই বিষয়ে আরও গভীর গবেষণা দরকার।
গবেষণাটি প্রমাণ করে, অক্সিজেনের অভাবজনিত সমস্যা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের একটি বড় কারণ হতে পারে। এটি পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।