Trending

পর্যটন বিকাশে নেই মহাপরিকল্পনা

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। সমুদ্রের মাতাল করা গর্জন আর ঢেউয়ে কার মন না দোলে। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এটি হতে পারেনি বিদেশি পর্যটকদের তীর্থস্থান। সুযোগ ছিল ব্রাজিলের প্রায়া ডো ক্যাসিনোর মতো অতি আকর্ষণীয় হওয়ার।

কিংবা অস্ট্রেলিয়ার নাইনটি মাইল বিচের আদলে সেভেনটিফাইভ মাইল বিচ। ৭৫ মাইল বা ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটার সৈকতের সৌন্দর্যে যারপরনাই উৎসবমুখর দেশি পর্যটকরা। অথচ পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালিতে সৃষ্ট নৈসর্গিক দৃশ্যপট ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে সমগ্র পৃথিবীর পর্যটকদের তীর্থস্থান হতে পারে কক্সবাজার। বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় ঘুরে যেতে পারে সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা।

শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, পর্যটকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে পর্যটকদের অল্পস্বল্প মিতালি গড়ে উঠলেও বাকি তিনটি যেন একেবারেই অচেনা। সমুদ্র থেকে খুবই কাছে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ম্যানগ্রোভ বন। আছে ঐতিহাসিক স্থাপনা আর বহুবৈচিত্র্যের জাতিগোষ্ঠীর বসতি।

সব মিলিয়ে প্রকৃতি যে অপার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুড়িয়ে দিয়েছে কক্সবাজারকে, তা পৃথিবীতে বিরল। তবে মহাপরিকল্পনার অভাবে সৌন্দর্যের সিকিভাগও প্রস্ফুটিত হয়নি, যেন অন্ধকারের অতলেই পড়ে আছে প্রকৃতির রূপরস।

অতি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদে পরিপূর্ণ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতায় পর্যটনে পিছিয়ে পড়েছে পুরো জেলা। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত কোনো মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো অপরিকল্পিত সৈকত ব্যবস্থাপনা, নতুন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অনীহা, বিদেশি পর্যটকদের অনাগ্রহ, পরিকল্পিত বিনোদনব্যবস্থা না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে এই পর্যটননগরী।

পর্যটন খাতের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার হলেও পর্যটন ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটারে। বাকি প্রায় ১১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে সৌন্দর্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, তা পর্যটকদের অগোচরেই পড়ে আছে। কেননা এই বিশাল সৈকত নিয়ে সরকারের কোনো মহাপরিকল্পনা প্রণীত হয়নি। সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ থাকলেও বিনোদনের জন্য বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেই। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবং বিনিয়োগ সংকটে বিশ্বমানের দূরে থাক, মোটামুটি মানের কোনো শপিং মল স্থাপিত হয়নি। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার আদলে গড়ে ওঠেনি বড় কোনো ইকো রিসোর্ট, নেই গভীর সমুদ্রে ভ্রমণের প্রমোদতরি।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি পর্যটনকেন্দ্রকে বিদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে যেসব আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, তার কিছুই নেই কক্সবাজারে। বিশেষ করে বিচকেন্দ্রিক পর্যটনব্যবস্থার অংশ হিসেবে সিনেপ্লেক্স, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্ক, নাইটক্লাব, ক্যাসিনো সমুদ্রসৈকত, ক্রুজ, প্রমোদতরি, বিশেষায়িত শপিং মল, এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন, ক্রেডিট কার্ড ও মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাপক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র জানায়, সদ্যঃপ্রয়াত পর্যটনবিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের কাছে পর্যটন উন্নয়নে ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছিল কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি। এর মধ্যে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক বাড়াতে সোনাদিয়া দ্বীপের একাংশ সূর্যস্নানের জন্য ডে বিচ ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এমনকি কক্সবাজার সৈকতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে অবিশ্বাস্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, কক্সবাজারে বিনিয়োগে ভয় পান দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এখানে বিনিয়োগ করতে চাইলে ছাড়পত্র নিতে হয় অন্তত ১৬ থেকে ১৮টি সরকারি দপ্তর থেকে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি তাঁদের নিবন্ধনসহ সামগ্রিক সেবাদানে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালুর পরামর্শ দেন তাঁরা।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এক আইনের মাধ্যমে কউক প্রতিষ্ঠা করা হয়। লক্ষ্য ছিল, সমুদ্রসৈকতসহ ৬৯০.৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটননগরী গড়ে তোলা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘ আট বছরেও সৈকতের দায়িত্ব বুঝে পায়নি সংস্থাটি। পাশাপাশি পর্যটন খাতের উন্নয়নে এখনো মহাপরিকল্পনা দিতে পারেনি।

কউক সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্পে ১৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশন। এ প্রকল্পের অধীনে সমুদ্রসৈকতের ৬৯০.৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এবং জেলার আটটি উপজেলায় ২৪৯১.৮৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার কাঠামোগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টকে (সিএসসি) প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুন মাসে এই সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার কথা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপনগর পরিকল্পনাবিদ মো. তানভীর হাসান রেজাউল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী জুলাইয়ের মধ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণীত হবে। এরপর সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও দপ্তর যদি এই পরিকল্পনা যথাযথভাবে পরিপালন করে সে ক্ষেত্রে পর্যটন ভালো রূপ পাবে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজারে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ পর্যটক আসে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা, বিচ এলাকার পরিচ্ছন্নতা ও নাগরিক সুবিধা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমাদের বিচকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিতভাবে বিচ পরিষ্কার রাখছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি বিচকর্মীরাও পর্যটকদের বিভিন্ন তথ্য ও নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করছে।’

আবাসনব্যবস্থা ও বিচভ্রমণই পর্যটকদের পরিপূর্ণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী বিচ পয়েন্ট ছাড়াও কক্সবাজারের আরো অনেক ঐতিহাসিক ও ভ্রমণ উপযোগী প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ‘পর্যটন অ্যাপ’ তৈরির কাজ চলছে। অতিদ্রুত এই অ্যাপ উদ্বোধন করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে পর্যটক কক্সবাজারে আসার আগেই একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারবে।

সৈকত ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেতাই অবস্থা

কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ সমুদ্রসৈকত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটারজুড়ে কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী সৈকত। এই সৈকতগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, যার সভাপতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।

গত ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর সমুদ্রসৈকতের আদ্যোপান্ত ঘুরে দেখেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক।

সুগন্ধা বিচের বেশির ভাগজুড়ে রয়েছে ছাপরা স্থাপনা। এখানে খাবার হোটেল থেকে শুরু করে রয়েছে হরেক রকমের দোকান। সি বিচের বালু মাড়িয়ে সামনে যেতেই দেখা মিলল বিভিন্ন আচার, পেয়ারা, আনারকলি, ঝালমুড়ি, চটপটির দোকান। সমুদ্রের গর্জন কানে বাজছে, অথচ দেখা মিলছে না ভাসমান দোকানপাটের কারণে। আরেকটু এগোলে ছাতার ফাঁক দিয়ে দেখা মেলে সমুদ্রের নীল জলরাশি। জল যেখানে পা ছুঁয়ে দেয় সেখানেই সারি সারি কাঠের কিটকট চেয়ার ও ছাতা। নোনা পানিতে পা ছুঁয়ে বিপরীতে শহরের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কতটা ভাসমান, অগোছালো ও অপরিকল্পিত এই নগরী।

প্রতিবেদক একটি কিটকট চেয়ারে বসতেই একে একে ছুটে আসতে শুরু করল অচেনা কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ কিংবা দুরন্ত শিশু-কিশোর। কারো গলায় ঝুলছে চা-কফির ফ্লাস্ক, কারো কাছে বাদাম, চিপস, আচারসহ হরেক পদের পণ্য। আবার কেউ এসে মাথা ম্যাসাজ করার আবদার তোলে। ছবি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব তো সেই বালু মাড়িয়ে ভেতরে পা রাখতেই শুরু হয়। এত সব আবদারের অবতারণায় সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের মর্মই হারিয়ে যায়।

সুগন্ধা বিচে কথা হয় ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা হাসান কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলেই বারবার কক্সবাজারে ছুটে আসি। বিচগুলোতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। টং দোকানের আড়ালে বিচের সৌন্দর্যই হারিয়ে গেছে। পুরো এলাকা হকারদের নিয়ন্ত্রণে। একজনের পর একজন আসছেই। পাশাপাশি অগণিত বেওয়ারিশ কুকুরও রয়েছে। আমার মেয়েটা কুকুর দেখলে ভয় পায়।’

চাঁদপুর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রিয়াদ বলেন, ‘পৃথিবীর দীর্ঘতম বিচ থাকলেও আমরা যথাযথভাবে তা ব্যবস্থাপনা করতে পারছি না। এমনকি সঠিক কোনো পরিকল্পনাও চোখে পড়ছে না। পর্যটক সমাগম বাড়াতে আমাদের বিচগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা উচিত। কিছু বিচ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কিছু বিচ বিদেশিদের জন্য সংরক্ষিত করা উচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষত রেখে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মতো ইকো ট্যুরিজম করা হলে বিদেশি পর্যটক বাড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে নির্দেশনা দেওয়া উচিত। কারণ কলাতলী ও লাবনী বিচেই কক্সবাজার সীমাবদ্ধ নয়, এ বিষয়টি পর্যটকদের জানান দেওয়া উচিত।’

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যত্রতত্র সড়কের পাশেই দেখা গেছে ময়লার স্তূপ। সুগন্ধা বিচের দিকে যাওয়ার সময় সি ওয়ার্ল্ড হোটেলের সামনে নজরে আসে ময়লার স্তূপ। পর্যটকরা নাকে হাত দিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। দুপুর ১টায়ও সেই বর্জ্য অপসারণ করেননি পৌরসভার কর্মচারীরা। এদিকে সমুদ্রসৈকতের পাশে থাকা ঝাউবনেও জমেছে ময়লার বিশাল স্তূপ। টানা তিন দিন কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে আবর্জনার এই স্তূপ নজরে আসে।

সি ওয়ার্ল্ড হোটেলের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় পর্যটক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পর্যটন শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। অন্যান্য শহরের মতো পর্যটন শহরেও যদি আবর্জনার স্তূপ চোখের সামনে পড়ে তা কারো জন্যই ভালো বার্তা দেয় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবশ্যই সকাল হওয়ার আগেই শহরের বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা উচিত। পাশাপাশি বর্জ্যের জন্য নির্ধারিত স্থান তৈরি করা উচিত।’

সূত্র জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা ফেলা হয় শহরের নিকটবর্তী কস্তুরীঘাট এলাকায় খোলা আকাশের নিচে। কস্তুরীঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর ওপর গড়ে উঠেছে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, যা ওই এলাকায় পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ব্রিজের এক পাশে ময়লার স্তূপ, অন্য পাশে বেসরকারি মালিকানাধীন খেজুরবাগান, ফিশারিজ প্রজেক্ট, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, চৌফলদণ্ডী ব্রিজ এলাকায় কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে। ময়লার স্তূপের কারণে দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকের দেখা মেলে না। কস্তুরীঘাট এলাকার দৃষ্টিনন্দন বদর মোকাম জামে মসজিদ এলাকায় যেতে পারে না পর্যটকরা।

কস্তুরীঘাট এলাকার এন্ডারসন রোডে তাছনিম হোটেলের সামনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুরো কক্সবাজারের বর্জ্য কস্তুরীঘাটের ময়লার ডিপোতে ফেলা হয়। এ কারণে এই এলাকায় সব সময় দুর্গন্ধ থাকে। স্থানীয় লোকজনের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মতো দ্রুত বর্জ্য ব্যবস্থপনা করা উচিত। নতুবা পর্যটন শহর একদিন ময়লার স্তূপে পরিণত হবে।’

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে

কক্সবাজারে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হোটেল ও মোটেল থাকলেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন কোনো প্রজেক্ট চালু করতে চাইলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে ১৬টি ছাড়পত্র নিতে হয়। এ জন্য শেষ পর্যন্ত প্রজেক্ট চালু করা হয় না।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ জরুরি। কিন্তু কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এখানে বিনিয়োগ করতে তাঁদের একমাত্র ভয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বিশেষ করে একটি নতুন প্রজেক্ট পাস করতে যদি ১৬টি দপ্তরে ঘুরতে হয়, কেউ এতে উৎসাহী হবে না। বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা উচিত। এর আগে কউকের পক্ষ থেকে মহাপরিকল্পনা প্রকাশ করা উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভূমিহীন ও রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড় দখল করে নিচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও জিরো রেভিনিউয়ে লিজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে যদি এগুলো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লিজ দেওয়া হতো, তাহলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারত।’

হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পর্যটনশিল্পের বিকাশে কউকের আওতায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা জরুরি। শুধু হোটেল ও সি-বিচ দিয়ে পর্যটন খাতে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় সম্ভব নয়। পাশাপাশি বিনোদনের জন্য অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।’

কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা করেই পর্যটন খাতের বিকাশ জরুরি। জিডিপিতে পর্যটন খাতের অংশীদারি বাড়াতে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা লাগবে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পর্যটকদেরও বাড়তি সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশে আনতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor